বিশ্বকাপ খেলা দেখেছেন অথচ জ্যোতিষসম্রাট পলকে চেনেন না, এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। সেই জার্মান অক্টোপাস-জ্যোতিষী এবার সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য এসেছে রস+আলো কার্যালয়ে। সাক্ষাৎকার নিচ্ছে আমাদের অতিপরিচিত জ্যোতিষী টিয়া পাখি। সঙ্গে ছিলেন মেহেদী আল মাহমুদ
টিয়া: আমাদের রস+আলো কার্যালয়ে স্বাগত। সেকি! আপনার পেট এতটা ফুলে আছে কেন?
অক্টোপাস: আর বলবেন না ভাইসাহেব, এখানে আসার পথে যে আমাকে দেখেছে, সে-ই আমার কাছ থেকে ভবিষ্যদ্বাণী নিয়েছে।
টিয়া: ভবিষ্যদ্বাণী দিলে পেট ফুলবে কেন, বুঝতে পারলাম না।
অক্টোপাস: আসলে হয়েছে কি, আমার ভবিষ্যদ্বাণী করার তরিকাটা একটু অন্য রকম। আমি খেয়ে খেয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করি। সারা রাস্তায় যতবার ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছি, ততবারই আমাকে খেতে হয়েছে। সে জন্যই পেটটা এভাবে ফুলে গেছে।
টিয়া: বাহ্, চমৎকার! খেয়েই যখন এসেছেন তাহলে মনে হয় আপনাকে আর মেহমানদারি করাতে হবে না। আমাদের আপ্যায়ন বাবদ খরচটা সেভ হয়ে গেল। হে হে হে।
অক্টোপাস: আপনারা যে আমাকে আপ্যায়ন করাবেন না, সেটা আমি আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম। সে কারণে পকেটে করে চানাচুর নিয়ে এসেছি। দেখাব?
টিয়া: না, থাক থাক, দেখাতে হবে না। আচ্ছা, এই মুহূর্তে আপনি সারা পৃথিবীতে খুবই জনপ্রিয়। সবাই আপনার সাক্ষাৎকার নিতে চায়। অথচ তাদের কাউকে সাক্ষাৎকার না দিয়ে সবার আগে বাংলাদেশে চলে এলেন যে?
অক্টোপাস: আসলে হয়েছে কি, বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাওয়ার মতো রাস্তাঘাট কোথায়। এই যে দেখুন, জার্মানি থেকে সাগর সাঁতরে কক্সবাজার এলাম। তারপর নদীতে ঢুকে সাঁতরে সাঁতরে একসময় বুড়িগঙ্গায় পৌঁছে গেলাম। এমন সময় নামল বৃষ্টি। বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পর সেই পানি সাঁতরে আপনাদের কার্যালয়ে পৌঁছে গেলাম। এবার আপনিই বলুন, অন্য কোনো দেশে সাক্ষাৎকার দিতে কীভাবে যাব? ওদের দেশের রাস্তায় কি পানি জমে?
টিয়া: সেটা অবশ্য ঠিকই বলেছেন। আচ্ছা, এবার ফুটবল খেলা সম্পর্কে কিছু বলুন। আপনি ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন?
অক্টোপাস: আসলে হয়েছে কি, আপনারা যেগুলোকে শুঁড় বলেন, সেগুলো আসলে আমার হাত-পা। অর্থাৎ এই আটটার মধ্যে চারটা আমার হাত আর বাকি চারটা পা। সব সময় ব্যাপারটা খেয়াল থাকে কিন্তু মাঠে নামলেই যে কী হয় বুঝি না; কোনটা হাত আর কোনটা পা, সেটা ভুলে যাই।
টিয়া: তাতে সমস্যা কী? বলের সামনে যে পড়বে সেটা দিয়ে ঝেড়ে লাথি হাঁকাবেন।
অক্টোপাস: যেটা ইচ্ছা সেটা দিয়ে লাথি মারলে তো হবে না। শেষে দেখা যাবে পা ভেবে যেটা দিয়ে গোল করেছি, সেটা আসলে আমার হাত। শেষে হ্যান্ডবলের ঝামেলায় পড়ে যাব। গোলও বাতিল হয়ে যাবে।
টিয়া: এটা কোনো সমস্যা হলো? আজকাল পা দিয়ে গোল দেওয়ার চেয়ে হাত দিয়ে গোল দেওয়ার সুনাম অনেক বেশি।
অক্টোপাস: সে কারণে ফুটবল খেলতে আমার তেমন একটা ভালো লাগে না।
টিয়া: তাহলে আপনার প্রিয় খেলা কোনটি? মানে কোন খেলাটা আপনি সব সময় খেলেন?
