বিশ্বকাপ ফুটবল পুরোদমে জমে উঠেছে। প্রায় সব বাড়ির ছাদেই বাঁশের আগায় বিভিন্ন দেশের পতাকা লাগানো। পতাকার ভারে কোনো কোনো বাঁশ একেবারে হেলে পড়েছে। দেখতে ভালোই লাগে। শুধু কি বাঁশ? আরও অনেক কিছুই হেলে পড়ছে।
নিচের ছবিটি দেখুন। জলজ্যান্ত একটা ভবন কী সুন্দর হেলে পড়েছে! তবে এ দেশের মানুষ খুবই বেরসিক। একটা ভবন হেলে পড়েছে, কোথায় আরও ভবনটার সামনে গিয়ে ভাব নিয়ে ছবি তুলবে, তা না, ভবন কেন হেলে পড়ল, কোন কোম্পানির রড-সিমেন্ট দিয়ে এই ভবন তৈরি হয়েছে—এসব নিয়ে লাফালাফি করছে। অনেকের মতে, বাংলাদেশের মানুষ সারা দিন যেভাবে ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে, ভবন তো হেলে পড়বেই। কানের কাছে সারা দিন ‘হ্যালো হ্যালো’ বললে কত দিন আর না হেলে বসে থাকা যায়? ভবনেরও তো সহ্যের একটা সীমা আছে, নাকি। অনেকে আবার এই সূত্রের ধারেকাছেও যাচ্ছে না। তাদের মতে, আর্জেন্টিনার পতাকাই ভবন হেলে পড়ার একমাত্র কারণ। আর্জেন্টিনা দলের শক্তি, সামর্থ্য, প্রত্যাশার চাপ মিশে ছিল ওই পতাকায়। সেই অসীম চাপ এই ভবনটি নিতে পারেনি, ধপ করে হেলে পড়েছে। কিন্তু ভবন কেন হেলে পড়ল, সেটা বিবেচনার বিষয় নয়। আমাদের বোঝা উচিত, ভবন হেলে পড়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যেখানে-সেখানে এই ঘটনা ঘটে না। অনেক আগে একবার ঘটেছিল ইতালির পিসা শহরে। একটা টাওয়ার ঠিক এই ভবনটির মতো হেলে পড়েছিল। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ সেই টাওয়ার দেখতে আসত। গ্যালিলিও সাহেব তো এই টাওয়ারের ছাদের ওপর দাঁড়িয়েই নানা রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছিলেন। সেই টাওয়ার অনেক আগে থেকেই বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকায় স্থান পেয়ে বসে আছে। আর আমাদের দেশে যে ভবনগুলো হেলে পড়ছে, আমরা তার ঐতিহাসিক মর্ম না বুঝে ভেঙে ফেলছি। কিন্তু এভাবে আমাদের ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের উচিত হেলে পড়া ভবনগুলোকে অবিলম্বে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করা। এতে দেশের পর্যটনশিল্প ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। তা ছাড়া গ্যালিলিওর মতো কোনো বিজ্ঞানী থাকলে হেলানো ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে গবেষণাও করতে পারবেন। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ হেলাফেলা না করে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২১, ২০১০
Leave a Reply