‘আমাকে এখন যেতে হবে।’ বলল লেখক পেত্রোভের পরিচিত এক মেয়ে। একসঙ্গে সিনেমা দেখার পর সে এসেছে লেখকের ঘরে।
‘কফির জন্য ধন্যবাদ।’
‘নাকি থেকে যাবে?’
‘এটা কি ভূমিকা?’
‘ভূমিকা নয়, আস্ত এক উপন্যাস।’ চালাকি করার চেষ্টা করলেন পেত্রোভ।
‘লেখকদের পরিভাষা বড় একটা বুঝি না আমি।’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল নিনা, ‘তারচেয়ে সোজাসুজি বলো, কবে আমরা বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে যাব?’
‘শোনো, নিনা,’ কী উত্তর দেবেন লেখক পেত্রোভ, ঠিক বুঝে উঠে পারছিলেন না, তবু বুদ্ধি করে বললেন, ‘পাঠকের দরবারে উপন্যাস পেশ করার আগে রাফ কপি লিখতে হয়।’
‘ঠিক আছে, রাফ কপিই* লেখা হবে।’ সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ল নিনা, ‘কাল থেকেই কোনো আফ্রিকানের সঙ্গে প্রেম শুরু করে দেব।’
টেবিল থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ তুলে নিয়ে সে হাঁটা ধরল দরজার দিকে।
‘দাঁড়াও!’ প্রায় চিৎকার করে বললেন লেখক, ‘শুরুতেই আমাকে সূচিপত্র দেখাচ্ছ কেন?’
দরজার পাশে দাঁড়াল নিনা। পেত্রোভ তার কাছে গিয়ে মানভঞ্জনের চেষ্টা করলেন।
‘তুমি নিশ্চয়ই জানো, বই কেনার আগে দেখে নিতে হয় প্রচ্ছদের নিচে কী আছে।’
তাঁর হাত ‘পৃষ্ঠা ওল্টানোর’ চেষ্টা করল।
শোনা গেল চড়ের শব্দ। হাত সরিয়ে নিলেন পেত্রোভ।
‘প্রচ্ছদের নিচে কী আছে, তা দেখার মানেই বইটা ভালো করে পড়ে ফেলা নয়!’ মর্মভেদী দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাল নিনা, ‘তার চেয়ে বড় কথা, কথা হচ্ছিল রাফ কপি বিষয়ে।’
হাত রাখল সে দরজার হাতলে, ‘আমি চললাম আফ্রিকান ছেলে খুঁজতে।’
‘একটু দাঁড়াও,’ তিক্তস্বরে বললেন পেত্রোভ, ‘আমি বলেছি শুধু রাফ কপির কথা, আর অমনি তুমি নিজেকে কার্বন পেপারের নিচে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছ।’
‘তুমি অমন করে কথা বললে ব্যস্ত হয়ে তো পড়বই।’ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল নিনা, ‘আমার আর কিচ্ছু বলার নেই।’ কান্নাভেজা চোখে সে তাকাল পেত্রোভের দিকে।
‘কালই যাব বিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে।’ হার মেনে নিলেন পেত্রোভ, ‘শুধু কেঁদো না এখন।’
নিনা আশ্বস্ত হলো।
‘এই তো লক্ষ্মী মেয়ে।’ পেত্রোভ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, ‘এখন কি দেখতে পারি, কী আছে প্রচ্ছদের নিচে?’
‘কী আছে, তা তো সবাই জানে,’ মুচকি হেসে বলল নিনা, ‘আছে শিরোনাম লেখা পৃষ্ঠা।’
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিনা বলল, ‘এখন বুঝলাম, কী করে উপন্যাস লেখা হয়।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন লেখক পেত্রোভ, ‘আর আমি বুঝলাম, বই কী করে বাঁধাই হয়।’
* রুশ ভাষায় ‘রাফ কপি’ বর্ণিত হয় ‘কালো কপি’ হিসেবে।
ভাসিলি দেনিসভ-মেলনিকভ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১২, ২০১০
Leave a Reply