আমাদের সবার প্রিয় মুসা ইব্রাহীম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জয় করেছেন হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট। কত কষ্টই না তিনি করেছেন এই হিমালয়ের চূড়ায় উঠতে। আহা! অথচ আরও কত সহজভাবেই না পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গে ওঠা সম্ভব হতো। সেই সহজ পথগুলো সম্পূর্ণ বিনা মূল্যেই আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছেন রাকিব কিশোর
কথায় আছে, ‘ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না’। এর মানে কাউকে ধন্যবাদ দিলে সে ছোট হয়। হিমালয়ের সামনে গিয়ে টানা এক বছর প্রতিদিন নিয়ম করে তাকে ধন্যবাদ দিতে থাকুন। যখন সাইজমতো ছোট হবে, তখনই টিলাটক্কর পার হয়ে উঠে পড়ুন।
জাপানিরা যেমন নতুন কারও সঙ্গে দেখা হলে ‘বাউ’ করে, ঠিক তেমনি প্রথমবার হিমালয়ের সামনে গেলেই তাকে ‘বাউ’ করবেন। জবাবে হিমালয়ও যখন ‘বাউ’ করবে, তখন টুক করে তার মাথায় উঠে যাবেন।
হিমালয়ের আশপাশের কোনো পাগলকে কষ্টটষ্ট করে একবার শুধু খেপিয়ে তুলুন। তারপর দেখবেন দুনিয়া বড়ই বিচিত্র! সে নিজ দায়িত্বে লাঠি হাতে আপনাকে ওপরে উঠিয়ে ছাড়বে।
অনেকগুলো গ্যাসবেলুন ফুলিয়ে সেগুলোর রশি ধরে ঝুলে পড়ুন। একদিন না একদিন আপনি এভারেস্টের মাথায় পৌঁছেই যাবেন।
এভারেস্টের নিচে ৪০০-৫০০ টেবিল ফ্যান ছেড়ে দিয়ে সামনে দাঁড়ালেই উড়ে গিয়ে এভারেস্টে পড়বেন। মাথায় অবশ্যই হেলমেট পরে নেবেন।
বিশাল এই হিমালয়ের বরফের সঙ্গে কোনোভাবে যদি দুধ ও চিনি মিশিয়ে একে লোভনীয় আইসক্রিমে পরিণত করা যায়, তাহলে তা আরাম করে খেতে খেতে ধীরেসুস্থে ওপরে উঠে যাওয়া যাবে। এতে একটা লাভও হবে; হিমালয় খেয়ে ফেলার কারণে আপনার পরে আর কেউ হিমালয়ে উঠতে পারবে না। আপনি হবেন সর্বশেষ এভারেস্ট বিজয়ী।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আতশবাজি ফোটানো হয়। সেগুলোর কোনো একটা থেকে আতশবাজি নিয়ে তার মাথায় বসে পড়ুন, এরপর খালি একটা ম্যাচের কাঠি। আর কিচ্ছু লাগবে না।
আপনি পোলভল্ট খেলায় পারদর্শী হলে তো নো চিন্তা। বিশাল এক বাঁশ নিয়ে দিন লাফ, দখিনা হাওয়ায় উত্তুরে বাতাসে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
হিমালয়ের শরীরে জুম চাষের ব্যবস্থা চালু করুন। জমি চাষ করতে করতে একসময় নিজেই আবিষ্কার করবেন যে আপনি এভারেস্টের মাথায় বসে এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা কফি খাচ্ছেন। শুধু তাই না, পরিবার নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলোতে বেড়াতেও যেতে পারবেন। মনের মতো পিকনিক করবেন, তুষার গোল গোল করে একে-অপরের গায়ে ছুড়ে মারবেন। আহা! কী আনন্দ!
