দুজন পুরুষ নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে। বৃষ্টির ছাঁট পড়া ঝাপসা কাচের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে একঘেয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য। তৃতীয়জন এক বুড়ো, চোখে-মুখে স্পষ্ট কৌতূহলের ছাপ, সানন্দ চোখে থেকে থেকেই তাকাচ্ছে এদিক-ওদিক।
ঘেমে ওঠা জানালার কাচের দিক থেকে বিরক্তিতে উপচে পড়া মুখ ফেরালো একজন।
—আমি বউয়ের কাছ থেকে চলে এসেছি, কেন জানি বললো সে।
—আর আমার বউ নিজেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, দ্বিতীয়জন বললো দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
—আর আমি সবেমাত্র বিয়ে করেছি, বুড়ো বললো।
নীরবতায় কাটল কিছুক্ষণ।
—কিছুদিন আগে আমার ২০০ রুবল হারিয়েছে, বললো প্রথমজন।
—আর আমার ৩০০, দ্বিতীয়জন বললো সখেদে।
—আর আমি এই তো ক’দিন হলো একটা মোটরসাইকেল জিতেছি লটারিতে, বুড়ো জানালো।
হিংসাপরায়ণ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে কাশল প্রথমজন, বললো,
—আমার ব্রঙ্কাইটিস।
—আর আমার গ্যাস্ট্রিক,—দ্বিতীয়জন জানালো।—একবারে স্থায়ী ও পাকাপোক্ত।
—আর আমি জীবনে কখনো অসুখেই ভুগিনি, বুড়ো বললো।
কারুরই ঘুম আসছিল না।
—আমার ছেলেটা খুব খারাপ ছাত্র, প্রথমজন বললো।
—আর আমারটা তো একই ক্লাসে আটকে আছে কয়েক বছর ধরে।
—আর আমার সব নাতি-নাতনি তাদের ক্লাসের সেরা ছাত্র, বুড়ো জানালো।
প্রথমজন উঠে দাঁড়িয়ে রুষ্টস্বরে বললো:
—মাত্র গতকাল নতুন জুতো কিনেছি, অথচ আজ সোল খুলে পড়েছে।
—জানেন, আমিও গতকাল নতুন জুতো কিনেছি,—ভারি অবাক হল দ্বিতীয়জন।—তবে দোকান থেকে ফেরার পথে আমি তা ভুল করে ট্রামে রেখে নেমে পড়েছি।
নিজের বহু ব্যবহূত স্যান্ডেল জোড়ার দিকে আত্মতৃপ্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুড়ো বললো:
—আর আমি এই স্যান্ডেল জোড়া পরছি ১৫ বছর ধরে। ঠিক আছে, বন্ধুরা, হয়তো পরে আবার কখনো দেখা হবে। আমার স্টেশন তিন্দারেভো এসে পড়েছে।
—সব্বোনাশ! তিন্দারেভো?—প্রথমজন মাথা চাপড়ে বিলাপ করলো।—তার মানে, আমি এক স্টেশন বেশি চলে এসেছি!
—আর আমি দুই স্টেশন, জানালো দ্বিতীয়জন।
ইলিয়া বুতমান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২২, ২০১০
Leave a Reply