মিথ্যা বলব না, তোমাকে আমার তেমন করে খুব একটা ভালো লাগেনি কখনোই। সেই প্রথম যখন তোমার সঙ্গে পরিচয়, তখন ভালো বা মন্দ লাগার কোনো প্রশ্নই ওঠেনি, কারণ পুরো কাজটা হয়েছে সামাজিক-পারিবারিক রীতি অনুসারে, মা-বাবার ইচ্ছায়। আমি কিছু বোঝার আগেই দেখলাম আমার পুরো জীবনের সঙ্গে তোমাকে বেঁধে দিচ্ছে সবাই। কী আর করা!!! ভালো লাগুক আর না-ই লাগুক, তোমাকে নিয়েই যে আমার বাকিটা জীবন কাটাতে হবে, এটা বুঝতে পারলাম, যখন বয়সটা আরও একটু বাড়ল। বয়সে ছোটদের যখন দেখতাম নিশ্চিন্ত মনে আনন্দ করে বেড়াচ্ছে, তোমার প্রতি আমার বিরক্তির শুরু যেন তখন থেকেই। কারণ সবার যখন আনন্দ করার সময়, আমাকে তখন দেখা যেত তোমায় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। কতটা যে অনিচ্ছায় তোমাকে সময় দিয়েছি তখন, তুমি নিজেও হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছ। কত যে কেঁদেছি, শুধু তোমার কাছ থেকে একটি দিন মুক্তি পাওয়ার জন্য। হয়তো বা সৃষ্টিকর্তার মনেও কখনো কখনো দয়ার আবির্ভাব ঘটত, পেয়ে যেতাম সাময়িক একটা বিরতি। কিন্তু পরক্ষণেই তোমার সেই পোড়ামুখ আবার হাজির হতো। আজ, আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের খানিকটা বিরতিতে এসে যখন পেছন ফিরে দেখি, তখন এটা ভেবে অবাক হই যে তুমি কখনোই আমাকে ছেড়ে যাওনি বা যেতেও চাওনি। আমার এত বিদ্রূপ-গঞ্জনা তুমি মুখবুজে নীরবে সয়ে গেছ। আমার জীবনে যা কিঞ্চিত্ প্রাপ্তি, তার সবটুকুই তোমার জন্য পাওয়া, তোমার কাছ থেকেই পাওয়া। তোমার অনেক নিয়মনীতি আমার বিরুদ্ধে থাকলেও, আসলে পুরোটাই ছিল আমাকে ঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য। আজ বুঝি, বাবা-মা সেদিন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন আমাকে স্কুলে ভর্তি করে, ‘লেখা-পড়ার’ সঙ্গে পরিচিত করে। হে ‘পড়া-শোনা’, তোমাকে হয়তো ভালোবাসিনি কখনোই, ভবিষ্যতে বাসব, এমন আশাও খুব কম; তবু আমার আজকের এ লেখাটা শুধু তোমার জন্য।
নাজিয়া হায়দার
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৫, ২০১০
Leave a Reply