বংশপরিচয় নিয়ে সবাই গর্বিত। সবাই নামের শেষে বংশের টাইটেল লাগাতে পছন্দ করেন। এই রকম অনেক বংশের সঙ্গেই আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। কেউ হক, কেউ মীর, কেউ সৈয়দ, কেউ চৌধুরী ইত্যাদি। কিন্তু সবার চোখের সামনে দিয়ে একটা বংশের লোকেরা কিন্তু তরতর করে বেড়েই চলেছেন এই দেশে। এঁরা হলেন বাজবংশীয় লোক। এই বাজবংশের কিছু সদস্যের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তাওহিদ মিলটন.
দুর্নীতিবাজ
মনে করা হয়, পুরো বাজবংশের মধ্যে ওনারাই সবচেয়ে শক্তিশালী। এঁরা বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই একরকম শপথ করেছেন জীবনে কখনো নীতির ধারও ধারবেন না। এঁরা বেশ অবস্থাপন্ন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে উপস্থিতি বেশ সরব।
ফাঁকিবাজ
বাজবংশের কুলাঙ্গার এঁরা। সারা জীবন সবকিছুতেই এঁরা ফাঁকি দিয়ে চলেন। সংখ্যায় অনেক। পাওয়া যায় সমগ্র দেশজুড়ে। এঁরা ঘরের বাবা-মা স্ত্রী-পুত্র সবাইকে ফাঁকি দিতে ভালোবাসেন। এঁরা নিজেদের খুব বুদ্ধিমান দাবি করেন। পাওয়া যায় দেশের সর্বত্রই।
ধান্ধাবাজ
এঁদের বলা হয় বাজবংশের সবচেয়ে বুদ্ধিসম্পন্ন সদস্য। কিন্তু এঁরা নিজেদের এই বুদ্ধি দুর্নীতিবাজ, দখলবাজদের মতো কাজে লাগাতে পারেননি। এঁদের মাথায় সব সময় নিত্যনতুন ধান্ধার বুদ্ধি দৌড়াদৌড়ি করে। এঁরা এক জায়গায় বেশিদিন থাকেন না। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, এঁরা মাঝে মাঝে দুর্নীতিবাজ, দখলবাজ, চাঁদাবাজদের সঙ্গেও ধান্ধা করে ফেলেন।
টেন্ডারবাজ
ধারণা করা হয়, বাজবংশের সবচেয়ে আধুনিক সদস্য এঁরা। এঁরা খুব মারমুখী হয়ে থাকেন। কাজ করেন কম কিন্তু ইনকাম করেন অনেক বেশি। এঁরা একটু পানাসক্ত হন। এঁরা সাধারণত প্রচুর টাকা-পয়সার মালিক হন। দেশের ক্ষমতাসীন দলের পরোক্ষ একটা দোয়া এঁরা সব সময় পেয়ে থাকেন।
ঠগবাজ
বাজবংশের সদস্যসংখ্যায় সবচেয়ে কম বোধ হয় এঁরা। এঁদের কাজই হচ্ছে মানুষ ঠকানো। এঁরা মানুষ ঠকিয়ে ব্যাপক মজা পান। তবে এঁরা খুব একটা দলবদ্ধভাবে থাকেন না। একটু বোহেমিয়ান জীবন পছন্দ করেন। এঁরা মেট্রোসিটিতে একটু বেশি ঘোরাঘুরি করেন। কোনোমতে এঁদের দিন চলে যায়।
রংবাজ
এঁরা বাজবংশের কলঙ্ক বলা চলে। বাজবংশের গৌরব মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন এঁরা। হেন কোনো ছেঁচড়ামি নেই এঁরা করেন না, এঁরা রিকশাওয়ালার সঙ্গেও রংবাজি করেন। এ ছাড়া ইভ টিজিং এঁদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এসব রংবাজি করেই এঁরা মূলত জীবিকা নির্বাহ করেন। এঁদের বর্তমানে মফস্বলের অন্ধকার গলিতে বেশি দেখা যায়। এঁরা অবশ্য ভাড়ায়ও খাটেন ইদানীং।
