কদিন পরই স্বাধীনতা দিবস। ভাবতেই ভালো লাগছে। কারণ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন জাতি। আমরা যেখানে-সেখানে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারি। ইচ্ছা হলেই পিচিক করে থুতু, পানের পিক ফেলতে পারি। কেউ আমাদের বাধা দেওয়ার কথা চিন্তাও করে না। অথচ এই পৃথিবীতেই কিছু দেশে যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা যায় না। কেউ ফেললেও তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বা জরিমানা করে। কী ভয়ংকর ব্যাপার! নিজের দেশে যদি শান্তিমতো থুতু ফেলতে না পারি, পানের লাল পিক ফেলে দেয়ালটাকে শৈল্পিক রূপই দিতে না পারি, তাহলে তো পরাধীনই রয়ে গেলাম। অথচ আমাদের দেশে চালক ভাইয়েরাও একেবারে স্বাধীনভাবে গাড়ি চালায়। কোনো রকম সিগন্যাল বা বিধিনিষেধ তাদের আটকাতে পারে না। সবাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, এ দেশ তোমার-আমার। আর তাই যে যেভাবে পারছে দেশের জায়গা-জমি, নদী-নালা, রাস্তা, ফুটপাত দখল করে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। কবির ভাষায় যাকে বলে, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা…! আহা। অন্য দেশে কারও হাতে-পায়ে ধরলেও এসব করতে পারবেন না। সেখানে পয়সা দিয়ে গাড়ি কিনে ট্রাফিকের কথামতো চলতে হয়। আরে, আমার গাড়ি আমি চালাব, যেভাবে খুশি সেভাবে চালাব, তাতে ট্রাফিকের কী? এ জন্যই তো ওই সব দেশের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষ বেশি সুখী। অধিক সুখের চোটে ইচ্ছা হলেই কিছু ছাত্রসংগঠন নিজেরা নিজেরা মারামারি করে। মাঝেমধ্যে বৈচিত্র্য আনতে শিক্ষকদেরও পেটায় আর বলে, স্যার, আমরাও আপনাকে খুব ভালোবাসি! অথচ, অন্য দেশগুলোতে এমপি-মন্ত্রীদেরও কোনো স্বাধীনতা নেই। নিজের শত্রুর সঙ্গেও সব সময় হাসি হাসি মুখ করে তোতাপাখির মতো ভালো ভালো কথা বলতে হয়, এমনকি হাতও মেলাতে হয়। তবে আমাদের এমপি-মন্ত্রীরা এসবের ধার ধারে না। তারা একদম স্বাধীন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে তারা যেকোনো জায়গায় স্বাধীনভাবে কথা বলে। গালাগাল, ঝগড়া কোনোটাই তারা বাদ দেয় না। দেবেই বা কেন? এটা তো কোনো ব্যাপারই না। তাদের আছে আজীবন স্বাধীনতা। মেয়াদ নিয়ে কোনো ঝামেলাই নেই। অতএব, ভেবে দেখুন, আমর কত্ত স্বাধীন। তবে তার পরও মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমরা কি এই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? হু গিভ?
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২২, ২০১০
Leave a Reply