বুঝলি, ঢাকা শহর এখন ‘ডেড সিটি’
তোকে কে বলল?
রীতিমতো পড়াশোনা করে বের করেছি…।
কী রকম?
মেগাসিটির পরের স্টেজটাই হচ্ছে ডেড সিটি। কিছুদিন আগেও ঢাকা ছিল মেগাসিটি, এখন এটা ডেড সিটি!
তাই নাকি?
হু…আর সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি কী জানিস?
কী? ডেড সিটিতে কারা বাস করে?
কারা?
ভূতেরা…ভূত…আমি তুই সবাই এখন ভূত!
ঠিকই বলেছিস, এই ঢাকা শহরের মানুষ আর মানুষ নাই…পেপার খুললেই দেখা যায় এ ওকে প্রকাশ্যে কোপাচ্ছে…এসিড মারছে …আগে ছিল বখাটে ছাত্র, এখন বখাটে শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোথাও…পুলিশকে খুন করছে সন্ত্রাসীরা…দখল-চুরি-ছিনতাই-খুন এসব তো মামুলি…উফ্, মানুষ আর মানুষ নেই…সব পশু হয়ে গেছে!
ওই তো আরেকটা ভুল করলি?
কী ভুল করলাম?
মানুষকে পশুর সঙ্গে তুলনা করলি, পশুদের একটা এথিকস আছে, মানুষের তাও নেই…বরং বল, মানুষ ভূত হয়ে গেছে…স্রেফ ভূত…ভূত যেমন উল্টো পায়ে চলে, সে রকম ঢাকার মানুষজন মানে ভূতেরা…
এখন আমাদের কী করণীয়?
আমাদের এখন সত্যিকারের একটা মানুষ খুঁজে বের করতে হবে এই ঢাকা শহর থেকে…
তারপর?
তারপর তাকে সংবর্ধনা দিয়ে মানুষের আসল পরিচয় তুলে ধরতে হবে সবার সামনে। তাকে কেন্দ্র করে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হবে…নিউ স্টার্ট!
ওহ্ দারুণ বলেছিস…তাহলে খোঁজা শুরু করে দিই, কী বলিস? একজন সত্যিকারের মানুষ…
ঠিক তাই, সত্যিকারের মানুষ, ভূত না কিন্তু…তুই লেগে পড়, আর আমি এদিকে স্পনসর জোগাড়ের ব্যবস্থা করি।
স্পনসর কেন?
বাহ, লোকটাকে সংবর্ধনা দিতে গেলে খরচাপাতি আছে না? তার ওপর মিডিয়া কাভারেজ, প্রেস কনফারেন্স—একটা হুলুস্থুল ফেলে দিতে হবে চারদিকে।
কাজে লেগে পড়ল দুই বন্ধু। ‘ঢাকা শহর উদ্ধার কমিটির’ (রেজিস্ট্রিকৃত) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আবদুল মোতালেব আর রহিম সিদ্দিকী (কাল্পনিক নাম, প্রকৃত নাম প্রকাশে তারা এই মুহূর্তে অনিচ্ছুক)।
সাত দিনের মাথায় আবার জরুরি মিটিং…।
ভালো খবর আছে।
পাওয়া গেছে?
হুম…একদম পারফেক্ট মানুষ, জীবনে মিথ্যা কথা বলেনি, ঘুষ খায় না, মাছ-মাংস কিছু খায় না…।
ঘুষ খায় না ঠিক আছে, তার সঙ্গে মাছ-মাংস খায় না…মানে?
আরে, মাছ-মাংস খায় না, কারণ ওগুলো খেলেই তো প্রাণী হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে গেল। খিদে পেলে লোকটা গাছতলায় বসে থাকে। গাছ থেকে ফলমূল আপসে নিচে এসে পড়লে খায়…নইলে না খেয়ে থাকে।
বলিস কী? এ তো অসাধারণ মানুষ রে! ঢাকা শহরে এ রকম মানুষ আছে! …ব্র্যাভো ব্র্যাভো…দারুণ কাজ করেছিস। লোকটার ওপর নজর রাখ, এদিকে আমি স্পনসর বোধহয় একটা পেয়েই যাব…ব্যাটারা অবশ্য একটু ঝামেলা করছে। বলছে, সেলিব্রিটি কে কে আসবে…সেলিব্রিটি না থাকলে…
যা হোক। ডেড সিটির দুই মানুষ, থুড়ি, দুই ভূত যথাক্রমে আবদুল মোতালেব আর রহিম সিদ্দিকী জান দিয়ে খাটতে লাগল। কয়েক দিন পর ফের একটা মিটিং ডাকল তারা।
দারুণ খবর আছে।
কী রকম?
লোকটার গা থেকে আজ দেখলাম জ্যোতি বের হচ্ছে, মানে জ্যোতি বিচ্ছুরণ!
মানে?
আরে, আগেকার সাধুসন্তদের গা থেকে পবিত্র আলো বের হতো না? সেই রকম!
বলিস কী, এটা কী করে সম্ভব?
এটা মনে হয় ঈশ্বরের খেলা…ঈশ্বর দেখলেন এ রকম একজন ‘মানুষ’, তাই তাকে ওইভাবে পুরস্কৃত করলেন…প্রকৃতির দান!
তাহলে তো আর দেরি করা যায় না। তুই এক কাজ কর…কালই লোকটাকে নিয়ে আয়, দুপুরের পর সংবর্ধনা।
আমি এদিক সামলাচ্ছি…।
ঠিক আছে।
পরদিন বিষণ্ন বদনে একা ফিরে এল সাধারণ সম্পাদক রহিম সিদ্দিকী!
কী হলো, একা এলি যে?
খবর খুবই খারাপ
কী?
লোকটা বেঁচে নেই!
মানে?
মানে ওর গা থেকে জ্যোতি বের হচ্ছিল দেখে এলাকার লোকজন ওকে ভূত মনে করে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১০, ২০১০
Leave a Reply