এখন পর্যন্ত আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ যায়নি। শীতকাল হওয়ায় রাত ১০টা নাগাদ সবাই লেপের তলায় ঢুকে পড়ে। আমাদের বাড়ি ফাঁকা জায়গায় হওয়ায় এর আগে তিনবার ডাকাতি হয়েছিল। সে জন্য আমরা রাতের বেলা আতঙ্কিত থাকতাম। আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, তাই অনেক রাত পর্যন্ত আমি পড়াশোনা করছিলাম। হঠাৎ শুনি, বাইরে খসখস-ফটফট আওয়াজ। আমি দৌড়ে ভাইয়ের ঘরে গেলাম। সেখানে দেখি বাবা, মা ও বোনটাও এসেছে। শব্দটা একবার এগিয়ে আসছে, আবার সরে যাচ্ছে। ভাই সাহস করে জানালা খুলতে গেলে আব্বা নিষেধ করলেন। কিছুক্ষণ পর বাইরের বারান্দায় ইটের ঠকঠক শব্দ হতে লাগল। সব মিলিয়ে রোমহর্ষক পরিবেশ। একটু পর আর কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। আমার বড় ভাই জানালা খুলে দেখেন, বারান্দায় ইটের তলায় কিছু চাপা দেওয়া আছে। ভাই দরজা খুলে বেরিয়ে কাগজটা নিয়ে আসলেন। তাতে লেখা, ‘কাপড় তৈরি, কাল আসব।’ আমরা ভাবলাম, ডাকাতেরা এখানে হুমকি দিয়েছে। কাপড় বলতে কাফনের কাপড় বুঝিয়েছে। কাল নিশ্চয় ডাকাতি করতে আসবে। প্রচণ্ড আতঙ্কে কাটল আমাদের রাতটা।
পরদিন সকালে বাইরের ঘরে জোর অট্টহাসি শুনে আমরা ছুটে গেলাম সেখানে। সেখানে দেখি, আমার ভাইয়ের সঙ্গে বসে আছে মিজান। ছেলেটা বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। ভাই ওকে খুব ভালোবাসতেন। লিখে লিখে ভাইয়ের সঙ্গে ওর কথা হতো। একটা দর্জির দোকানে তাকে কাজ শিখতে দিয়েছিলেন। ওর কাছে আমার একটা জামার অর্ডার দেওয়া ছিল। জামাটা তৈরি, সেটা বলতে এসে দেখে জানালা-দরজা বন্ধ। আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি ভেবে কাগজে লিখে ওই খবরটা আমাদের জানিয়েছে।
মরিয়ম খন্দকার
খসরুবাগ, ইমার্জেন্সি রোড, চুয়াডাঙ্গা।
Leave a Reply