বাংলাদেশে পতাকা বিক্রির ব্যবসা খুব একটা সুবিধার কিছু না। ফ্লেক্সিলোডের চাহিদা সব সময় থাকলেও স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস ছাড়া বছরের অন্য সময়ে পতাকার চাহিদা থাকে না বললেই চলে। আর ফোন নম্বর বা বাসার ঠিকানা না জানলে পতাকা বিক্রেতাকেও খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিক্রেতার আর কী দোষ? বাংলাদেশের পতাকা কেউ একবার কিনলে বেশ যত্ন করে রেখে দেয়, ফলে নতুন করে আর কেনাও হয় না, তাই বিক্রিও হয় না। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় পতাকা বিক্রেতারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটার পাশাপাশি বিদেশি পতাকাও পতপত করে উড়ছে। রাস্তায় রাস্তায় পতাকা বিক্রেতাদের সমারোহ। তবে এই বিদেশি পতাকা লাগানো নিয়ে নানা রকম মতভেদ আছে। কারও মতে, ‘বুঝলাম, তুই অমুক দেশের বিরাট সাপোর্টার, তুই খেলা দেখ, ভালো লাগলে তালি, না লাগলে গালি দে, লাথি মেরে টিভি ভেঙে ফেল; কিন্তু পতাকা লাগাবি কেন?’ এই বক্তব্যের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের যুক্তি হলো, ‘আমি অমুক দেশের সাপোর্ট করি। আমার বাপের টাকা দিয়ে আমি ওই দেশের পতাকা লাগাব, একটা কেন দরকার হলে ১০০ পতাকা লাগাব, তাতে কার কী?’ যা-ই হোক, অটোরিকশাচালক যেভাবে সিগন্যাল কাটিয়ে যায়, সেভাবে আমরাও বিতর্ক কাটিয়ে অন্য কথায় আসি। ভেবে দেখুন, এই বিদেশি পতাকাগুলো কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দারুণ ভূমিকা রাখছে। পতাকা বিক্রির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। বাচ্চাদের জামা আর হাফপ্যান্ট বানানোর পাশাপাশি দর্জিরা তৈরি করছেন বিভিন্ন দেশের পতাকা। বৃদ্ধি পাচ্ছে ভৌগোলিক জ্ঞান। পতাকা লাগানোর জন্য ব্যবহূত হচ্ছে বাঁশ ও পাটের রশি, যা আমাদের মৃতপ্রায় পাট ও বাঁশশিল্পকে আবার জাগিয়ে তুলছে। কী চমৎকার ব্যাপার! তবে সমস্যা একটাই। কদিন আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় কাউকে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অনেকে উত্তর দেয়, ‘আরে, বলে কী! বাংলাদেশের পতাকা তো আমাদের বুকে।’ এ কথা সত্যি হলে তো খুবই ভালো। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। আমরা এ কথাই বিশ্বাস করতে চাই।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৭, ২০১০
Leave a Reply