সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি আর কী কী নিষিদ্ধ করলে আমরা উপকৃত হতাম? চলুন দেখা যাক। লিখেছেন আলিয়া রিফাত
প্রাইভেট পড়া
উফ! এরই নাম গোদের ওপর বিষফোঁড়া। অনেক শিক্ষকই ক্লাসে হাতটি নেড়ে চকটি না তুললেও প্রাইভেট পড়িয়ে হয়ে ওঠেন দেশসেরা সুপারস্টার। পোলাপান ক্লাস শেষে কোথায় বাড়ি গিয়ে একটু ঘুমোবে, তা না, সবাই ছুটছে প্রাইভেট পড়তে। স্কুলে ক্লাসটিচারের কাছে, কলেজে প্র্যাকটিক্যাল স্যারের কাছে, কখনো কখনো ভার্সিটিতে উঠেও ক্লাস ধরতে না পেরে সিনিয়র ভাইয়া বা আপুদের কাছে প্রাইভেট পড়ো। এখন অবস্থা এমন যে নিজেরা শিক্ষক হওয়ার পরও প্রাইভেট পড়লে আমাদের ভালো হয়। তাই শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে সঙ্গে ‘প্রাইভেট’ নামক এই ভাইরাসটিকেও ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যেত।
সংবর্ধনা
এটি গত এক দশকের অন্যতম ট্রেন্ড। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে আসছেন ডিগ্রি নিয়ে। ইচ্চিপিচ্চি স্কুলছাত্ররা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে গেল পতাকা হাতে। বোকা পিচ্চিটা ভাবে, প্রধানমন্ত্রী আসবেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেন, বাবু, দাঁড়িয়ে থেকে থেকে তোমার খিদে পায়নি? এই নাও চিকেন বার্গার। খেতে খেতে বাড়ি চলে যাও। কিন্তু একি! উনি যে পুটুস করে কোন সময় গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন কেউ তো ভালোমতো দেখতেই পেল না! শুধু কি প্রধানমন্ত্রী? মন্ত্রী, সাংসদ যার পদধূলিই এলাকায় পড়ুক না কেন, ক্লাস ফেলে সব স্কুলের সবাই নামল পথে। ফলাফল: কেউ মাথা ঘুরে চিৎপটাং, কারও ক্রনিক হাঁটুতে ব্যথা, কারও ডিহাইড্রেশন। মাননীয় হর্তাকর্তাগণ, দয়া করে আমাদের স্কুলের এলাকায় আপনাদের আর আসার দরকার নেই। আমরা আমাদের হালহকিকত আপনাদের ই-মেইল করব। কেউ কোনো পুরস্কার পেলেও ই-কার্ড পাঠিয়ে অভিনন্দন জানাব। প্রমিজ!
গাইড বই
বিজ্ঞান বইতে আমরা পড়েছি, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাকে অভিযোজন বলে। গাইড বই নামক প্রজাতির অভিযোজনক্ষমতা অসাধারণ! তাই তো সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাজারে বেরিয়েছে ‘সৃজনশীল পদ্ধতির গাইড’। অনেক শিক্ষকই প্রশ্ন বানিয়ে নিজেদের সৃজনশীলতার অপচয় না করে বেছে নিচ্ছেন এসব গাইড। কে নিজের গাইডটি সবার আগে স্যারকে এগিয়ে দেবে এ নিয়ে চলে ছাত্রছাত্রীদের চুলোচুলি। তাই সরকার নিজ উদ্যোগে দেশের সব গাইড বই উইপোকাদের খাইয়ে দিতে পারত।
বইয়ের বোঝা
শিক্ষাই নাকি জাতির মেরুদণ্ড। অথচ ডায়াপার ছাড়তে না-ছাড়তেই চার-পাঁচ কিলো বইয়ের বোঝা বইতে বইতে আমাদের পিঠ কুঁজো হওয়ার দশা। তাই বেটার হতো আমাদের স্কুলের বইগুলো যদি আমরা স্কুলেই সব সময় রেখে দিতে পারতাম। আমাদের পিঠের স্বাস্থ্যও ভালো থাকত, প্লাস আমরা আরামসে বাড়িতে বসে ফেসবুকিং, ব্রাউজিং, চ্যাটিং ইত্যাদি করতে পারতাম।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৬, ২০১০
Leave a Reply