সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি, বড় আপা বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। পরীক্ষাও শেষ, উৎসবের একটি মওকা মিলল। তো বাড়ির একমাত্র ছেলে হিসেবে এই সংবাদ প্রচারণার দায়িত্ব আমার কাঁধেই পড়ল। তবে আমি কাজের দোহাই দিয়ে শুধু আন্টির বাসায় এই তথ্য পৌঁছানোর দায়িত্ব নিতে চাইলাম। কারণ, ওখানে আছে আইরিন। শেষ পর্যন্ত টেন্ডারটা পেয়েও গেলাম। আমাকে আর পায় কে। নিজেকে ভালো করে পলিশ করে আমার বৈদ্যুতিক ঘোড়া (মোটরসাইকেল) নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। একটি বাড়ির গেট মাড়াতেই আমার আইরিনের দেখা পাই। ভাবলাম, আজকে তাকে ইমপ্রেস করেই ছাড়ব। কিন্তু আমাকে দেখে না দেখার ভান করে আন্টিকে গিয়ে সে বলল, ‘মা, মইন্না এসেছে, আবার নিশ্চয় কোনো আবুল মার্কা দরকারে এসেছে।’ আমি আলোর বেগে তার কাছে গিয়ে বললাম, ‘আমাকে দেখলেই তোর মুখে তেতো কথার গুদাম উন্মুক্ত হয়ে যায়? যা, আর আসব না।’ অনতিবিলম্বে উত্তর, ‘তোর রেকর্ড করা কথা আর শোনাস না, নতুন কিছু রেকর্ড করলে ছাড়।’ সংবাদ শোনার পর আন্টি বলল, ‘তা, কী বাচ্চা হয়েছে।’ প্রশ্নটা শুনেই ভড়কে গেলাম। আরে, তাই তো! এটা তো জানি না। বুঝলাম, এখন যদি উত্তর না দিতে পারি, তাহলে আমার মানসম্মান সোজা মাচায় উঠবে। তাও আবার আইরিনের সামনে। বড় আপার শ্বশুরবাড়ির বংশে একটা মেয়ের বড়ই অভাব, সকালে দেখেছিলাম, শ্বশুরবাড়ির লোকজন মনের খায়েস মিটিয়ে মিষ্টি খাচ্ছিল আর মুখে প্রেমকাব্য রচনা করছিল আর দাঁত কেলিয়ে হাসছিল। এটার ওপর অনুমান করে বলে দিলাম, মেয়ে হয়েছে। এই সংবাদটা কয়েক জায়গায় দিয়ে বাড়িতে এলাম। তো আমার আমন্ত্রিত অতিথিরা মেয়ের জন্য উপহার নিয়ে এসেছে, আমার টুনটুনিও এসেছে। উৎসব হচ্ছে। হঠাৎ, কী একটা জিনিস নিয়ে সবার মধ্যে একটা তর্ক লেগে গেছে। গিয়ে দেখলাম, পৃথিবীর নতুন অতিথি ছেলে না মেয়ে, তা নিয়ে যুদ্ধ লেগে আছে। এর মধ্যে আইরিনও এসে গেছে। বিতর্কের অবসান ঘটাতে আইরিন আগন্তুককে নিয়ে সবার সামনে দেখাল। সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা। আমি তো মনে মনে চাইছিলাম, ছেলে হলেও যেন সৃষ্টিকর্তা তাকে মেয়ে বানিয়ে দেয়। হাজার হলেও আমার মান-ইজ্জতের প্রশ্ন। নাহ্! ছেলেই হয়েছে। ‘আমি জানতাম, তুই মইন্না কোনো দিন গাধা থেকে মানুষ হবি না। তোর…।’ সুযোগ পেয়ে আইরিন এভাবেই ঝাড়ল।
মনিরুল ইসলাম
বিএসসি, দ্বিতীয় বর্ষ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নোয়াখালী।
Leave a Reply