মডেল, অভিনেত্রী যখন স্লিম থাকেন, তখন তাঁদের ছবি ছাপা হলে পুরুষেরা বেশি দেখে। তাঁরা যখন মুটিয়ে যান, তখন ছবি ছাপা হলে নারীরা বেশি দেখে। কারণ, শাড়ির ডিসপ্লেটা তখন ভালো হয়। আর ছাত্রলীগের ছবি ছাপা হলে পুরো জাতি একসঙ্গে দেখে।
এক-এগারোর তোপে রাজনীতি কিছুটা সুশীল হয়ে পড়েছিল। একে আগের মারামারি-কাটাকাটির অবস্থায় নিয়ে যেতে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট মারামারি দিয়ে শুরু করে তারা রাজনীতির কোষ্ঠকাঠিন্য পরিবেশকে ফ্রি-স্টাইল ডায়রিয়া অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। জয় ছাত্রলীগ!
অবশ্য এ করতে গিয়ে তারাও মনে হয় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসএমসির ওরস্যালাইনের গাড়ি আটকে তারা সম্প্রতি স্যালাইন দাবি করেছে।
তিন বছরেই বিএনপির কর্মীদের দম ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। ঢাকায় নির্বাচন কমিশনমুখী পদযাত্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েই তারা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। আর ছাত্রলীগ? প্রতিদিন কী অসীম শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে! মারছে, ধরছে, কোপাচ্ছে। এই অশ্বশক্তিকে কাজে লাগাতে পারে বিএনপিও। নিজেদের কর্মসূচিতে এদের ভাড়া করতে পারে তারা। এ ব্যাপারে রাজশাহীর মেয়রের সহায়তা নিতে পারে বিএনপি। পত্রিকার খবর, তিনি নাকি এখন খালেদা জিয়ার সমাবেশেও বিনিয়োগ করছেন।
দরপত্রের দীর্ঘসূত্রতা দেশের উন্নয়নের বড় সমস্যা। দরপত্রের দরাদরি শেষ করে কোনো কাজ শুরু করতে করতেই আর দেশে সেই সমস্যার অস্তিত্ব থাকে না। এই অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পড়ালেখা ছেড়ে এগিয়ে এসেছে ছাত্রলীগ। দরপত্র ছিনতাই বা সমঝোতা করে বাছাইজনিত সময়ের অপচয় বন্ধ করছে তারা। কারণ, টাইম ইজ মানি। ঝিনাইদহে তো তাদের যুব সহযোগীরা দরপত্র ডাকার আগেই রাস্তার কাজ করে রেখে দিয়েছে।
এত কিছুর পরও দাতা সংস্থাগুলো দরপত্র নিয়ে ছাত্রলীগের দাপাদাপি পছন্দ করছে না। তারা শর্ত জুড়ে জুড়ে সরকারকে গর্তে ফেলছে। বাধ্য হয়ে সরকার ই-মেইলে দরপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করছে। তো, এই কৃতিত্ব কার? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তেও সহায়তা করছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ। দিন বদলায়। অমিতাভ বচ্চন বদলায়। বচন বদলাবে না! ছাত্রলীগনং টেন্ডারনং তপঃ!
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভ্রাতাসুলভ আচরণে ছাত্রদল সুশীল হয়ে পড়ায় পরীক্ষার মুখে পড়েছে ছাত্রলীগ। মারামারির পারফরম্যান্স ধরে রাখার জন্য তারা ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে প্রতিদিন প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছে।
আধুনিকায়নের ফলে দেশের কর্মকার সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। ছাত্রলীগ সেই কর্মকারদের পূর্বপুরুষদের পেশাকে সমৃদ্ধ করছে। তারা সারা দেশে দরপত্র ছাড়া ‘কুইক অ্যান্ড ডাইরেক্ট পদ্ধতি’তে দা, রামদা তৈরির কার্যাদেশ দিয়ে গোটা লৌহশিল্পে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে।
বৈশ্বিক মন্দার ফলে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প কিছুটা চাপের মুখে আছে। ছাত্রলীগ এই শিল্পের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। কর্মীদের জন্য রামদা রাখার মতো পকেটওয়ালা কয়েক লাখ প্যান্ট অর্ডার দিতে পারে তারা। এতে তাদের আর চোরের মতো রামদা পেছনে লুকিয়ে ঘুরতে হবে না। আসছে বাজেটে এর জন্য থোক বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। তবে একে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য বিশেষ ইনসেনটিভ হিসেবে দেখালে ভালো হবে।
দা, রামদা ধার দেওয়ার জন্য বালু অন্যতম উপাদান। সংগঠনের জুনিয়র কর্মীরা বড় ভাইদের দা ধার দেওয়ার বালু সরবরাহ করে ব্যবসায় হাতে খড়ি নিতে পারে। ভবিষ্যতে এই জুনিয়ররা সংগঠিত হয়ে বালু লীগ নামে সংগঠনের জন্ম দিতে পারে। তবে তাদের সংগঠন রামদা রেজিমেন্টের অধীনে থাকতে হবে।
জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চেয়েছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের জন্য সুযোগ পাচ্ছেন না। ছাত্রলীগ যা শুরু করেছে, তাতে ওনারা প্রস্তুতি নিতে নিতেই সরকারের পতন ঘটে যাবে। তাহলে সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকিয়ে রাখার কৃতিত্ব কার? ছাত্রলীগের! (জোর করতালি)
শাহেদ মুহাম্মদ আলী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১০, ২০১০
Leave a Reply