পুরানা পল্টন থেকে কারওয়ান বাজার। চালক ধুম করে চেয়ে বসলেন ১০০ টাকা। গাড়ি চালু করে সার্জেন্টের ভয়ে নিজেই মিটার ছাড়লেন। ভরদুপুরে ফাঁকা রাস্তা। তার ওপর এলাকাভিত্তিক বন্ধের নিয়মানুযায়ী সেদিন পল্টন-মগবাজার-মালিবাগ এলাকা বন্ধ। মগবাজার দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে মিটারে উঠল ৩৩ টাকা। চালককে বলা হলো, দুটো উপায় আছে: এক. ৫০ টাকা নিয়ে বিদায় হন, আর দুই. নামেন, চা খান, গল্প করেন। যতক্ষণে মিটারে ১০০ টাকা উঠবে তখন নেবেন। তিনি কোনোটিই করতে রাজি না হওয়ায় সামনের চা-দোকানিকে ১০০ টাকা দিয়ে বলা হলো, ‘উনি বসে থাকুক, মিটারে ১০০ টাকা উঠলে দেবেন। আর ৫০ টাকা নিয়েই চলে যেতে চাইলে দিয়ে দেবেন।’ পরে জানতে পারি, চালক ৫০ টাকা নিয়েই চলে গিয়েছিলেন।
বসন্তের প্রথম দিন। শেরাটন থেকে কারওয়ান বাজার। রাস্তায় অনেক ভিড়। সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোও হাঁকছে সেই রকম। একটি গাড়িতে ওঠার পর চালক বললেন, ‘ভাড়া কিন্তু বাড়ায়ে দিয়েন।’ যাত্রী বললেন, ‘তাহলে মিটার দেন।’ চার-পাঁচবার বলার পরও তিনি মিটার দিলেন না। তারপর বললেন, মিটার নষ্ট। চলে না।
যাত্রী: তাহলে কী করে বাড়ায়ে দিব?
চালক: আপনি যান না ওখানে?
গন্তব্যে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে যাত্রী সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশার দিকে এগিয়ে গেলেন।
যাত্রী: ভাই, আমার সিএনজিটার মিটার হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। দেখে দেন না।
দ্বিতীয় চালক এসে মিটার দেখতে চাইলে প্রথম জন বাধা দেন। তারপর মিটার দেখতে দিলে দ্বিতীয় চালক পরীক্ষা করে দেখেন সব ঠিকঠাক আছে। তারপর তাকে ৩০ টাকা দিয়ে রওনা দিলেন যাত্রী।
গন্তব্য কারওয়ান বাজার থেকে টিএসসি। ভাড়া ১০০ টাকা। শুক্রবার।
যাত্রী: কেন, বাবা? রোদ-ঝড়-বৃষ্টি-শীত-জ্যাম কিছুই নাই, তাইলে ১০০ টাকা ক্যান?
চালক: আজ রাস্তায় সিএনজি কম নামসে।
যাত্রী: কম নামসে তাতে আপনার কী?
চালক: যে ভাড়া চাইব সেটাতে গেলে যান নাইলে খাড়ায়ে থাহেন, চাচি।
তাড়া ছিল বলে উঠে বসেন যাত্রী। টিএসসি পৌঁছাতে ভাড়া উঠল ২২ টাকা। মেজাজ খারাপ করে ১০০ টাকার নোট বের করে নেমে পড়তেই
চালক: চাচি, টাকা ফেরত নেবেন না?
যাত্রী: দিবা নাকি?
চালক ১০ টাকার নোট দিয়ে বলে, এহানে আসলকার ভাড়া ১০০ হয় না।
এবার তাঁকে কী করা উচিত? জরুরি কাজ ভুলে যাত্রী এর একটা হেস্তনেস্ত করবেন বলে ঠিক করলেন। পাশের এক মিশুকচালককে ডেকে বললেন, ভাই, কারওয়ান বাজার থেকে আসছি। ৫০০ টাকা দিসি। ১০ টাকা ফেরত দেয়। এ কেমন হিসাব?
মিশুকচালক: ক্যা রে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এগোলান কর্যা পার পাইবি? দে, টাকা দিয়া দে।
সিএনজিচালক: আরে উনি ১০০ দিসেন, আমি ১০ টাকা ফেরত দিলাম।
এই বলে একটু আগে পাওয়া ১০০ টাকার নোটটা দেখালেন।
মিশুকচালক: কারওয়ান বাজার থন ১০০ টাকা ভাড়ানি? তোগো লাইগা আমরা গালিগেলাজ শুনি। (গালি দিয়ে) ৫০ ট্যাকা দিয়া বিদায় হ।
উদিসা ইসলাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৩, ২০১০
Leave a Reply