পিতৃত্বের দাবিতে
আপনারই সন্তান আপনার সামনে আপনাকে না ডেকে ‘বাবা’ ডাকছে কিনা আপনার বন্ধুকে! ভেবে দেখুন, কেমন লাগবে তখন? এ রকমই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রোনালদো। ২০০২ বিশ্বকাপ চলার সময় রোনালদোর প্রথম ছেলে রোনালদের বয়স তখন আড়াই বছরও হয়নি। আধো আধো বোলে বাবা ডাকতে শিখেছে। কিন্তু কে রোনালদো আর কে রবার্তো কার্লোস—দুই দুজনের মধ্যে পার্থক্য করার বিচারবুদ্ধি তখনো তার হয়নি। টিভিতে রোনালদোর সতীর্থ কার্লোসকে দেখামাত্রই ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে চিৎকার দিয়ে ছুটে যেত। টিভি পর্দায় দিত চুমু। কিন্তু তিনি আসলে যে তার বাবা নন, বাবার বন্ধু! বিব্রতকর এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে নতুন বুদ্ধি বের করেছিলেন রোনালদো। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর পাল্টে ফেলেছিলেন চুলের স্টাইল। পিতৃত্বের স্বীকৃতি পেতে চুলের ধরনধারণ পাল্টানোর প্রথম নজির বোধহয় এটাই!
ফাদিগা নেকলেস
২০০২ বিশ্বকাপ ছিল সেনেগালের জন্য রূপকথার। সেবারই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো বিশ্বকাপ খেলেছে আফ্রিকার দেশটি। প্রথম ম্যাচেই তারা হটিয়ে দিয়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠে গিয়েছিল তারা। স্মরণীয় আসর। তবে সতীর্থদের চেয়ে দলের মিডফিল্ডার খলিলু ফাদিগা বিশ্বকাপটিকে মনে রাখবেন ভিন্ন কারণে। তাঁর বিরুদ্ধে যে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জুয়েলারি দোকান এনেছিল নেকলেস চুরির অভিযোগ! মামলাও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জুয়েলারি দোকানের মালিকই মামলা তুলে নেন। শুধু তা-ই নয়, ‘চুরি যাওয়া’ নেকলেসটি ঠিকই কদিন পর শোভা পায় ওই দোকানে। কোত্থেকে কীভাবে উদ্ধার হলো, আদৌ হারিয়ে গিয়েছিল কি না—এসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আজও অজানা। তবে ওই নেকলেসটি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল ‘ফাদিগা’ নাম নিয়েই। যে নেকলেস নিয়ে এত কাণ্ড, সেটার দাম কত জানেন? মাত্র ২৪০ ডলার!
কৃতজ্ঞতার দান
চিকিৎসকদের এখন রোগীদের শাপশাপান্ত শুনেই জীবন পার করে দিতে হয়। তবে জানেন কি, ১৯৭০ বিশ্বকাপে জেতা মেডেলটি ব্রাজিলের সাবেক ফরোয়ার্ড টোস্টাও দিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসককেই। মার্কিন এই চিকিৎসকই যে ভালো করে দিয়েছিলেন তাঁর চোখের দৃষ্টি। অবশ্য চার বছর পর আবারও দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন, ২৭ বছর বয়সে তো নিয়ে নিতে হয় অকাল অবসর। খেলা ছাড়লেও জনপ্রিয়তায় কমতি ছিল না তাঁর। পরিস্থিতি এতটাই চরমে উঠেছিল, ‘জনপ্রিয়তা’ এবং ‘ফুটবল’ দুটো শব্দেই চলে এসেছিল টোস্টাওয়ের অরুচি। শেষমেশ ফুটবলের ছায়া থেকে বেরোতে নিজে পাসটাস করে হয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসক! কিন্তু কী যে অমোঘ আকর্ষণ ফুটবলের! কদিন পর আবারও ছুটে গেছেন সেই টানে। খেলতে পারেননি, কিন্তু খেলা নিয়ে লিখেছেন। কাজ করেছেন সাংবাদিক হিসেবে।
আত্মঘাতী আক্ষেপ
আত্মঘাতী গোল করে শেষমেশ বেঘোরে প্রাণ দিয়েছিলেন এস্কুবার। আত্মঘাতী গোল চিরকালই খেলোয়াড়দের জন্য এক আক্ষেপের নাম। আক্ষেপ আছে লোথার ম্যাথাউসেরও। তবে অন্যদের চেয়ে তাঁর আক্ষেপটা একটু আলাদা। জার্মানির এই সাবেক তারকা আক্ষেপ করেন আত্মঘাতী গোল না করার জন্য! ১৯৯৮ বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিপক্ষে একটু হলেই নিজের জালে গোলটা করে ফেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত হয়নি। হয়নি একটা রেকর্ডও। ১৯৮৬, ১৯৯০ আর ১৯৯৪—এই তিন আসরেই গোল করেছিলেন ম্যাথাউস। টানা চতুর্থ বিশ্বকাপে গোল পাননি। মেক্সিকোর বিপক্ষে গোলটা হলেও চলত। হোক না সেটা আত্মঘাতী!
ব্যস্ততা
মাঠে বদলি খেলোয়াড় নামানো নতুন কিছু নয়। তবে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ড্যানিশ মিডফিল্ডার সোরেন লারবি ৫৮ মিনিটে মাঠ থেকে যে কারণে উঠে আসেন, সেটি নতুন ছিল বৈকি। কারণ, লারবির ছিল প্লেন ধরার তাড়া! ১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বর ডেনমার্কের ম্যাচ ছিল আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। একই দিন লারবির ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখেরও ম্যাচ ছিল জার্মান কাপে। দলের অন্যতম খেলোয়াড়টিকে মাঠে চেয়েছিল জাতীয় দল ও ক্লাব—দুই পক্ষই। ফলে বিকল্প এক ব্যবস্থা রাখতে হয়েছিল দুই পক্ষের দাবি মেটাতে। ডাবলিন বিমানবন্দরে প্রস্তুত ছিল ব্যক্তিগত জেট বিমান। ৫৮ মিনিটে লারবি জাতীয় দলের ম্যাচটি থেকে উঠে আসেন। ছুটে যান বিমানবন্দরে। সেখান থেকে উড়ে চলে আসেন মিউনিখে। ব্যস্ত ফুটবলারের ব্যস্ততম দিন!
সংগ্রহ: রাজীব হাসান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২১, ২০১০
Leave a Reply