দুনিয়ার বিভিন্ন কঠিন বিষয় বোঝা গেলেও মানুষের মনের কথা বোঝা বিরাট ঝামেলার কাজ। কোনোভাবেই তাদের সন্তুষ্ট করা যায় না। দেশে সামান্য একটু গরম পড়েছে, আর তাতেই সবার একেবারে মাথা গরম হয়ে গেছে। ‘গরমে মারা যাচ্ছি, ভাই! উফ! এত গরম কেন? দূর, ভালোই লাগে না’—ইদানীং এই ধরনের কথা ঘরে ঘরে শোনা যাচ্ছে। আরে ভাই, গরমকালে গরম লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক। গরমকালে আকাশ থেকে বরফের টুকরা খসে খসে পড়ছে আর মানুষ নিশ্চিন্তে ক্যাচ ধরছে, এটা কোনো দিন সম্ভব? ভাব দেখে মনে হচ্ছে, দেশের মানুুষ গরম সহ্যই করতে পারে না। অথচ মোড়ের দোকানের ডালপুরি, কিংবা টং দোকানের চা একটু গরম না হলেই সবাই গলার রগটগ ফুলিয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়। গরম যদি ভালো না-ই লাগে তাহলে ডালপুরি, চা এগুলো গরম না হলে মানুষ কেন যে খেপে যায় তা নিয়ে গবেষণা করা উচিত। তবে গরমকাল যে কত উপকারী তা নিয়ে নতুন করে গবেষণার কোনোই প্রয়োজন নেই। গরমে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দেশের মোমবাতি শিল্পের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। সবাই হাতপাখা দিয়ে নিজেদের ক্রমাগত বাতাস করতে থাকে। এতে হাতের ব্যায়াম হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে করে জিমে না গিয়েই অনেকের মাসল হলিউডের নায়কদের মতো হয়ে গেছে। তা ছাড়া হাতপাখা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যও বটে। এর মাধ্যমে মানুষ কম খরচায় ঐতিহ্যের চর্চাটা ধরে রেখেছে। তা ছাড়া, প্রচণ্ড গরমে বারবার গোসল করায় সবাই বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে। রোগ-জীবাণু শরীরের বর্ডারের ধারে-কাছেও আসতে পারছে না। গরমের কারণে ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে বেল, তরমুজ, ডাব, আইসক্রিম, জুস ইত্যাদি; যা দেশের অর্থনৈতিক খাতে নীরব বিপ্লবের সৃষ্টি করেছে। এত এত উপকার করার পরও মানুষ কেন গরম সহ্য করতে পারছে না তা বোঝা সত্যিই কঠিন। তবে এ কঠিন কাজটাই সরকারকে করতে হবে। মানুষের মনের এই দুমুখো চিন্তাধারার ব্যাখ্যা করতে না পারলে তো জাতির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। আশা করি, সরকার শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। ব্যবস্থা নেওয়াটাই সরকারের অন্যতম কাজ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৯, ২০১০
Leave a Reply