বাজারে এক লোক আমার কাছে এসে বলল, ‘আমি জানি, অনেক গোপন রাষ্ট্রীয় তথ্য আপনার জানা আছে। ভালো টাকার বিনিময়ে আপনি কি দেশ বিক্রি করে দিতে রাজি?’
তার কথা ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দেশ বিক্রি?’
সে বলল, ‘হ্যাঁ, ভালো টাকার বিনিময়ে।’
আমি অবহেলার সুরে জানতে চাইলাম, ‘ভালো টাকা মানে?’
সে বলল, ‘এক হাজার ডলার।’
আমি বললাম, ‘ভীষণ বদলোক তো আপনি!’
সে বলল, ‘বারো শ।’
আমি বললাম, ‘আমি? দেশ বেচে দেব? বারো শ ডলারে?’
সে বলল, ‘তেরো শ।’
অবজ্ঞার হাসি হেসে বললাম, ‘তেরো শ কি সাপ্তাহিক বেতন, আপনাদের দেশে যেমন প্রচলিত?’
সে বলল, ‘না, মাসিক। আপনাদের এখানে যেমন প্রচলিত।’
আমি বললাম, ‘আপনি একটা বদমায়েশ!’
কৌতূহলী লোকজন ভিড় জমাতে শুরু করল আমাদের চারপাশে। অনেকেই প্রস্তাব দিল,
‘আমরা দেশ বেচে দেব।’
আমাকে দেখিয়ে লোকটি গোঁয়ারের মতো বলল, ‘না, শুধু সে বেচবে।’
দেখলাম, চারপাশে ধুমসে বেচাকেনা চলছে। কেউ বিক্রি করছে ট্রেনের সময়সূচি, কেউ গোপন সামরিক প্রকল্প, মেয়েদের স্নানাগারের সময়সূচি, ঘরে ভোদকা বানানোর রেসিপি…
তবে আমি…অটল, অবিচল।
লোকটা তখন বলল, ‘উনিশ শ! দৈনিক।’
চারপাশের সবাই চিৎকার করে বলল, ‘রাজি হয়ে যান। রাজি হয়ে যান।’
চেহারা কী একেকজনের! একেবারে লম্পটের মতো। আমি ভাবলাম, ওদের চটানোর জন্যই আরও দরদাম করব। বললাম, ‘দৈনিক দুই হাজার!’
লোকটি রাজি হয়ে গেল, বলল, ‘তা-ই সই।’
দুই হাজার ডলার গুনে আমার হাতে দিয়ে সে প্রশ্ন করল, ‘এত বেশি দাম নিলেন কেন, বলবেন কি?’
আমি উত্তর দিলাম তার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে, ‘শুনুন, বিদেশি সাহেব, আমার যা কিছু আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হলো আমার দেশ।’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১০, ২০১০
Leave a Reply