একসময় মধুমিতা আর অভিসার হলে বিখ্যাত সব সিনেমা আসত হঠাৎ হঠাৎ। আমরা তখন ছাত্র, দল বেঁধে ছুটতাম ছবি দেখতে। সেই সব হলে তখন ছবি দেখার মজাই আলাদা। একবার এল ফল অব রোমান এম্পায়ার, সম্ভবত মধুমিতা হলে। আমরা পাড়ার বন্ধুরা ছুটলাম দেখতে। গিয়ে দেখি সব টিকিট চলে গেছে কালোবাজারিদের হাতে। প্রতিটি টিকিট প্রচুর দাম হাঁকছে কালোবাজারিরা! অত দাম দিয়ে টিকিট কেনার কোনো যুক্তি নেই। কী আর করা, অচিরেই আমরা আবিষ্কার করলাম, এই ভুয়া ছবি দেখে সময় নষ্ট করে লাভ নেই…অনেকটা ‘আঙুর ফল টক’ আরকি। মধুমিতার সামনে থেকে গোটা কতক ফল (পেয়ারা) কিনে চিবাতে চিবাতে বাড়ি ফিরলাম আমরা!
পরবর্তী সময়ে এক দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কর্মশালায় গেলাম। কর্মশালার পরে খাওয়া-দাওয়া, তারপর ছবি দেখাবে। খাওয়া-দাওয়ার সময় দেখলাম ফলের বিরাট আয়োজন। ইচ্ছেমতো ফল খেলাম আমরা, তারপর ছবি দেখতে গিয়ে দেখি সেই ছাত্রজীবনের না দেখা বিখ্যাত ছবি ফল অব রোমান এম্পায়ার। ছবি দেখে আমরা বেরিয়ে আলোচনা করলাম—এই কর্মশালা আক্ষরিক অর্থেই ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে বলাই বাহুল্য।
আমার এক পরিচিত আছেন, যিনি সারা জীবন পরীক্ষার ফলে শুধু ফেলই করেছেন, সাফল্য আর আসেনি। কিন্তু পরিণত বয়সে ফলের ব্যবসা করে প্রায় কোটিপতি। তাঁর কাছে একটা মজার গল্প শুনেছিলাম (হয়তো তাঁর ফলের ব্যবসায় নামার সেটাই কোনো সূত্র)। ঘটনাটা ওই ফল নিয়েই, সেটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না হয়তো। তিনি তখন থাকতেন বুলগেরিয়ায়।
একটা মজার টিভি অনুষ্ঠানে তিনি চান্স পেয়ে গেলেন। বিভিন্ন দেশের মানুষকে নিয়ে অনুষ্ঠান, যাঁরা নানান বৈরী সব প্রতিযোগিতা ফেস করে করে ৫০ জন থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন টিকলেন। এর মধ্যে আমার সেই পরিচিতজনও ছিলেন। আর দুজন ছিলেন বুলগেরীয়, একজন মালয়েশীয় আর একজন চীনা। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বললেন, ‘এবার আপনারা পাশের রুমে চলে যান, ওখানে পৃথিবীর সব ফলই আছে। ওখানে আপনাদের জন্য পাঁচটা বাক্সও রাখা আছে। আপনারা আপনাদের প্রিয় ফল প্রতিটি পাঁচটি করে বেছে বাক্সে করে নিয়ে আসবেন। এখানে ফল হতে হবে এক আইটেম…সময় মাত্র…।’
প্রতিযোগীরা সব হুড়মুড় করে ছুটলেন পাশের রুমে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঁচজন পাঁচটি বাক্স নিয়ে মঞ্চে চলে এলেন।
‘তাহলে আপনারা প্রত্যেকেই ওই বাক্সে করে আপনাদের প্রিয় পাঁচটি ফল বেছে এনেছেন?’ উপস্থাপক জানতে চাইলেন
‘হ্যাঁ, আমরা এনেছি।’ সমস্বরে বললেন সবাই।
‘মনে রাখবেন, এটাই কিন্তু শেষ রাউন্ড। এই রাউন্ড থেকে দুজন বাদ হয়ে যাবেন, আর ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড নির্বাচিত হবেন…আপনারা রেডি?’
‘আমরা রেডি।’ সমস্বরে বললেন প্রতিযোগীরা।
‘এবার পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হবে আপনাদের…ঘোষণা দেওয়ামাত্র আপনারা আপনাদের নিজ নিজ বাক্স থেকে ওই ফল বের করে খেয়ে শেষ করবেন…তবে খেতে হবে খোসাসহ…আর সময় মাত্র পাঁচ মিনিট…স্টার্ট ওয়ান …টু…থ্রি-ই-ই-ই…!’
থ্রি বলামাত্র দুজন প্রতিযোগী মঞ্চে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। এর মধ্যে আমাদের বাংলাদেশিও ছিলেন। অজ্ঞান না হয়ে উপায়ও ছিল না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশি প্রতিযোগী তাঁর প্রিয় ফল বেছেছিলেন যথারীতি কাঁঠাল! আর মালয়েশীয় বেছেছিলেন নারকেল!
সবশেষে এবার এসএসসিতে যারা ভালো ফল করেছে, তাদের অভিনন্দন আর যারা ভালো করতে পারেনি, তাদের অগ্রিম অভিনন্দন। কারণ, তারা নিশ্চয়ই আগামী দিনে আরও ভালো করবে। আর আমাদের ভুললে চলবে না, থমাস জেফারসনের সেই মহান বাক্যটি, ‘খারাপ করার পূর্বশর্তই হচ্ছে অতি অবশ্যই আরও ভালো করা…!’
আহসান হাবীব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৪, ২০১০
Leave a Reply