আশপাশে কোনো উঁচু টিলা থাকলে সেটার নিচে ‘এভারেস্ট’ লেখা নামফলক বাঁধাই করুন। এরপর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দিয়ে সেটার উদ্বোধন করুন। জায়গাটা সবাই চিনে গেলেই সেই টিলার ওপরে উঠে পড়ুন। ব্যস, জয় হয়ে গেল আপনার এভারেস্ট।
আলোর গতিবেগ নাকি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল! কথাটার সত্যতা প্রমাণ করার এই সুযোগ। ভালো দেখে একটা টর্চলাইট কিনে নতুন ব্যাটারি ভরে টর্চলাইটের সামনে বসে সুইচ টিপে দিন, মুহূর্তেই আলোর বেগে আপনি এভারেস্টের দিকে ছুটে যাবেন।
বাদশাহি আমলে যুদ্ধের সময় কামান ব্যবহূত হতো; খুঁজে খুঁজে তার একটার মুখে বসে সলতেয় আগুন লাগিয়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে! আপনাকে খুঁজে বের করতে চাইলে তাদের হিমালয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই।
বিপুল পরিমাণ কাঠ কেটে হিমালয়ের চারপাশে আগুন জ্বালিয়ে দিন। তারপর অপেক্ষা করুন। বরফ গলে গলে এভারেস্ট ছোট হয়ে যাবে, তখন দুই লাফ দিয়ে টুক করে হিমালয়ের চূড়ায় উঠে পড়বেন।
কয়টা দিন অপেক্ষা করুন, যখন পৃথিবীর সব বরফ গলে যাবে তখন সাঁতার দিয়ে এভারেস্টের মাথায় উঠে যাওয়া কোনো ঘটনাই না। পানি বেশি ঠান্ডা মনে হলে সাঁতারের সময় গায়ে একটা লেপ জড়িয়ে নেবেন।
হিমালয়কে কোনোমতে একবার খালি কাত করে শুইয়ে ফেলুন। এরপর এভারেস্টের মাথায় গিয়ে এভারেস্টকে জড়িয়ে ধরুন। তারপর জাতীয় সংগীত বাজান, জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে হিমালয় ধীরে ধীরে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবে, ততক্ষণে আপনার কার্যসিদ্ধি।
হিমালয়কে একটু বোঝান, যে বাবা, তুমি তো অনেক দিন ধরে দাঁড়িয়ে আছ, নিশ্চই পা ব্যথা করছে। এই নাও একটা চেয়ার, বসে একটু বিশ্রাম নাও। হিমালয় আপনার আতিথ্যে মুগ্ধ হয়ে বসতে যাবে, এই ফাঁকে আপনি লাফ দিয়ে এভারেস্টে উঠে পড়বেন।
বড়সড় একটা গাধা কিনে তার সামনে সতেজ একটা মুলা ঝুলিয়ে দিন; তারপর গাধার পিঠে চড়ে বসুন। মুলার টানে টানে গাধা হেলে-দুলে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে যাবে।
রাজনৈতিক নেতাদের শুধু যদি একবার বোঝানো যায় যে, ক্ষমতার গদিটা ওই হিমালয়ের ওপরে আছে; যে সেখানে পৌঁছাতে পারবে, ক্ষমতা তার। ব্যস, তাহলেই হবে, আর কোনো দেশের লোকজনই চান্স পাবে না।
টাকা-পয়সা বেশি থাকলে একটা সুপারম্যান ভাড়া করে ফেলতে পারেন। তবে সঙ্গে বেশি মালামাল নেবেন না, সুপারম্যান ৭৫ কেজির ওপরে ভার বহন করতে পারে না।
হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালাকে দাওয়াত করে খাওয়ান। সে একবার ফুঁ দিলেই পাহাড়-পর্বত সব আপনার বাসায় চলে আসবে, তখন আপনি নিজেই চয়েজ করবেন রকি পর্বতে যাবেন, আল্পসে যাবেন নাকি এভারেস্টে রেস্ট নেবেন। ইটস্ ইউর চয়েজ!
আপনার কোনো বন্ধুকে বলুন এনার্জি ড্রিংক খেয়ে আপনাকে ফুটবলের ওপরে বসিয়ে একটা কিক মারতে। হাওয়ায় দুলতে দুলতে আপনি পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের এভারেস্টে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ৩১, ২০১০
Leave a Reply