প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দিন আগে প্রশ্নের সুরে বলেছেন, আগে শুনতাম দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে, সেই গ্যাস গেল কোথায়? আসলেই তো। গ্যাস কোথায় গেল। গ্যাসের এই চলে যাওয়ায় সিএনজি স্টেশনগুলোও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করছেন আইনুন নাহিন, আঁকা রকিবুল হাসান
রিপোর্ট-১
৪ আগস্ট স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই হয়তো ছাত্রছাত্রীদের তালে তালে গ্যাসও তার মামার বাড়ি বেড়াতে চলে গেছে। এমন হলে কিন্তু ঈদের পর ছাড়া আমাদের আবার গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তা ছাড়া গ্যাসের মামার বাড়ি কোথায়, সেটাও যেহেতু আমরা জানি না, তাই মামার বাড়ি খোঁজার জন্যও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা লাগতে পারে।
রিপোর্ট-২
বর্তমানে ইফতারিতে প্রচুর ভোজ্যতেল ভোজন করা হচ্ছে, এতে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তাই হয়তো তেলের সঙ্গে দেশের যাবতীয় গ্যাস মানুষের পেটে জমে যাচ্ছে। এমন হয়ে থাকলে সবাইকে জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেতে হবে প্রতিদিন। তা না হলে আমাদের জাতীয় সম্পদ গ্যাসকে ফিরে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আসুন, আমরা পেটে যাওয়া গ্যাস ফিরিয়ে আনি।
রিপোর্ট-৩
কখনো চুলায়, কখনো সিএনজি স্টেশনে থাকতে থাকতে গ্যাসের জীবনটা হাঁপিয়ে উঠেছে, তাই গ্যাস ভ্রমণ করতে সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। কুখ্যাত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, কিন্তু গ্যাসের ওপর যেহেতু কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, সেহেতু গ্যাসরা যেতেই পারে। তবে তারা কোন দেশে অবস্থান করছে, সেটা নিশ্চিত হলেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
রিপোর্ট-৪
লোভ-লালসা সবারই থাকতে পারে। তাই গ্যাস হয়তো বড়লোকের কোনো সুন্দরী ললনাকে বিয়ে করে সেখানে ঘরজামাই হয়ে থাকছে। আমরা ছোট থেকে লালন-পালন করলেও গ্যাস এখন আমাদের ভুলে গেছে, সে এখন বড়লোকের ঘরজামাই। অতএব, গ্যাস এখন বড়লোকদের জন্য, মধ্যবিত্ত কিংবা সাধারণ মানুষের জন্য নয়। গ্যাসের এ অদ্ভুত সিদ্ধান্ত আমাদের দুঃখই দেবে, কিন্তু গ্যাস ফিরে আসবে কি না সন্দেহ আছে।
রিপোর্ট-৫
দেশে অহরহ অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তাই গ্যাসকে হয়তো কেউ অপহরণ করেছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য হয়তো কেউ গ্যাসকে অপহরণ করেছে। তা না হলে হঠাৎ গ্যাস লাপাত্তা হবে কেন? সবচেয়ে বড় কথা হলো, গ্যাসকে যদি গুম করে ফেলা হয়, তবে আমাদের কপালে কিন্তু শনির দশা আছে। তাই গ্যাস কোথায় আছে পুলিশকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।
রিপোর্ট-৬
আসলে আমরা ওঝা মারফত জানতে পারলাম, গ্যাসকে ভূতে ধরেছে। ভূত হঠাৎ গ্যাসকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। সিএনজি স্টেশনে যে ছয় ঘণ্টা গ্যাস থাকে না, ওই ছয় ঘণ্টা কিন্তু গ্যাস ভূতের বাড়িতেই থাকে। ওই ভূত তাড়াতে ওঝার কত দিন সময় লাগবে, জানতে চাইলে ওঝা নির্দিষ্ট সময় জানাতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি ঝাড়ফুঁক দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৩, ২০১০
Leave a Reply