সেকালের যেমন রোমিও-জুলিয়েট, একালে তেমনি আমাদের পাড়ার রোমান-জুলি। যথাসময়ে জুলিদের বাসায় রোমানের বাবা-মা গেলেন। কিন্তু মুরব্বিদের আলোচনা লাইন ছেড়ে বেলাইনে চলতে থাকল। ঊর্ধ্বমুখী-নিম্নমুখী-নানামুখী আলোচনার একপর্যায়ে এল বিশ্বকাপ ফুটবল প্রসঙ্গ। রোমানের বাবা ব্রাজিলের সাপোর্টার আর জুলির বাবা আর্জেন্টিনা। ব্যস্, আর ঠেকায় কে? কোলাকুলি দিয়ে শুরু হওয়া আলোচনা বলতে গেলে একদম গোলাগুলির পর্যায়ে শেষ হলো। বেচারা রোমান আর জুলির তো একেবারে মাথায় হাত!
বাসায় ফিরেই রোমানের বাবার ঘোষণা, ‘প্রয়োজন হলে ছেলের বিয়ে আমি ব্রাজিলের কোনো মেয়ের সাথে দেব, কিন্তু ওই বাড়িতে না। বিশ্বকাপের মাঠে পর্যন্ত হাত দিয়ে গোল দেয়, আবার বড় গলায় কথা বলে! দেখে নিয়ো, এমন বউমা আনব যে হেসে-খেলে সাম্বা নাচ নেচে আমাদের বাসাটাকে মাতিয়ে রাখবে।’
অন্যদিকে জুলির বাবাও কম যান না। ‘ছেলের নাম শুনে আমি প্রথমেই সন্দেহ করেছিলাম। রোনালদো, রোনালদিনহোর নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নামও রেখেছে রো দিয়ে! কোথায় মহারাজ ম্যারাডোনা আর কোথায় রোনালদো! আমিও দেখে নেব, মেয়ের বিয়ে দেব ম দিয়ে শুরু এমন নামের কোনো ছেলের সঙ্গে। মতের মিল না হলে সংসার কখনো সুখের হয় না—স্বয়ং ম্যারাডোনা পর্যন্ত এই কথা স্বীকার করতে বাধ্য।’
বেকায়দায় পড়ল আমাদের রোমান আর জুলি, একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ঠিক এমন সময় জুলির মাথায় একটা আইডিয়া এল! একদম ফেসপাউডারের মতো সরল আইডিয়া।
পরদিন রোমান আর্জেন্টিনার জার্সি পরে গেল জুলিদের বাসায়। ছেলের এই দশা দেখে জুলির বাবা তো মহা খুশি! শুরু হলো নানা বিষয়ে তুমুল আলোচনা; এই যেমন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ম্যারাডোনা, ফুটবল এবং ফ্যাসিজম্, খেলাধুলায় ডোপিং-বিষয়ক জটিলতা ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘আসলে বুঝলে, জুলির মা, সংসার তো করবে ছেলে আর মেয়ে। তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংটাই হলো আর্জেন্ট ব্যাপার।’ মনে হয় ‘আর্জেন্টিনার’ সাপোর্টার বলেই জুলির বাবা প্রায়ই ‘আর্জেন্ট’ শব্দটা ব্যবহার করেন।
রোমান বাসায় ফিরলে ছেলের গায়ে আর্জেন্টিনার জার্সি দেখে রোমানের বাবা তো রেগেই কয়লা, ‘তোর গায়ে হঠাৎ জেব্রা ক্রসিং ক্যান…।’ পেছনে তাকিয়ে তার তো চক্ষু চড়কগাছ, সঙ্গে জুলিও রয়েছে। কিন্তু এ কী! জুলি মা-মণির হাতে যে ব্রাজিলের পতাকা। ‘ছেলেটা গোল্লায় গেলেও মা আমার বুদ্ধিমতী; ঠিক দলটাই বেছে নিয়েছে।’ শুরু হয়ে যায় ব্রাজিল-বন্দনা। রোমানের বাবার প্রতিটি কথায় সায় দিয়ে নানা ফ্রিকোয়েন্সিতে মাথা ঝাঁকাতে থাকে জুলি। নাশতা খেয়ে মুখ মোছার জন্য ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে জুলি যে রুমাল বের করল তাতেও ব্রাজিলের পতাকা! বিয়ে আর ঠেকায় কে!
রোমান-জুলি এখন সুখেই আছে। পাড়ার সবাই এ দম্পতিকে ‘এ-বি ফ্যামিলি’ বলে। ‘এ’ ফর আর্জেন্টিনা আর ‘বি’ ফর ব্রাজিল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৭, ২০১০
Leave a Reply