প্রবাদে আছে, সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না (তবে বুড়িগঙ্গা নদীর কথা আলাদা, বুড়িগঙ্গার স্রোত দূষিত বর্জ্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে)। আর তাই মানুষ দিনরাত ভাবে, কম সময়ে কীভাবে বেশি কাজ করা যায়। সময় বাঁচাতে গিয়ে এই যুগে মোবাইল ফোনসেট থেকে শুরু করে মানুষের মন—সবকিছুই ছোট হয়ে আসছে। আগে কী সুন্দর বড় বড় মোবাইল ফোনসেট পাওয়া যেত! দেখতেই কত ভালো লাগত। আর এখন ছোট ছোট মোবাইল ফোনসেটে বাজার ভরে গেছে। কারও মোবাইল ফোনসেট একটু বড়সড় হলেই সবাই দাঁত কেলিয়ে হাসা শুরু করে। অথচ প্রবাদে আছে, বড় জিনিস দেখলে মন বড় হয়। আজকাল মানুষের সময় এতই কম যে প্রবাদ-প্রবচনও সব ভুলেটুলে বসে আছে। সব দোষ ওই সময়ের। সময় কমাতে গিয়েই তো এত সব ভেজালের সৃষ্টি। পাঁচ দিনের টেস্ট থেকে ৫০ ওভারের ম্যাচ। সময়ের কারণে সেই ৫০ ওভারের ম্যাচও ছোট করে ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টি। সেই টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপও হচ্ছে এবং বাংলাদেশ হেরে বিদায়ও নিয়ে নিয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা! শুধু কি ওভার? অনেকের কাছে টি-টোয়েন্টির অন্যতম আকর্ষণ যে চিয়ারলিডার, তাদের পোশাকও ছোট হয়ে গেছে। অথচ প্রথম দুই আসরেও তাঁদের পোশাক মোটামুুটি বড়ই ছিল। কিন্তু এরপর কী হবে? পোশাকের কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু ওভার? এভাবে ওভার কমতে থাকলে তো একসময় এক ওভারের খেলা খেলতে হবে। তখনো মানুষ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলবে, ‘এক ওভারের খেলা? আরে, এক ওভারের খেলা দেখার সময় আছে নাকি! কত কাজ…’ কী আর করা, খেলা আরও ছোট করা হবে। টসেই হয়ে যাবে খেলার মীমাংসা। যে দল টস জিতবে, ওই ম্যাচে সেই দলই জয়ী। দর্শকও খুশিমনে টস দেখে বাড়ি চলে যাবে। পছন্দের দল জিতলে হাততালি। আর হারলে গালি দিয়ে বলবে, ‘ইস্, মামা, জেতা খেলা, এই ম্যাচ কেউ হারে? আরে ব্যাটা, আমার কাছে আসিস, টস কীভাবে জিততে হয় শিখিয়ে দেব।’ নাহ, ক্রিকেটের কী যে হবে, কিছুই বোঝা যায় না। যা-ই হোক, সবকিছু যখন ছোট হয়ে আসছে, তখন এই লেখাটা শুধু শুধু বড় করে আর কী হবে। লেখা বাদ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৭, ২০১০
Leave a Reply