ওয়াখা আর স্যাস দুই বন্ধু একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে, রসায়নে। তারা থাকে বুড়িগঙ্গার ধারে। বুড়িগঙ্গার বয়স হয়েছে। একসময় প্রায় পটলই তুলেছিল নদীটা। কিন্তু কিছু লোকের সভা-সেমিনার অবশেষে জানে বাঁচিয়েছে।
যে হারে পুরান ঢাকাটা ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছিল, কেই বা এ নদীর খোঁজ করত! শ-খানেক বছর আগে ভূমিকম্পটা হওয়ায় পুরান ঢাকা একেবারে গুঁড়োগুঁড়ো। সরকার পুরো কাতলা মাছের মতো হাঁ-করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। বিদেশি কয়েকটা সংস্থা এসে নিজেদের খরচে উদ্ধারকাজ করে দেয়। এমনকি এখানকার বাসিন্দাদের জন্য ঢাকার উত্তরে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে অনেক দূর আবাসন গড়ে দিয়েছে।
পুরান ঢাকার ইট-সুরকি সরিয়ে সেখানে একসময় গড়ে তোলা হয় আধুনিক এক নগর। আর তখনই সেখানে অনেকের সঙ্গে বাড়ি কেনে ওয়াখা আর স্যাসের পরিবার। লেখাপড়া শেষ করে ওয়াখা জানায়, ক্যারিয়ার গড়তে সে বিদেশ যাবে। কিন্তু স্যাসের এক কথা, যা করার দেশে বসেই করবে।
অনেক দিন স্যাসের সঙ্গে যোগাযোগ নেই ওয়াখার। সে বিদেশে বেশ কয়েকটা দেশ পাল্টিয়ে এখন মেক্সিকোয় আছে। সেখানে বড় এক চাকরি বাগিয়েছে। বেতন পায় যা, তা হাতে গোনা কয়েকজনেরই ভাগ্যে জোটে। কিন্তু তার পরও যখন স্যাসের সংবাদ পায়, তার অবাক লাগে। তার চেয়ে কয়েক গুণ পয়সাওয়ালা এখন স্যাস। নিজের একটা মহাকাশ যান পর্যন্ত আছে তার। ছুটিছাটায় আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে চাঁদে যায়।
ওয়াখা তাই এবার ছুটি নিয়ে ফেরে দেশে। স্যাসের বাড়িতে গিয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন করে, ‘বিষয় কী বল তো? এত পয়সা তুই বানালি কীভাবে?’ ছোটবেলার বন্ধুকে সব খুলে বলতে বাধা নেই। স্যাস বলে, ‘দেখছিস তো কেমিক্যাল সাপ্লাই করে এই পয়সা বানিয়েছি।’
‘শুধু কেমিক্যাল সাপ্লাই দিয়ে এত পয়সা হয় কী করে?’
“আরে হয় হয়, যদি ‘র’ ম্যাটেরিয়াল পাওয়া যায় বিনা পয়সায়।”
‘সেটা আবার কীভাবে?’
‘আরে তুই যাওয়ার পর আমি একটা তরল নিয়ে পরীক্ষা চালালাম। তাতে পেয়ে গেলাম হরেক রকম কেমিক্যাল। তারপর কয়েকটা মাথামোটা কেমিস্ট জোগাড় করলাম…।’ স্যাসকে থামিয়ে ওয়াখা জিজ্ঞেস করে, ‘মাথামোটা মানে!’
“আরে মানে তাদের পড়াশোনা ঠিক আছে, কিন্তু ব্যবসায়িক বুদ্ধি গোল্লা। তো তাদের দিয়ে বের করলাম কী করে সহজ উপায়ে ওই সব কেমিক্যাল আলাদা করা যায়। নতুন ধরনের কিছু যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করলাম সবাই মিলে। তারপর আর কী, ‘র’ ম্যাটেরিয়াল আনি, কেমিক্যাল আলাদা করি আর বিক্রি করি।”
“তা তো বুঝলাম, কিন্তু ‘র’ ম্যাটেরিয়ালটা আসে কোথা থেকে?”
‘বুড়িগঙ্গার পানি।’
সাজ্জাদ কবীর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৭, ২০১০
Leave a Reply