এক লোকের টেলিভিশন গেল নষ্ট হয়ে। ছবির বদলে দেখা যায় অবিরাম তুষারপাত। আর এমন শব্দ হয় যেন সব ঘোষক-ঘোষিকা, উপস্থাপক-উপস্থাপিকা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রী আজন্ম তোতলা। মেরামতখানায় নিয়ে যাওয়ার পর মেরামতকারী টেলিভিশনটা এদিক থেকে দেখল, ওদিক থেকে দেখল, খুলে গুঁতোগুঁতি করল অনেকক্ষণ ধরে, তারপর বলল, ‘টিভির অবস্থা শেষ।…শুনুন, টেলিভিশনের প্রয়োজনটা কী আপনার, বলুন তো? বেশিক্ষণ টিভি দেখলে মাথাব্যথা করে, চোখ কটকট করে। তার চেয়ে বরং এই টিভি থেকে আপনাকে ক্যাসেট-রেকর্ডার বানিয়ে দিই। ইচ্ছে করল, অন করে গান শুনলেন। খরচাও বেশি হবে না। টিভি সারাতে যত লাগত, তত দিলেই চলবে। ভেবে দেখুন, অনেক বেশি লাভজনক।’
লোকটি ক্যাসেট-রেকর্ডার নিয়ে ফিরল বাসায়। অন করল। কিন্তু কাজ করছে না। মানে, কাজ অবশ্য করছে একভাবে—ভেতরে কী যেন ঘুরছে, গোঁ গোঁ শব্দ করছে, আর্তচিৎকারের মতো আওয়াজ বেরোচ্ছে, কিন্তু গান বাজছে না।
গেল আবার মেরামতখানায়। মেরামতকারী এভাবে শুনল, ওভাবে শুনল, তারপর বলল, ‘যন্ত্রের আয়ু শেষ।…শুনুন, ক্যাসেট-রেকর্ডারের প্রয়োজনটা কী আপনার, বলুন তো? সারাক্ষণ ঘুরেফিরে একই গান! শুনতে শুনতে ঠসা হওয়ার অবস্থা। তার চেয়ে বরং এই ক্যাসেট-রেকর্ডার থেকে রেডিও বানিয়ে দিই। ইচ্ছে করল আমেরিকা শুনলেন, বিরক্তি ধরে গেল ফ্রান্স শুনলেন। খরচাও বেশি হবে না। ক্যাসেট-রেকর্ডার সারাতে যত লাগত, তত দিলেই চলবে। ভেবে দেখুন, অনেক বেশি লাভজনক।’
লোকটি রেডিও নিয়ে ফিরল বাসায়। অন করল। কিন্তু চীন আর পাপুয়া নিউগিনির গানের সেন্টার বেজে উঠল একসঙ্গে এবং পুরো এক ওয়েভ জুড়ে। আলাদা করে শোনাও অসম্ভব।…মেরামতকারী বলল, ‘শুনুন, রেডিওর প্রয়োজনটা কী আপনার, বলুন তো? রেডিও থেকে যে বিকিরণ হয়, তা শরীরের ভেতরে এক ধরনের দহন ঘটায়। তারচেয়ে বরং এই রেডিও থেকে গ্যাস-লাইটার বানিয়ে দিই। খরচাও বেশি হবে না। ভেবে দেখুন, অনেক বেশি লাভজনক।’
লোকটি গ্যাস-লাইটার নিয়ে ফিরল বাসায়। কিন্তু আগুন তাতে জ্বলে না। গ্যাস ভরলেও জ্বলে না, জ্বলে না রকেটের জ্বালানি ভরলেও। তবে আগুনের ফুলকি ওঠে প্রকাণ্ড, বিস্তীর্ণ, বহুশাখী।
এখন তার পরিবারের সবাই প্রতি সন্ধ্যায় বসে টেলিভিশন রাখার টেবিলের সামনে। টেবিলের ওপর রাখা হয় গ্যাস-লাইটারটি। পরিবারের কর্তা ওটি জ্বালানোর চেষ্টা করে। পটপট শব্দে বিদ্যুতের মতো আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে ঘরজুড়ে। যেন আতশবাজি। মনোহর দৃশ্য। ঠিক উৎসবে যেমন।…ঘরের কোনো কিছু এখনো পোড়েনি বটে, তবে পরিবারের সবার পরনে থাকে বিশেষ চশমা আর গ্যাস-মুখোশ। মেরামতকারী ওসব বানিয়ে দিয়েছে ফ্রিজ আর ওয়াশিং মেশিন থেকে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ৩১, ২০১০
Leave a Reply