উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শুরুর দিকে মুঠোফোনে কিছু অপরিচিত নম্বর থেকে ডিস্টার্ব শুরু হলো। সারা দিন সারা রাত চলত এই অত্যাচার। বান্ধবীরা বলল সিমকার্ড পরিবর্তন করতে। তখন তো আর কল ব্লকের সুযোগ ছিল না। আর আমার কোনো ভাই নেই যে বকে দেবে। আব্বু-আম্মুকে বলিনি। শুনলে অযথাই ভয় পেতেন। জানি, আমার মতো অনেক মেয়েই এমন ঘটনার শিকার। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছিল। ঠিক করলাম, কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলব। একদিন হঠাৎই আইডিয়াটা মাথায় এল। করলাম কী, নিজেই এক অপরিচিত নম্বরে বারবার মিসডকল দিলাম। এতে সেই নম্বর থেকে কল এল। একজন মাঝবয়সী লোক গ্রাম্য ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন এত মিসড কল দিচ্ছি কেন। আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকলাম। উনি রেগে গেলেন। আমাকে মিসড কল দিতে নিষেধ করে লাইন কেটে দিলেন। আমি আবারও মিসড কল দিতে লাগলাম। এতে কাজ হলো। লোকটা ভীষণ রেগে গিয়ে কল করে আমাকে যা-তা বলে গালি দিতে লাগলেন। কী ভয়ানক সেই গালি! কয়েকবার করে আমার বংশ উদ্ধার হয়ে গেল। আর আমিও সঙ্গে সঙ্গে মুঠোফোনের রেকর্ডার অন করে গালি রেকর্ড করতে লাগলাম। প্রায় তিন মিনিট রেকর্ড করে লাইন কেটে দিয়ে সেভ করলাম। রাতে যখন বদমাশটার কল এল, তখন কল রিসিভ করে রেকর্ড ফাইল থেকে গালিটা ফুল ভলিউমে ছেড়ে দিলাম। আমার সেটটি নকিয়ার হওয়ায় বদমাশটাও তা শুনতে পায়। আর ফুল ভলিউমে গালি এত বিকট শোনা যাচ্ছিল যে বদমাশটা ভয় পেয়ে লাইন কেটে দেয়। সে ভেবেছিল, এত রাতে নিশ্চয় আমার আব্বু ওকে গালি দিচ্ছে। খুব মজা পেয়েছিলাম সেদিন। এরপর যে-ই ফোনে ডিস্টার্ব করত, তাকেই গালিটা শোনাতাম আর মনে মনে হাসতাম। দারুণ কাজ দিত। বদমাশটাও আর বিরক্ত করেনি। আর হ্যাঁ, পরে অবশ্য ওই ভদ্রলোককে একটা টেক্সট করেছিলাম, ‘আপনার ভয়াবহ গালির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।’
নাজিফা আনজুম
স্কুলরোড, মহাখালী, ঢাকা।
Leave a Reply