চাঁদাবাজ
বাজবংশের সবচেয়ে সুখী সদস্য বলা চলে এঁদের। এঁরা কাজকর্ম করতে একদমই পছন্দ করেন না। এঁরা অন্যের বাড়া ভাতে ছাই না দিয়ে প্লেটটাই নিজের কাছে নিয়ে নেন। সরকারি দল সব সময় এঁদের শেল্টার দিয়ে থাকে। এঁরা মনে করেন, অন্যের পকেটের সত্যিকারের মালিক তাঁরাই। এটা তাঁদের বংশগত অধিকার।
ধড়িবাজ
এঁদের কাজ সম্পর্কে আসলে কেউ নিশ্চিত নয়। কারণ এঁদের ঠিক ধরা যায় না। এঁরা কী করেন, কোথায় থাকেন—সবকিছুই রহস্য। তবে ধারণা করা হয়, এঁদের কেউ কেউ দুর্নীতিবাজদের গুটিও চালেন কিন্তু সমাজে সবার সঙ্গে এমনভাবে মেশেন যে কেউ কিছু আঁচ করতে পারে না। এও ধারণা করা হয়, টেলিভিশন চ্যানেল এঁদের বেশ প্রিয় একটি বিচরণের জায়গা।
চাপাবাজ
বাজবংশের এই সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন সারা দেশে। এঁদের চাপা ব্যাপক শক্ত হওয়ার কারণে এঁরা সাধারণত অসম্ভব বিষয় নিয়েই কথা বলেন। এঁরা কাজে নয়, চাপায় বিশ্বাসী। রাজনৈতিক দলগুলোতে রয়েছে এঁদের অগাধ বিচরণ। ধারণা করা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষণ এঁরাই লিখে থাকেন।
ধোঁকাবাজ
বাজবংশের এই সদস্যরা বিশ্বাসই করেন, জীবনে উন্নতির একমাত্র সিঁড়িই হচ্ছে অন্যকে ধোঁকা দেওয়া। একই মানুষকে এঁরা বারবার ধোঁকা দেওয়ার নিপুণ কৌশল জানেন। তবে এঁরা মাঝে মাঝে ভুল করে নিজের আত্মীয়দেরও ধোঁকা দিয়ে ফেলেন। এঁদের মূল পেশা দালালি ঘরানার। তবে রাজনীতিতেও এঁরা কম যান না।
আইডিয়াবাজ
বাজপরিবারের সবচেয়ে অবহেলিত সদস্য এঁরা। কারণ, এঁরা অন্যদের মতো মূল স্রোতের সঙ্গে গা না ভাসিয়ে একটু উল্টো স্রোতে গা ভাসান। অনেকেই বলেন, এঁরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান, তবে বাজবংশের অন্য সদস্যরা মনে করেন এঁরাই সবচেয়ে বোকা। তবে এঁরা বাজবংশের অন্য সদস্যদের কর্মকাণ্ডের কারণে নিজেদের বাজবংশীয় পরিচয় দিতে একটু লজ্জা বোধ করেন।
দখলবাজ
যদিও এই সদস্যদের আমরা দুর্নীতিবাজই বলতে পারতাম কিন্তু এদের কর্মকাণ্ডের কারণে এঁরা একটু ভিন্ন। এদের জীবনের লক্ষ্য একটাই—দখল। সরকারি-বেসরকারি জায়গা-জমি থেকে শুরু করে এঁরা সবই দখল করতে পছন্দ করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর এঁদের প্রভাবটা একটু ভিন্ন। এঁরা সব সময় ক্ষমতাসীন দলকে ডোনেশন দিয়ে দখলপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার অসাধারণ গুণসম্পন্ন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৭, ২০১০
Leave a Reply