মুদি দোকানদারসহ অন্য দোকানিরা আমাদের কাছে টাকা পান বলে হালখাতার দাওয়াতপত্র পাঠান। তবে এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁরা আমাদের কাছে টাকা পান বটে, কিন্তু কখনোই হালখাতার দাওয়াতপত্র পাঠান না। তাঁরা যদি দাওয়াতপত্র পাঠাতেন তাহলে সেটা কেমন হতো, তা-ই জানাচ্ছেন ইকবাল খন্দকার
গ্যাস অফিসের দাওয়াতপত্র
প্রিয় সুধী,
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানুন। আমাদের গ্যাসের রান্না খেয়ে ভালো ও তরতাজা আছেন আশা করি। এবার একটা সুসংবাদ দিই। আপনার জন্য এটা দুঃসংবাদ হবে কি না জানি না। যা-ই হোক, সংবাদটা হচ্ছে: আসছে পয়লা বৈশাখে আমাদের নিজস্ব কার্যালয়ে শুভ হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আর হালখাতা মানে তো বোঝেনই, মানে লেনদেনের বিষয়। আপনি সবান্ধব আমন্ত্রিত। আর সবান্ধব আমন্ত্রিত এই জন্য যে, আপনার কাছে আমাদের ম্যালা পাওনা। এত টাকা নিয়ে একা একা এলে ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়তে পারেন। তাহলে এই কথাই থাকল। যথাসময়ে হাজির থাকবেন। সময় নিয়ে ঘাপলা কাম্য নয়।
শুভেচ্ছান্তে
গ্যাস খান
আয়কর অফিসের দাওয়াতপত্র
জনাব,
দিন বদলালেও বদলায়নি নববর্ষ আগমনের সিস্টেম, যথারীতি আগামী ১৪ এপ্রিল পালিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এই দিনে অন্য সবার মতো আমরাও আনন্দ করতে চাই। আমাদের এই আনন্দ পরিপূর্ণতা পাবে আপনি যদি পুরোনো ট্যাক্সগুলো পাই পাই পরিশোধ করেন। ওই দিন সরকারি ছুটি থাকলেও আপনার সৌজন্যে আমরা কিছু বিভাগ খোলা রাখব। আপনি আসবেন আর টাকা দিয়ে চলে যাবেন। টাকা দেওয়ার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না, এই নিশ্চয়তা দিয়ে রাখছি অগ্রিম। আপনার জন্য থাকবে বসার সুব্যবস্থা। যেখানে বসে আপনি টাকা গুনবেন আর দেবেন। তাহলে আমরা আপনার আশায় থাকলাম। আর না এলে সমস্যা নেই, পুলিশ আপনার বাড়ি চেনে।
শুভেচ্ছান্তে
ট্যাক্স মিয়া
ডিশ অফিসের দাওয়াতপত্র
মহোদয়,
আমাদের লাইনের কল্যাণে বিনোদন পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চয়ই অনেক মৌজ-মাস্তিতে আছেন। কিন্তু মৌজ-মাস্তি তো
একতরফাভাবে হলে চলবে না। আমাদের দিকটাও একটু দেখতে হবে। আমাদের লোকজন মাসে দু-একবার আপনার বাড়িতে যায়, আপনাকে সালাম-আদাব দেওয়ার জন্য। কিন্তু আপনি কোনো দিনই বাড়িতে থাকেন না, আর থাকবেন বলেও মনে হয় না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আগামী পয়লা বৈশাখে আপনাকে দাওয়াত করছি। দাওয়াতের কথা শুনে আপনি যে দু-এক বেলা উপোস থেকে পেট খালি করে খেতে আসবেন, তা কিন্তু নয়। বরং যে কয় মাসের বিল বাকি সব পরিশোধ করবেন। নইলে পরবর্তী সিন্ধান্ত আমরা খুব দ্রুতই নিয়ে ফেলব।
শুভেচ্ছান্তে
ডিশ আখতার
টিঅ্যান্ডটি অফিসের দাওয়াতপত্র
হ্যালো,
নববর্ষ সব সময় শুভই হয়, এবারেরটাও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তাই ‘শুভ নববর্ষ’ বলেই ফেললাম। অনেক দিন আপনার সঙ্গে আমাদের সরাসরি মোলাকাত হচ্ছে না, যা অত্যন্ত পীড়া দিচ্ছে আমাদের। না, এভাবে আর চলে না, চলতে দেওয়া যায় না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করব। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, আপনার বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাত্ করব। কিন্তু তাতে আপনার চা-বিস্কুট, মিষ্টি বাবদ ম্যালা টাকা খরচ হতে পারে। আমরা তা চাই না, তাই আগামী পয়লা বৈশাখ আপনি এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন। আর এই দিন থেকে যেহেতু নতুন বছর শুরু, তাই পুরোনো সব হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে ফেলা উচিত নয় কি? তবু আপনি যদি উচিত মনে না করেন, তাহলে অলৌকিকভাবে লাইন কাটার ঘটনা ঘটতে পারে।
শুভেচ্ছান্তে
টিঅ্যান্ডটি চৌধুরী
বিদ্যুৎ অফিসের দাওয়াতপত্র
প্রিয় গ্রাহক,
লোডশেডিংয়ের কারণে সামান্য ঘামলেও ভালো আছেন নিশ্চয়। শুভ অগ্রিম নববর্ষ। এবারও যথারীতি ১৪ এপ্রিলেই নববর্ষ শুরু হচ্ছে। এদিন আমরা আপনার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেছি। ডায়াবেটিসের কথা ভেবে মিষ্টি হয়তো খাওয়াব না, তবে চা অবশ্যই খাওয়াব। তাই আপনি নির্দিষ্ট সময়ে চলে আসবেন। আসার সময় দয়া করে পুরোনো বিলের কাগজগুলোতে একটু দৃষ্টি বুলিয়ে আসবেন। দৃষ্টি বুলালেই অনুমান করতে পারবেন আসার জন্য আপনাকে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনাকে পত্র মারফত দাওয়াত দেওয়ার জন্য দুঃখিত। কী করব, লোডশেডিংয়ের কারণে পাবলিক খ্যাপা। আমাদের লোকজনকে দেখলেই দৌড়ানি দেয়।
শুভেচ্ছান্তে, বিদ্যুৎ বাবু
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১২, ২০১০
Leave a Reply