স্বর্গ ও নরকের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ হবে। তাই খুব উত্তেজনা। দুই পক্ষই যার যার দল নিয়ে খুব আশাবাদী। ঈশ্বর অবাক হয়ে শয়তানকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি জয়ের আশা করছ কীভাবে? সব ভালো খেলোয়াড় তো স্বর্গে আছেন।’ শয়তান মুচকি হেসে জবাব দিল, ‘তাতে সমস্যা নেই। সব আম্পায়ার তো আমার ওপাশে।’
এতটা বোধ হয় সত্যি নয়। দু-চারজন আম্পায়ারের ভাগ্যে নিশ্চয়ই স্বর্গ জুটবে। দু-একজন পুণ্যবান আম্পায়ার কি দুনিয়ায় নেই? তবে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সদ্য শেষ হওয়া সিরিজের কোনো আম্পায়ারের নাম পুণ্যবানের তালিকায় দেখলে সাকিবেরা চটে যেতে পারেন।
সাকিবেরা চটবেন কি না সেটা পরের কথা। আপাতত সমর্থকদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, এই আম্পায়ারদের স্বর্গ-নরক বা কিছু একটা প্রাপ্তি দ্রুত হলেই সবাই স্বস্তি পান। পত্রিকা অফিসে ফোন করে এই সিরিজের আম্পায়ারদের শাপশাপান্ত তো চলছেই। সেই সঙ্গে চলছে অবধারিত প্রশ্ন, ‘ভাই, আম্পায়াররা এমন করে বাংলাদেশের বিপক্ষে কাজ করল কেন?’
এ কথাটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। আসলে বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়ারিং হয়েছে, নাকি ইংল্যান্ডের পক্ষে? ইংল্যান্ডকে সমূহ বিপদ থেকে বাঁচাতে আম্পায়ারদের এমন ‘খেলোয়াড়’ বনে যাওয়াটা নিতান্ত নতুন কিছু নয়। এসব ক্ষেত্রে আইসিসিও সাধারণত নীরব ঋষির ভূমিকা পালন করে।
আর এসব দেখেই একবার চটেছিল খোদ ইংল্যান্ডেরই একটা পত্রিকা। তারা ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জেতানোর কিছু পথ বাতলে দিয়েছিল। সে জন্য নতুন কিছু আইন প্রণয়ন করতে হতো—
আইন-১: অস্ট্রেলিয়া যদি ‘x’ সংখ্যক রান করে, তাহলে ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য ‘x/২+১’ রান করতে হবে। অর্থাৎ ১২২ রানের জবাবে ৬২ রান করলেই জয়। আর ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময় ওভার-সংখ্যা অর্ধেক করে দেওয়া হবে। তার পরও অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে ইংল্যান্ডকে ‘মনস্তাত্ত্বিক বিজয়ী’ ঘোষণা করা হবে।
আইন-২: ইংল্যান্ড যখন ফিল্ডিং করবে, কোনো ফিল্ডার বল ছোঁয়ামাত্র বল ‘ডেড’ হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হবে। ব্যাটসম্যানরা আর রান করতে পারবে না।
আইন-৩: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতি তিনটি নিশ্চিত আবেদনে একটির বেশি আউট দেওয়া চলবে না। বিপক্ষ ব্যাট করার সময় নিয়মটা উল্টে যাবে। আবেদন ছাড়াও দু-চারটে আউট দেওয়া যেতে পারে।
এসব নিয়ম চালু করার উপায় থাকলে ক্রিকেটের জনকেরা নিশ্চয়ই সে কাজ করতে ভুল করতেন না। আম্পায়ারের জোরে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঠেলেঠুলে ম্যাচ জেতা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তো আর ওই কৌশল চলে না!
সামনেই আবার অ্যাশেজ আসছে। আরও একবার ইংলিশ ক্রিকেটে ‘ছাই’ দেখার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার হাতে ইংল্যান্ডকে এমন নাকাল হতে দেখে বড় বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন ইংল্যান্ডের সাংবাদিকেরা।
শেষমেশ নিচের প্রশ্নোত্তরগুলো ছেপে দিয়েছিল আরেকটি ইংলিশ পত্রিকা—
প্রশ্ন: একজন ইংলিশ ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ আশাবাদী কাজ কী?
উত্তর: সানস্ক্রিন মাখা। কারণ, রোদ মুখে লাগার আগেই তাঁরা ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন।
প্রশ্ন: ম্যাকগ্রা ইংল্যান্ডে জন্মালে কী হতেন?
উত্তর: ব্যাটিং অলরাউন্ডার। মনে রাখবেন, ম্যাকগ্রার ব্যাটিং গড় টেস্টে ৭.৩৬ ও ওয়ানডেতে ৩.৮৩!
প্রশ্ন: ইংলিশ ক্রিকেটারের হ্যাটট্রিক মানে কী?
উত্তর: ইংলিশ বোলারদের ডিকশনারিতে এখন আর ‘হ্যাটট্রিক’ বলে কিছু নেই। ব্যাটসম্যানদের কেউ পর পর তিন বলে রান পেলে সেটাই হ্যাটট্রিক।
প্রশ্ন: কোনো ইংলিশ ক্রিকেটারের নামের পাশে ১০০ রান দেখলে কী বুঝবেন?
উত্তর: সে অবশ্যই একজন বোলার।
প্রশ্ন: নাসের হুসেন, মার্ক রামপ্রকাশ, গ্রায়েম হিক, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, কেভিন পিটারসেনরা দলের বাকিদের চেয়ে কেন এগিয়ে থাকেন?
উত্তর: অন্তত এটুকু বলতে পারেন যে আমরা তো আসলে ইংলিশ নই।
প্রশ্ন: একজন ইংলিশ ক্রিকেটার কখন নিশ্চিত করে বলতে পারেন, এই ওভারে উইকেট পড়বেই?
উত্তর: যখন তাঁর হাতে ব্যাট থাকে।
প্রশ্ন: মাইকেল জ্যাকসন আর অ্যালেক স্টুয়ার্টের (সাবেক ইংলিশ উইকেটকিপার) মধ্যে মিলটা কী?
উত্তর: দুজনই হাতে দস্তানা পরতেন। যে দস্তানার কোনো ব্যবহার কেউ কখনো দেখেনি।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৯, ২০১০
Leave a Reply