সৃষ্টির শুরু থেকেই দুর্বলেরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে। সবলেরা দাঁত কেলিয়ে হাসবে, আর দুর্বলের প্রতি অত্যাচার-নিপীড়নের মেল ট্রেন ছোটাবে, এটাই এই নিষ্ঠুর জগতের নিয়ম। এই ছবিটাই দেখুন। গত সপ্তাহে ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ছবিটি। দুটো বাস দুই দিক থেকে চাপ দিয়ে বেবিট্যাক্সিটাকে একেবারে চ্যাপ্টা করে ফেলছে। কী ভয়ংকর ব্যাপার! অথচ ট্যাক্সিটার পেছনেই বড় করে লেখা আছে, ‘আমি ছোট, আমাকে মারবেন না’। এই দেশে লেখাপড়ার অবস্থা যে কত্ত খারাপ, তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। দুনিয়ার পাঠ্যবই মুখস্থ করে মানুষ মুখে ফেনা তুলে ফেলছে, আর ট্যাক্সিটার এই লেখাটা কেউ পড়লই না। এত করুণভাবে, আবেগ দিয়ে অনুরোধ লিখেও সাম্রাজ্যবাদী বাস দুটোর নিদারুণ আগ্রাসন থেকে রেহাই পেল না এই নিরীহ গাড়িটি। এ কথা কাউকে বলা যায়? আর ছবিটা দেখলেই মনে পড়ে বার্গারের ভেতরে অবস্থিত কাবাবের কথা। আহা রে, সারাটা জীবন কাবাবটাকে দুটো বনরুটির চাপ মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হয়। ট্যাক্সিটার অবস্থাও একই রকম। কিন্তু বাস দুটোর কি কোনো মায়াদয়া নেই? এতটুকু একটা ট্যাক্সিকে তারা এভাবে চাপ দিতে পারল? আ রে ভাই, তোমরা বাস হয়েছ বলে তো আর সবার মাথা কিনে নাওনি। ছোটদের একটু জায়গা করে না দিলে তারা তো বড় হওয়ার সুযোগই পাবে না। শুধু সাইজে বড় হলেই হয় না, মনটাকেও একটু বড় করতে শেখো। আর বেবিট্যাক্সিটাও এত বেয়াদব হয়েছে যে কী আর বলব। তুই ব্যাটা ছোট, তুই বড়দের মাঝখানে যাস কেন? ছোট গাড়ি, ছোটদের সঙ্গে খেলবি, তা না! উনি গেছেন বড়দের সঙ্গে লাগতে। আ রে বেকুব, এতটুকু শরীর নিয়ে তুই ওই বড় বড় বাসের সঙ্গে পারবি? সামান্য একটা সিএনজিচালিত বেবিট্যাক্সি হয়ে কেন ডিজেলচালিত বাসের মাঝখানে যাস? বাসের পেছনেই তো বড় করে লেখা আছে ‘১০০ হাত দূরে থাকুন’। ওটা তো পড়িসনি। পড়াশোনার দিকে তো একদম মন নেই। খালি বড়দের পিছে পিছে ঘুরঘুর করে! কতবার বলেছি, বড়দের মাঝখানে যাবি না, ওরা বড়, ওদের রাগ বেশি। কখন কী করে তার ঠিক নেই। তা তো শুনলি না, এখন চ্যাপ্টা হতে কেমন লাগে? এ জন্যই মুরব্বিদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। মুরব্বিরা যা বলে, বুদ্ধিমানেরা সে-মতোই চলে।
শাহরীয়ার শরীফ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৯, ২০১০
Leave a Reply