ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে অলস সময় কাটাচ্ছি। সে সময় বন্ধুত্ব গড়ে উঠল মেজো চাচার কাজের ছেলে নির্মলের সঙ্গে। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজের ছেলের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। নির্মল একদিন আমাকে বলল, ‘কিরে, তুই তাস খেলতে পারিস?’ উত্তর দিলাম, ‘না, পারি না’। নির্মল বলে উঠল, ‘এত বড় হয়েছিস, তাস খেলতে পারিস না?’ আমিও চিন্তা করে দেখলাম, ‘হ্যাঁ, তাই তো!’ শুরু হলো ছোট্ট টংঘরে বসে আমার তাস খেলার হাতেখড়ি। প্রথম দিনে তাসের পরিচিতি, খেলার প্রকারভেদ ও নিয়মকানুন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। এর পর থেকে শুরু হলো টংঘরে বসে নিয়মিত কলব্রিজ খেলার আসর। যত দিন যাচ্ছে, তত ভালো বুঝতে পারছি। আরও গর্ব হচ্ছে, বাবার কড়া প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এমন এক পুরুষদীপ্ত খেলাকে রপ্ত করতে পেরে।
একদিন আমাদের বাড়িতে মেহমান এলে আমার ঘুমানোর জায়গা হলো বাবার সঙ্গে। অনেক বছর পর বাবা আর আমি এক বিছানায় শুয়ে আছি। বাবা ঘুমানোর আগে শুনে নিলেন, পড়াশোনা ঠিকমতো করছি কি না, কবে স্কুল খুলবে ইত্যাদি। অস্তে আস্তে আমি ঘুমে তলিয়ে গেলাম। এবার স্বপ্নদেবী ভর করল, ‘আমি স্বপ্নে দেখছি টংঘরে বসে কলব্রিজ খেলছি। চারজনের ভেতর টানটান উত্তেজনা। খেলার একপর্যায়ে সর্বশেষ চাল আমার, দেখি খেলার তাসটা হাতে নেই। হাতে রং তাস আছে, ট্রাম্প করতে হবে। ডান হাত দিয়ে রং তাসটাকে শূন্যে তুলে ধরে ঘুমের ঘোরে বাবার পিঠের ওপর মারলাম আর মুখে বলে উঠলাম, ট্রাম্প। কেবল যে তাস খেলতে পারে, সেই জানে ট্রাম্প করার সময় ডান হাতের শক্তি কতটা বেড়ে যায়। আসলে ব্যাপারটা ছিল, আমি যখন স্বপ্নে ট্রাম্প করি, তখন বাস্তবে সজোরে হাতটা গিয়ে পড়ে বাবার পিঠের ওপর।
হঠাৎ টের পেলাম কে যেন আমার ডান কানটা ধরে টেনে তুলছে আর বলছে, কী বললি? ট্রাম্প! ট্রাম্প শিখেছিস? পড়াশোনা বাদ দিয়ে ট্রাম্প শিখেছিস? চোরা কোথাকার, দেখাচ্ছি মজা—এই বলে বাবা আমার মুখের বাঁ দিকে সশব্দে এক চড় কষে দিলেন। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। শুধু ভাবছি, আমি কি স্বপ্ন দেখছি, নাকি বাস্তবে মার খাচ্ছি।
সকালে দিদি বলল, ‘কিরে, গত রাতে তুই নাকি বাবার পিঠে ট্রাম্প করেছিস?’ কে যেন পেছন থেকে বলে উঠল, ‘বাবাও ওর মুখে ওভার ট্রাম্প করেছেন।’
শোভন কিশোর দাস
শহীদ শামসুল হক হল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
Leave a Reply