ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করে এখন আলোচনার শীর্ষে। শীর্ষে থাকতে থাকতেই চলুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিই। অহেতুক কৌতূহলবশেই এই লেখার অবতারণা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাচাই করা বা পরিচিতি তুলে ধরা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কথায় আছে, নামে কী-বা আসে যায়! কথাটি যে সত্য তা আমরা সবাই জানি। তাই যে যেখানেই পড়ুক না কেন, সকলের সাফল্য কামনা করি। দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে এই জিজ্ঞাসামূলক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আহমেদ শামসুল আরেফীন
প্রথমে চলুন, একটু লক্ষ করি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কীভাবে করা হয়? সাধারণত যে স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস থাকে, সেখানকার নাম অনুসারে হতে পারে। যেমন অক্সফোর্ড শহরের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (UBC)। রাজ্যের নামানুসারে ও দেশের নামানুসারেও নামকরণ হতে পারে।
কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির নামে হতে পারে। যেমন স্যার জন মনাশের নামানুসারে অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এবার বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণগুলো দেখি—
World University of Bangladesh: বাংলাদেশের বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়। (এর মানে কী?)
City University: শহর বিশ্ববিদ্যালয়? (কোন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়? এ রকম নামের বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য আছে London Metropolitan University অথবা City University of New York)
Stamford University, Bangladesh: আমেরিকার কানেকটিকাট নামের রাজ্যের শহর স্টামফোর্ড। সেই শহরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে! এ ছাড়া Nebraska, New York, Texas, Vermont-এ এই নামের জায়গা আছে। এমনকি যুক্তরাজ্যেও লিংকনশায়ার ও লন্ডনে এই নামে স্থান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্টামফোর্ড বলে কোনো শহর, গ্রাম বা কিছু নেই। উল্লেখ্য, আর্ল অব স্টামফোর্ড একটি অতি পুরোনো ইংরেজ উপাধি ও স্যার স্টামফোর্ড সিঙ্গাপুর শহরের গোড়াপত্তন করেন। যদি এ কারণে তাঁদের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমনটি রাখা হয়, তাহলে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে কি মহান কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায়নি?
State University of Bangladesh: বাংলাদেশের রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়। (কোন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়? বাংলাদেশ রাজ্যময় হলো কবে থেকে? এ রকম নামের বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য আছে State University of California, কিন্তু সেটি তো যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্য আছে বলেই। তা ছাড়া সাধারণত স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকার পরিচালিতই হয়ে থাকে।)
Victoria University of Bangladesh: এই ভিক্টোরিয়া একজনই হতে পারেন এবং তিনি হলেন ইংল্যান্ডের রানি। ব্রিটিশ শাসন তো কবেই শেষ। আমরা কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো ইংল্যান্ডের কাছে দায়বদ্ধ নই (Victoria University, Canada ও Australia খুব নামকরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়)। তাহলে তাঁর নামে বাংলাদেশে কেন বিশ্ববিদ্যালয়?
Northern University Bangladesh: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় বিশ্ববিদ্যালয়। (আসলে কি তাই? এর মূল ক্যাম্পাস কারওরান বাজারের কাজী নজরুল ইসলাম রোডে এবং আগে ছিল মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল অর্থাৎ রাজশাহীতে নয়। তবে রাজশাহীতে এদের একটি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। মনে হয় না সেই মহান ক্যাম্পাসটির কারণে এর নাম রাখা হয়েছে।)
Eastern University: পূবালী বিশ্ববিদ্যালয়। অবস্থান ধানমন্ডিতে। বাংলাদেশের পূর্বে নয়। তবে বাংলাদেশ বিশ্বের পূর্বে—এই চিন্তা করলে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
Green University of Bangladesh: বাংলাদেশের সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়। ফার্মগেটের ওভারব্রিজের পাশে বাসস্টপেজের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (পুরোনো) বাংলাদেশের সবুজের যদি কোনো চিহ্ন পাওয়া যেত, তাহলে এই নামটি আসলেই সুন্দর হতে পারত। তবে কাফরুলে প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসের দেয়ালের রং অবশ্য সবুজ!
North South University: উত্তর-দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে উত্তর-দক্ষিণ মেরুর ছবি আছে। অবস্থান বসুন্ধরা আবাসিকে, মেরুতে নয়। তবে জ্ঞানের উত্তর-দক্ষিণ বোঝালে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
East West University: পূর্ব-পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামেও কোনো একটি মেরুর ছবি আছে। অবস্থান আপাতত মহাখালীতে। বিশ্ববিদ্যালেয়ের বক্তব্য অনুসারে, এখানে ইস্টার্ন কালচারে ওয়েস্টার্ন শিক্ষা দেওয়া হয়—তাই এই নাম। তবে কৌতূহলী জনতা সন্দেহ করতেই পারেন যে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখে নামটি রাখা হয়েছিল কি না?
Southeast University: দক্ষিণ-পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু মূল ক্যাম্পাস বাংলাদেশের দক্ষিণেও নয়, পূর্বেও নয়। তবে মনে হয় নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্টের পর আর দিক কম্বিনেশন এটিই হতে পারে!
American International University Bangladesh: আমেরিকীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। এর মালিকানা আমেরিকান সরকারের না কি?
Daffodil International University: ড্যাফোডিল শীতপ্রধান দেশের ফুল। বাংলাদেশে এটি ফোটে না। বাংলাদেশের বাংলা ফুলের (যেমন-শাপলা, পদ্ম, রজনীগন্ধা, গোলাপ) নামে রাখলে চলতো না বলেই বোধহয় এই নাম।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০২, ২০১০
Leave a Reply