দীর্ঘকাল থেকে হিমালয়ের এভারেস্ট নামক চূড়াটা একা একা দাঁড়িয়ে আছে ওই জায়গায়। এত দিন এটা নিয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। থাক না বাবা, দাঁড়িয়ে আছে থাক, কাউকে তো বিরক্ত করছে না। কিন্তু এই উদ্ধত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা পছন্দ হলো না মুসা ইব্রাহীমের। পদানত করলেন তিনি এভারেস্টকে। পৃথিবীর এই কঠিন কর্মের পর এবার তিনি করেছেন কঠিনতম কর্মটি। দিচ্ছেন রস+আলোয় সাক্ষাৎকার। নেপাল থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিমু নাসের
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে হিমালয়ের নাকি বরফ গলছে। কত ঘনফুট বরফ গলেছে বলে আপনার মনে হয়? আপনি কি বিষয়টা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখে এসেছেন?
হ্যাঁ। তদন্ত করেছি। আসলে বিষয়টা তদন্ত করতেই তো আমার এভারেস্টে যাওয়া। তবে আমার এই তদন্ত রিপোর্ট বাংলাদেশের আর সব তদন্ত রিপোর্টের মতোই কখনো আলোর মুখ দেখবে না। হা হা হা।
এভারেস্টে কোন সুবিধা থাকলে আপনি সহজেই সেখানে উঠতে পারতেন?
এভারেস্টের গোড়ায় যদি একটা লিফট থাকত, তাহলে খুব সুবিধা হতো। বোতাম চাপলেই উঠে পড়তে পারতাম। এ ছাড়া এত পথ হাঁটতে অনেক কষ্ট, পায়ের সঙ্গে গাড়ির চাকার মতো এমনি এমনি চলবে, ব্রেক করা যাবে (মোটরাইজড) এমন চাকার ব্যবস্থা থাকলে খুব ভালো হতো।
এভারেস্টে ওঠার সহজ উপায় কী বলে আপনার মনে হয়?
এফিডেভিট করে কোনো বন্ধুর নাম ‘এভারেস্ট’ রেখে তার মাথায় চড়ে বসা ছাড়া তো আর কোনো সহজ রাস্তা দেখি না। এ ছাড়া মানচিত্রের যেখানে এভারেস্ট লেখা, সেখানে দাঁড়িয়েও বলা যায় ‘আমি এভারেস্টে উঠেছি’। আরও একটা উপায় মনে পড়ল, কোথাও গিয়ে ‘এভারেস্ট’ নামক হোটেল থাকলে সেটায় উঠে বন্ধুকে বলতে পারেন ‘আমি এভারেস্টে উঠেছি’।
লিফট না সিঁড়ি? কোনটি আপনার পছন্দ?
আমার পছন্দ, লিফটও নেই সিঁড়িও নেই এমন বিল্ডিং। এই সুবিধাসম্পন্ন ১৫ তলা বাড়ির মালিকেরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। টপ ফ্লোর ভাড়া নেব।
এভারেস্ট অভিযানের এই কষ্টকর পথে আপনার কোন জিনিসটা প্রায়ই মনে হয়েছে?
আহা, কেউ যদি এখন মলা মাছের ঝোল দিয়ে গরম গরম ভাত দিত।
এভারেস্টের আশপাশে তো অনেক পতিত জমি। ওখানে কি হাউজিং ব্যবসার কোনো ভবিষ্যৎ আছে?
আছে মানে! অলরেডি ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে। আমি তো এভারেস্টের গোড়াতেই দেখে এসেছি একটা বড় সাইনবোর্ড, সেখানে বড় করে লেখা, ‘এভারেস্ট ভিউ হাউজিং প্রকল্প’। তার নিচে লেখা, ‘এভারেস্ট মানে এভারেস্ট, মাকালু বা অন্নপূর্ণা না। এখানে সুলভ মূল্যে এখনই বাড়ি করার উপযোগী প্রতি কাঠা মাত্র ৩০ হাজার টাকা ডাউন পেমেন্টে বুকিং চলছে। বাকি টাকা ৫২টি কিস্তিতে দেওয়ার অপূর্ব সুযোগ। ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা আছে। রিহ্যাব অনুমোদিত।’
আপনি তো পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটায় উঠেছেন। আমি চাইলে কি এরও ওপরে উঠতে পারব? সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। আপনি যদি এভারেস্টে যাওয়ার সময় বগলে করে দুটো থান ইট নিয়ে যান, তারপর চূড়ার ওপর ইট রেখে তার ওপর উঠে দাঁড়ালেই এভারেস্টের চেয়ে বেশি উচ্চতায় উঠতে পারবেন। হা হা হা।
এভারেস্টে তো পুরোটাই বরফ। তাই খুব ঠান্ডাও। তার পরও কোনো রেফ্রিজারেটর কোম্পানি যদি সেখানে গিয়ে অভিযাত্রীদের মধ্যে রেফ্রিজারেটর বিক্রির চেষ্টা করে, তাহলে কেমন চলবে?
খুবই ভালো চলবে। একটু উষ্ণতার আশায় সবাই ফ্রিজের ভেতর ঢুকে বসে থাকার জন্য কিনবে। বাইরের আবহাওয়া থেকে ফ্রিজের ভেতর অনেক গুণ বেশি গরম। রেফ্রিজারেটর কোম্পানিগুলো ব্যবসা করে লালে লাল হয়ে যাবে।
যারা জীবনেও ওখানে যেতে পারবে না, তাদের উদ্দেশে কি বলবেন এভারেস্ট ও এর আশপাশের জায়গাটা দেখতে কেমন?
জায়গাটা দেখতে ভালোই হওয়ার কথা, কিন্তু চারপাশে এত পাহাড় যে আর কিছু দেখা যায় না। আমিও দেখতে পারিনি।
বেসক্যাম্প বা যাত্রাপথে কি কোনো মজার কিছু ঘটেছে?
আমার গ্রুপটা ছিল একটা আন্তর্জাতিক গ্রুপ। নানান দেশের লোক ছিল সেখানে। বেসক্যাম্পে একদিন এক বিদেশি অভিযাত্রী খেতে বসে খাবার তদারককারীর কাছে চিলি মানে মরিচ চাইলেন। একটু পর তিনি চিলির বদলে নিয়ে এলেন চিনি। সেটা তখন আমাদের বেশ হাসির খোরাক জুগিয়েছিল। এটা ঘটেছিল আসলে হাই অ্যালচিটিচিউড প্রবলেমের কারণে। এই অবস্থায় অনেকেই ভুলভাল শোনে। অন্য রকম আচরণ করে।
রস+আলোর পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
যাদের ভুঁড়ি আছে তারা ‘মেদ ভুঁড়ি কী করি’ সেন্টারে না গিয়ে এখনই পাহাড়ে উঠুন। পাহাড়ে উঠলে ভুঁড়ি কমে। এভারেস্টে অভিযানে যাওয়ার আগে আগে আমার হালকা একটা ভুঁড়ি উঁকি মারছিল; এভারেস্টে ওঠার পর সেটা গ্লেসিয়ারের মতো গলে গেছে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ৩১, ২০১০
Leave a Reply