প্রধান শিক্ষক ছাত্রদিগকে হিপোপটেমাস জন্তুর বিষয় বুঝাইবার সময় বলিলেন, ‘হিপোপটেমাস কেমন কুৎসিত জন্তু তাহা যদি ভালো মতো বুঝিতে চাও, তবে আমার মুখের দিকে তাকাও।’
এক আফিংচি ছেলে কোলে লইয়া মেলায় গিয়াছিল; অনেকক্ষণ নানা দৃশ্য দেখার পর তাহার মনে হইল ছেলে কোথায় হারাইয়া গিয়াছে। বেচারা ছেলে খুঁজিয়া হয়রান। শেষে থানায় সংবাদ দিয়া বাড়ি ফিরিল। ঘরে প্রবেশের সময় কপাটের আঘাত লাগায় তাহার কোলের ছেলে কাঁদিয়া উঠিল। তখন সে ছেলের গালে চড় মারিয়া বলিল—‘কমবখত্! আগে কাঁদিসনি কেন? তাহলে আমার এত হয়রান হয়ে থানায় খবর দিতে হতো না।’
হরিশবাবু চাকরের হাতে একটা চিঠি আর পাঁচটা পয়সা দিয়া বলিলেন যে, সে যেন টিকিট কিনিয়া চিঠিতে আঁটিয়া চিঠিখানা ডাকে দেয়। চাকর কিছুক্ষণ পরে আসিয়া হাসিমুখে পয়সা ফেরত দিয়া বলিল,—‘নিন আপনার পয়সা। যেই দেখলুম ডাকবাবু মাথা নিচু করে লেখাপড়া করছেন, আমি অমনি চুপি চুপি চিঠিখানা ডাকবাক্সে ফেলেই, দিয়েছি দৌড়। দেখুন তো কী বুদ্ধি করে বিনি পয়সায় আপনার চিঠি ডাকে দিয়ে এলুম, তবু আপনি আমায় বোকা বলেন!’
পাদ্রী সাহেব মিশন স্কুলের ছাত্রদিগকে পাঠ শেষে জিজ্ঞাসা করিলেন—‘ভবিষ্যতে তোমরা কে কী হতে চাও?’ জনৈক ছাত্র বলিল, ‘আমি কৃষক হব।’ পাদ্রী সাহেব সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, ‘বেশ ভালো কথা। তুমি মানবের ক্ষুধা নিবারণের উপায় করবে। লোকের পরম উপকার করবে।’
অপর একজন বলিল,—‘আমি শিক্ষক হব।’ পাদ্রী সাহেব পূর্বাপেক্ষা অধিক সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, —‘এ তো আরও ভালো, তুমি মানবের মানসিক ক্ষুধা নিবারণ করবে। শারীরিক খাদ্যের চেয়ে মানসিক খাদ্যের মূল্য বেশি।’
তৃতীয় ছাত্র বলিল,—‘আমি পাদ্রী হব।’ এবার পাদ্রী সাহেব আনন্দে লাফাইয়া উঠিয়া তাহার পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন—‘বেশ বেশ, তুমি মানবের পরিত্রাণের কারণ হবে। শারীরিক ও মানসিক খাদ্যের চেয়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য আরও শ্রেষ্ঠ। আচ্ছা বাপু! বলো তো তুমি কেন পাদ্রী হতে চাও?’।
ছাত্র বলিল,—‘আমরা গরিব বলে মাংস খেতে পাই না! কিন্তু আপনি আমাদের বাড়ি যে দিন যান, সে দিনই আমার মা মুরগি রেঁধে আপনাকে খাওয়ান।’
একজন শিক্ষক ছাত্রদিগকে ভূগোল পড়াইবার সময় দিক নির্ণয় বুঝাইতেছিলেন। তিনি একটি ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—‘দেখো, তোমার বাম হাত দক্ষিণ দিকে, ডান হাত উত্তরে, মুখ পশ্চিম দিকে, এখন বলো তো তোমার পশ্চাতে কী আছে?’ সে উত্তর দিল, —‘স্কুলে আসবার সময় মা আমার ছেঁড়া পাত্লুনে একটা তালি লাগিয়ে দিয়েছেন, তাই আছে।’]
দুইটি ছোট বালিকা পুতুলের বিবাহ দিতেছিল। তাহাদের একজন বরের মা এবং একজন কনের মা সাজিয়াছিল। বিবাহের মন্ত্র পড়াইবার সময় মোল্লাজি বরের পিতার নাম জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন। বরের মা উত্তরে বলিয়া পাঠাইল যে, বলো উহার মায়ের এখনো বিবাহ হয় নাই।
বেগম রোকেয়া: বেগম রোকেয়া বা রোকেয়া সাখাওয়াত্ হোসেন নামে তিনি বহুল পরিচিত হলেও লিখতেন ‘মিসেস আর এস হোসেন’ নামে, এই নামে তাঁর বইগুলোও বেরিয়েছিল। তিনি ছিলেন বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের পথিকৃত্। তাঁর জন্ম ১৮৮০, মৃত্যু: ১৯৩২। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ মতিচূর, পদ্মরাগ, সুলতানাস ড্রিম।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৮, ২০১০
Leave a Reply