বৃশ্চিক
এত দিনে একখানা কথার মতো কথা শুনলাম। ইন্টেগ্রিটি রাখিতে হইবে। রাখিতেই হইবে, তাহার জন্য মাছি হইতে হাতি যাহা মারিতে হয় মারিব। কিন্তু ইন্টেগ্রিটি নষ্ট হইতে দেওয়া যাইবে না। ‘কাবো’র উড়োজাহাজকে গত সরকারের ইন্টেগ্রিটির ‘উদাহরণ’ হিসেবে উড়িতে হইবে। ইহার সঙ্গে দুর্জনেরা কিসব কমিশন-বাণিজ্য টমিশন-বাণিজ্য বলে! তাহাও ইন্টেগ্রিটির মধ্যেই তো পড়ে। আমাদের পত্রিকাগুলো একবার সরকারগুলোকে পুরাতন সরকারের ‘ইন্টেগ্রিটি’ না মানিবার জন্য দোষারোপ করে আবার ইন্টেগ্রিটি রাখিলেও গালমন্দ করে। যাইব কোথায়?
জিএম কাদের একখানা অপদার্থ। বড়ো ভ্রাতার টাকা-খাইবার পারিবারিক ইন্টেগ্রিটি না মানিয়া সাধু সাজিবার চেষ্টা করিতেছে। সে কি জানে না, কত টাকা-পয়সা খরচ করিয়া একজন এমপি হয়। তাহার পর সেই খরচ উঠাইবার সুযোগ না দিলে তো দেশের রাজনৈতিক ইন্টেগ্রিটি নষ্ট হইয়া যাইবে।
আমাদের দেশের পুরাতন গাড়ি, বাস, ট্রাক চালাইবার ‘ইন্টেগ্রিটি’ হইতে বিমান আলাদা হয় কী করিয়া? কতবার ঢাকায় পুরান গাড়ি সরাইবার চেষ্টা করিয়া সরকার ফেল মারিল। পুরাতন বাস ট্রাক কখনো নতুন রঙে সাজিয়া, কখনো ঘাপটি মারিয়া আবারও মানুষ লইতে থাকে। …উড়োজাহাজখানাও তো তা-ই। পুরান বলিয়াই কি উহাকে ফেলিয়া দিতে হইবে? চালাইলেই উহা চলিবে, যেমন বাংলাদেশ চলিতেছে। বাসমালিকের আন্দোলনে সরকারি বিআরটিসির বাসের রুট বন্ধ হইয়া যাইতেছে। বিমানও তাহার নিজের বিমান বসাইয়া রাখিয়া কাবো উড়োজাহাজ চালাইয়াছে। ইহাই তো আমাদের সরকারি সম্পদ ব্যবহারের ইন্টেগ্রিটি। আচ্ছা পুরাতন বিমান ব্যবহারে কী ক্ষতি? লাভই তো সব। দেশের বহু গুণী মানুষ কমিশন বড়লোক হইতেছে, ইহাতে তো খুশি হওয়া উচিত। তা না করিয়া সব হিংসায় জ্বলিতেছে। কী হইতে পারে পুরাতন বিমানের? বড় জোর ভাঙিয়া পড়িতে পারে? তাহাতে সমস্যা কী? লঞ্চ ডুবিয়া তো কত মানুষ মারা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার শেষ হইয়া যায়। তাহাতে কী ক্ষতি হয়? কিছুই না। বরং জনসংখ্যা কমে। বিমান ভাঙিলেও তো তাই। কিছু জনসংখ্যা কমিবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তের পরিবার কিছু ক্ষতিপূরণ পাইলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হইবে।
বিমান বহু পুরান প্রতিষ্ঠান। জন্মাবধি উহা কখনো লাভ করিতে পারে নাই। কর্তাদের জন্য পুরাতন বিমান ক্রয়, লাভজনক রুটে চলাচল ইত্যকার বহুবিধ কারণে ইহা অন্যান্য সরকারি উদ্যোগের মতোই লোকসানি প্রতিষ্ঠান। ইহা আমাদের সরকারি ‘ইন্টেগ্রিটি’। জিএম কাদের ও পত্রিকাগুলি উহা যত তাড়াতাড়ি বুঝিবে ততই মঙ্গল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৩, ২০১০
Leave a Reply