পরীক্ষার খাতায় আমরা সংক্ষিপ্ত উত্তরের পাশাপাশি বিস্তারিত উত্তর দিয়ে অভ্যস্ত হলেও এমনিতে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর সব সময়ই সংক্ষিপ্ত আকারে দিই। এই উত্তরগুলো যদি সংক্ষিপ্ত আকারে না দিয়ে বিস্তারিত দেওয়া হয়, তাহলে কেমন হতে পারে, আসুন, দেখি। জানাচ্ছেন লরা খন্দকার
প্রশ্ন: আসতে পারি? (যখন কেউ ঘরে ঢোকার অনুমতি চায়)
সংক্ষিপ্ত উত্তর: আসুন।
বিস্তারিত উত্তর: দেখুন, মানুষ পারে না, পৃথিবীতে এমন কোনো কাজ নেই। আপনি যে একজন মানুষ, এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। অতএব আপনিও যেকোনো কাজ করতে পারবেন, এটাই স্বাভাবিক। অথচ আপনি জানতে চাইছেন আসতে পারেন কি না। অবশ্যই আসতে পারেন। আপনাকে পারতেই হবে। এই সামান্য একটা কাজ যদি না পারেন তাহলে কঠিন কাজগুলো কীভাবে পারবেন, বলুন। আসুন, আসুন।
প্রশ্ন: কেমন আছেন? (কুশলবিনিময়ের ক্ষেত্রে)
সংক্ষিপ্ত উত্তর: ভালো।
বিস্তারিত উত্তর: আপনার আমার বেঁচে থাকার জন্য শরীর যেমন দরকারি, মনও তেমন দরকারি। ভালো থাকতে হলে শরীর-মন দুটোই ভালো রাখতে হবে। আমার মন ভালো আছে কি না সেটা বলতে পারবে মনোরোগ চিকিৎসক, শরীর ভালো আছে কি না সেটা বলতে পারবে ডাক্তার। আমি যেহেতু দুটোর একটাও নই, অতএব আমার পক্ষে বলা সম্ভব না, আমি কেমন আছি। তবু আপনি যেহেতু জিজ্ঞেস করেছেন, অতএব অনুমানেই বলে দিচ্ছি, ভালো আছি।
প্রশ্ন: আপনি এখন কই? (ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই করা হয় এই প্রশ্নটা)
সংক্ষিপ্ত উত্তর: আমি এখন শাহবাগ। (বা অন্য যেকোনো জায়গায়)
বিস্তারিত উত্তর: দেখো মিয়া, দুনিয়ায় যেই পরিমাণ মিথ্যা কথা হয়, তার সাড়ে নিরানব্বই ভাগই হয়ে থাকে মোবাইল ফোনে। পাওনাদার ফোন করলে কয়, সে এখন কক্সবাজারে আছে। অথচ আছে কিন্তু কারওয়ান বাজারে। তবে এই ক্যাটাগরির মিথ্যাবাদী আমি না। তুমি জানতে চাইছো আমি কই। আমি চুল পরিমাণ মিথ্যা না বইলা খাঁটি সত্য কথাটা বলতেছি। জি, আমি এখন শাহবাগ ওভারব্রিজের ওপর দাঁড়ানো।
প্রশ্ন: একটা প্রশ্ন করতে পারি? (বিশেষ কিছু জানতে চাওয়ার ক্ষেত্রে)
সংক্ষিপ্ত উত্তর: করুন।
বিস্তারিত উত্তর: প্রশ্ন সাধারণত শিক্ষকেরা করে থাকেন। আর সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় পরীক্ষার হলে গেলে। আহ্, এক একটা প্রশ্নপত্রে কতগুলো প্রশ্ন। ন্যূনতম ১০টা। সব সময় শিক্ষকেরা প্রশ্ন করেন বলে যে আপনি করতে পারবেন না, তা কিন্তু নয়। এ ছাড়া এ ধরনের কোনো আইনও হয়নি। আপনি শিক্ষক না হয়েও অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারবেন। এবং সেই অনুমতি এখন এই মুহূর্তে আমি আপনাকে দিচ্ছি। জি, প্রশ্ন করুন।
প্রশ্ন: মামা, কই যাইবেন? (পথচারীর প্রতি রিকশাওয়ালার প্রশ্ন)
সংক্ষিপ্ত উত্তর: নয়াপল্টন বা অন্য যেকোনো জায়গায়।
বিস্তারিত উত্তর: রিকশাওয়ালাদের ক্ষমতার একটা সীমা আছে। তারা ইচ্ছে করলেই সব যাত্রীর কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে যেতে পারে না। যেমন ধরো, আমি যদি এখন বলি আমি নয়াদিল্লি যাব, তুমি কি আমাকে নিয়ে যেতে পারবে? পারবে না। অতএব ফটাস করে কাউকে ‘কই যাইবেন’ প্রশ্ন করে বসা ঠিক না। তবু যেহেতু করেই ফেলেছ, আর আমিও যেহেতু আপাতত নয়াদিল্লি যাচ্ছি না, তাই বলেই ফেলি, আমি নয়াপল্টন যাব।
প্রশ্ন: আপনি কী করেন? (কেউ কারও পেশা সম্পর্কে জানতে চায় এভাবে)
সংক্ষিপ্ত উত্তর: চাকরি বা অন্য কিছু।
বিস্তারিত উত্তর: একজন মানুষকে যে কত রকমের কাজ করতে হয়, কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার পর থেকে সেই যে শুরু হয় কাজ, একেবারে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমাকেও নানা ধরনের কাজ করতে হয়। আমি নির্দিষ্ট কোনো কাজ করি না। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি আমার পেশা সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে বলব, আমি একটা চাকরি করছি। প্রাইভেট কোম্পানিতে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৫, ২০১০
Leave a Reply