যাত্রীদের রাগ করার কোনো অধিকার নেই
প্রত্যেক সিএনজিচালকেরই আছে না যাওয়ার অধিকার
না, যাত্রীদের অভিযোগের কোনো শেষ নেই। তাঁদের অভিযোগ, সিএনজিচালক ভাড়া বেশি নেন, কোথাও যেতে চান না। কিন্তু কেন যেতে চাইবেন? এই দেশ সিএনজিচালকদের কী দিয়েছে? দেশে সিএনজিচালকদের কোনো অধিকারই নেই। বেচারারা সারা দিন কত কষ্ট করে সিএনজি চালান। অথচ তাঁদের মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই। প্লেনের চালককে কত সম্মান দিয়ে পাইলট বলা হয়। মেয়ের বাবা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাহ, ছেলে পাইলট।’ অথচ সিএনজিচালককে কেউ পাত্তাই দেন না। পাইলট বলা তো বহু দূরের কথা, ড্রাইভার বলে যে ন্যূনতম একটা ব্যাপার আছে, তাও ভুলে যান। মুখে অবজ্ঞার একটা ভাব এনে বলেন, ‘ও, ছেলে সিএনজিচালক, বুঝছি।’ অথচ দুজনের কাজ কিন্তু একই, চালানো। পার্থক্য হলো একজন প্লেন চালান, আরেকজন চালান সিএনজি অটোরিকশা। তাই বলে এত ভেদাভেদ? মানুষের ভাব দেখে মনে হয়, সিএনজি চালানো কোনো ঘটনাই না! কী ভয়ানক অপমান! এত অপমানের পরেও যাত্রীর কথায় তাঁরা কেন যেতে চাইবেন? এখানেই শেষ নয়। যাত্রীরা বলেন, ‘এই সিএনজি, নাখালপাড়া যাবে?’ এই কথায়ও সিএনজিচালককে অপমান করা হয়। স্বয়ং চালক পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছেন, অথচ যাত্রীরা তাঁকে কিছু না বলে তাঁরই সিএনজির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন? নাহ, ভদ্রতা জিনিসটা আমাদের মধ্যে নেই। কেন রে ভাই? ‘ড্রাইভার সাহেব, আমি নাখালপাড়া যাব, আপনার এই ছোট্ট গাড়িতে আমাকে নেবেন?’ সুন্দর করে এই কথাটা বললে কী এমন ক্ষতি হয়? আরও ঘটনা আছে। যাত্রী নাখালপাড়ায় যাবেন। ওখানে তাঁর খালার বাসা। কিন্তু সিএনজিচালকের তো খালার বাসা নেই। তিনি কোন দুঃখে এই জ্যামের মধ্যে নাখালপাড়া যাবেন? নাখালপাড়া তো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাও না যে গেলে ভালো লাগবে। এসব কারণেই চালক ভাইয়েরা পায়ের ওপর পা তুলে মুখে বেশ ভাব নিয়ে বলেন, ‘যামু না’। যাঁদের মায়াদয়া একটু বেশি, তাঁরা কষ্ট করে যেতে রাজি হন। তবে তাঁদের ১০-২০ টাকা বেশি দিতে হয়। তা তো দিতেই হবে। এটা তাঁদের প্রাপ্য, তাঁদের অধিকার। কিন্তু তাই বলে তাঁদের ওপর রাগ করার অধিকার কোনো যাত্রীর নেই। তাঁর নিজের সিএনজি অটোরিকশা, যেতে ইচ্ছা হলে যাবেন, নইলে যাবেন না। তাতে কার কী? অতএব, হয় সরকার সিএনজিচালকদের যথাযোগ্য সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা করুক, নতুবা যাত্রীদের এই ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ নিষিদ্ধ করুক। তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না। শাস্ত্রে আছে—একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৩, ২০১০
Leave a Reply