ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন। একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার সামনের বেঞ্চে বসেছিল এক ফরাসি দম্পতি। তাঁদের সঙ্গে ছিল ছোট্ট একটি মেয়ে। নাম লিসা। তাঁদের বাসা প্যারিসে। লিসার ভাষায়, আইফেল টাওয়ারের কাছেই। ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা গল্পের বই পড়ছিল লিসা। আধো আধো ইংরেজি বলতে পারে সে। ভীষণ চটপটে ও জিজ্ঞাসু মেয়েটি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার সঙ্গে লিসার বেশ সখ্য গড়ে উঠল। ট্রেন চলছে দ্রুতগতিতে। জানালা দিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে নানা দৃশ্য দেখছে লিসা আর ছোট ছোট বাক্যে হরেক রকম প্রশ্ন করছে আমাকে। আমি মোটামুটি ওর বোধগম্য ভাষায় উত্তর দিচ্ছি। কখনো কখনো বুঝতে না পারলে ওর আম্মুর সাহায্য নিচ্ছে লিসা। একবার পড়লাম এক মধুর ঝামেলায়। ট্রেন থেকে বেশ খানিকটা দূরে ইটের ভাটা দেখতে পেল লিসা। ইটের ভাটার নিচের দিকটা মোটা কিন্তু ওপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া উঁচু চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সেটা দেখে খুব অবাক হলো লিসা। আমাকে প্রশ্ন করল, ‘হোয়াট ইজ দ্যাট?’ আমি তখন ওর জন্য উপযুক্ত কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বললাম, ‘দ্যাট ইজ আওয়ার আইফেল টাওয়ার।’ হেসে উঠল লিসা ও তার বাবা-মা। এর পর থেকে যখনই কোনো ইটের ভাটা দেখি, তখনই লিসার ওই ঘটনাটা মনে পড়ে।
আবদুল মালেক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
Leave a Reply