একদিন আমাদের ব্যবস্থাপনার স্যার রমজান আলী ক্লাসে খুব ঝাঁঝালো মুডে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন। এমনিতে তিনি ভীষণ রসিক টাইপের। ক্লাসে এসে পিকনিক, অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি— এসব ব্যাপার নিয়েই আলোচনা করেন। হঠাৎ আজ স্যারকে একেবারেই অন্য রকম লাগছে। অ্যাটেনডেন্স খাতা খুলেই রোল ডেকে যাচ্ছেন আর সবাইকে দাঁড় করিয়ে রাখছেন। দোষ শুধু একটাই, ওরা নাকি ক্লাসে ৯৫ ভাগ দিনই অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু আমরা তো সবাই বেশ আগ্রহের সঙ্গেই স্যারের ক্লাস করি এবং প্রায়ই সবাই ক্লাসে উপস্থিত থাকি। নতুন কলেজ জীবন তো! তাই এই একাদশ শ্রেণীতে সবাই নিয়মিতই ক্লাস করে। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসমুখোই হয় না (সরকারি কলেজ বলে কথা), কিন্তু যখন আমার রোল এল, ওই একই অবস্থা। স্যার দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন, আর বকাবকি শুরু করলেন। কিন্তু ব্যাপার তো পুরোটাই ঘোলাটে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সাহস করে স্যারকে বলেই ফেললাম, স্যার, আমি তো প্রায় সব দিনই ক্লাসে ছিলাম…। স্যার রাগান্বিত স্বরেই জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় বাসা? নাম কী? আমি উত্তর দেওয়ার পর স্যার কিছুক্ষণ নীরব থেকে খাতাটা উল্টেপাল্টে আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা করো। আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে আসছি। ততক্ষণে ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে স্যার ভুল করে ডিপার্টমেন্ট থেকে তাড়াহুড়ো করে আসার সময় দ্বাদশ শ্রেণীর খাতা নিয়ে এসেছিলেন। স্যার তখনই বুঝেছিলেন, যখন আমি আমার নাম বলেছিলাম, আর খাতায় ছিল একটা ছেলের নাম।
নাহার
রংপুর সরকারি কলেজ
রংপুর।
Leave a Reply