শিশির ভাই দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে বন্দীজীবন কাটিয়ে আজ ছাড়া পাবেন। আমরা মালাটালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমার ওপর দায়িত্ব ছিল হাততালি দেওয়ার জন্য হাফ ডজন পিচ্চি ধরে আনার। আমি ব্যাকআপসহ যে আটজনকে বলে এসেছি, তার মধ্যে মাত্র দুজন এসে নিবিষ্ট মনে মার্বেল খেলছে। শিশির ভাই বের হয়ে এলেন। আসন্ন মুক্তির আনন্দ তাঁর চোখেমুখে।
শিশির ভাই যখন গেট দিয়ে বের হয়েই তাঁর দুর্বল দেহ নিয়ে দৌড়ে আমাদের কাছে আসার চেষ্টা করে আছাড় খেলেন, আমরা বিশেষ অবাক হলাম না। দৌড়ে গিয়ে তাঁকে টেনে তুলে মালা পরিয়ে দিলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি, পিচ্চি দুটো হাততালি না দিয়ে মারপিট লাগিয়েছে। আমরা সবাই বল্টুর বাসায় রওনা দিলাম।
বল্টুদের বাসার বাইরের দিকে একটা ঘরে আমরা বসি। সেখানে পৌঁছেই শিশির ভাই হাত-পা ছড়িয়ে চেয়ারে বসে পড়লেন। শুভ খুবই নিরীহ স্বরে শিশির ভাইকে জিজ্ঞেস করল, তিনি এত দুর্বল হলেন কীভাবে! প্রশ্ন শুনে শিশির ভাই তড়াক করে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়া শুরু করলেন। ‘বন্ধুগণ! তোমরা মনে করছ, আমি আজ দুর্বল। কিন্তু, তা নয়, আমি আগের মতোই শক্তিশালী আছি। বলো তোমরা, কে এক মাস সংগ্রামের পর হাসপাতাল থেকে মুক্তি অর্জন করে নিয়েছে?’ আমরা তারস্বরে বললাম, ‘আপনি!’
‘হ্যাঁ, আমি! আমি!’ শিশির ভাই গরিলা স্টাইলে বুকে জোরে জোরে থাবা দিতে লাগলেন। এই সময় হঠাৎ ‘কট’ করে শব্দ হলো। শিশির ভাই একটু টলে ধুপ করে মেঝেতে পড়ে গেলেন। আমরা চেঁচামেচি শুরু করলাম, কিছুক্ষণ পর নিচ থেকে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ ভেসে এল। বুকের হাড় ভেঙে শিশির ভাইকে সেবার আরও তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল।
আজওয়াদ আনজুম
নবম শ্রেণী, ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট।
Leave a Reply