আমাদের হরিণ আমরা খাব, যেভাবে খুশি সেভাবে খাব
একটি গৃহ একটি হরিণ প্রকল্প চালু করতে হবে
এবার গৃহপালিত প্রাণীর মতো হরিণও ঘরে-খামারে পালন এবং জবাই করে মাংস খাওয়া যাবে। অসাধারণ এক সিদ্ধান্ত। বাহ সরকার বাহ!
আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাজারে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের কাছে জিম্মি ছিলাম। ফলে দোকানদারেরাও এই সুযোগে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকত। এখন হরিণকে গৃহপালিত করার অনুমতি দেওয়ায় গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের ওপর চাপ একটু হলেও কমবে। দেশের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী প্রাণিজ প্রোটিনের ঘাটতি থেকে মুক্তি পাবে। অন্যদিকে হরিণের চামড়ার চাহিদা বিশ্বজুড়ে, যার প্রমাণস্বরূপ চোরাকারবারিদের হরিণ শিকার করে চামড়া বিক্রির খবর প্রায়ই পত্রিকায় পেতাম। খবর পেতাম, সুন্দরবন-সংলগ্ন গ্রামে বসেছে হরিণের মাংসের হাট। এই হাট এবার দেশের আনাচে-কানাচে বসবে। এ ছাড়া এতে নতুন করে দেশের বেকার যুবকদের বিশাল একটা অংশ কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে। হরিণের মাংস ও চামড়া রপ্তানি করে দেশে আসবে অনেক বিদেশি মুদ্রা। সেই সঙ্গে আমাদের অ্যাডভেঞ্চারহীন জীবনেও আসতে পারে নতুন কিছু রোমাঞ্চকর ঘটনা। বনের বাঘের প্রিয় খাদ্য হরিণের মাংস। হরিণ যখন মানুষের বাড়ির গোয়ালে ও খামারে অনেক পাওয়া যাবে, তখন বনের বাঘকে আর কষ্ট করে হরিণ শিকার করতে হবে না। তারা চুপি চুপি লোকালয়ে এসে টুপটাপ দু-একটা হরিণ খেয়ে চলে যাবে। এতে হরিণের পেছনে ছুটে ছুটে বাঘের যে পরিমাণ ক্যালরি ক্ষয় হতো, সেটা আর হবে না। বাঘগুলোও শুয়ে-বসে আড্ডা মেরে আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। একপর্যায়ে সুন্দরবন যখন হরিণশূন্য হয়ে যাবে, তখন বাঘগুলো না খেয়ে মরবে। তাতে আমাদের কী! আমাদের বাঁচামরা আগে। প্রয়োজনে তখন আমরা আবার বাঘ আর হরিণ বাঁচানোর প্রকল্পে টাকা ঢালব। এখন যত হরিণ আছে সেগুলো তো খেয়ে সাফ করি, নাকি!
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই দেশের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোয় তেহারি, কাচ্চি ও চিকেন বিরিয়ানি খেতে খেতে আমাদেরও অন্যসব খাবারের ওপর বিরক্তি ধরে গেছে। নতুন খাদ্য হরিণের মাংসের বিরিয়ানি আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা হলেও নতুনত্ব আনবে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় আনবে নতুন সম্ভাবনা। সব চেয়ে বড় কথা, বাড়ির আঙিনায় রংবেরঙের হরিণ ছোটাছুটি করছে, বিষয়টা দেখতেও নান্দনিক হবে। এত দিন যেটা কেবল আমাদের দেশের শিল্পপতি-নেতা-সাংসদদের বাসা আর বাগানবাড়ির আঙিনায় দেখা যেত, সেই হরিণ এখন দেখা যাবে সবার বাড়ির আঙিনায়। ফলে দৃষ্টিকটু শ্রেণীবৈষম্য কিছুটা হলেও লাঘব হবে। এ ছাড়া বাড়ির আঙিনায় কালো ছাগল দেখতে দেখতে আমাদের মনও কালো হয়ে গেছে। এবার রঙিন হরিণ নিশ্চয় আমাদের জীবনেও নতুন রং যোগ করবে। আমরা আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে সবাই হয়ে উঠব সুস্থ ও সবল দেহের অধিকারী। ধন্য সরকারি সিদ্ধান্ত!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০২, ২০১০
Leave a Reply