অক্টোপাস: আমি ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি। এখানে হাত-পা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। হাত দিয়ে ক্যাচ ধরলেও চলে, পা দিয়ে ধরলেও সমস্যা নেই।
টিয়া: ক্রিকেটের প্রসঙ্গ যখন চলেই এল, তখন বাংলাদেশের ইংল্যান্ড সফর সম্পর্কে কিছু বলুন।
অক্টোপাস: আহা! আমি তো ভবিষ্যদ্বাণী বলি না, ভবিষ্যদ্বাণী করে দেখাই।
টিয়া: মানেটা তো বুঝলাম না।
অক্টোপাস: মানে, বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের পতাকা লাগানো পাত্রে খাবার রাখেন। যে দেশের পতাকা লাগানো পাত্র থেকে খাবার খাব, বুঝবেন সে দেশই কামিয়াব।
টিয়া: আচ্ছা আচ্ছা, তাহলে একটু অপেক্ষা করতে হবে। বোঝেনই তো, এসব তো হঠাৎ করে আয়োজন করা যায় না।
অক্টোপাস: সময় নিন, অসুবিধা কী। এবার আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, শুনেছি আপনিও নাকি একপ্রকার জ্যোতিষী?
টিয়া: ঠিকই শুনেছেন। আমরা টাকা দিলে খাম তুলে আমাদের সাগরেদের হাতে দিই। সে খাম খুলে তার মধ্যে যা লেখা থাকে, সেটা পড়ে শোনায়।
অক্টোপাস: আপনাদের সাগরেদটা আবার কে?
টিয়া: আমাদের সাগরেদ মনুষ্য প্রজাতি থেকে নিই। ওরা আবার লেখাপড়া জানে কিনা, তাই।
অক্টোপাস: বাহ্! বেশ তো। ইয়ে, মনে হচ্ছে আমার খাবার আর পতাকা লাগানো বক্স এসে গেছে। (খাবারের গন্ধ শুঁকে) কিন্তু একটা খাবারও আমার পছন্দ হয় নাই। একটাও খাব না আমি, পতাকাও তুলব না।
টিয়া: ইয়ে, মানে, তাহলে একটাই রিকোয়েস্ট, বাংলাদেশ কবে একটি সোনার দেশে পরিণত হবে এটা একটু বলে যাবেন?
অক্টোপাস: বাংলাদেশ কেন সোনার দেশ হবে? বাংলাদেশে কি সোনার খনি আছে নাকি?
টিয়া: নাই কিন্তু পাওয়াও তো যেতে পারে। কিন্তু এই সোনার দেশ বলতে লোডশেডিং মুক্ত, যানজট মুক্ত একটা দেশ…।
অক্টোপাস: থাক, থাক আর বলতে হবে না। স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে আপনাদের আরও সহ্যক্ষমতা বাড়াতে হবে।
টিয়া: আচ্ছা, আচ্ছা। আমাদের দেশের মিঠাই খুবই জনপ্রিয়। আপনার জন্য তাই মিঠাইয়ের এন্তেজামই করেছি।
অক্টোপাস: সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু ওই খাবারের গন্ধ নেওয়ার পর থেকে পেট কামড়াচ্ছে কেন? ইয়ে, টয়লেটটা কোন দিকে?
টিয়া: পেট কামড়াচ্ছে নাকি? স্যালাইন আনব? আমাদের দেশ স্যালাইনের জন্য বিখ্যাত।
অক্টোপাস: দরকার নেই। তার চেয়ে বরং আমি আমার সাগরে পালাই। সেখানকার নোনতা পানি স্যালাইনের কাজ করবে। ওরে বাবা রে, বাঁচাও!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১২, ২০১০
Leave a Reply