আমার মায়ের একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল—নূরজাহান বেগম
প্রায় ৬২ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে বেগম পত্রিকা। যার সম্পাদক নূরজাহান বেগম। বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষ উপলক্ষে নারী জাগরণের অগ্রদূত এই নারী এবারের ‘রস+আলো’তে তাঁর জীবনের কিছু কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন তৌহিদা শিরোপা
বেগমে পুরুষবেশে কেউ লেখা পাঠালে বুঝতে পারতেন? কী করতেন তখন?
একবার বুঝতে পেরেছিলেন বাবা (মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন) ও সওগাত-এর সাহিত্যিকেরা। তখন থেকে ঠিক করা হয় ছবিসহ লেখা পাঠাতে হবে। তারপরও অনেকে পাঠাতেন।
তখন কোনো মজার ঘটনা ঘটেছিল কি?
নীলু দাশ নামে একজন ছবিসহ লেখা পাঠাতেন। একটি লোককে দিয়ে আমরা বই পাঠিয়েছিলাম তাঁর কাছে। ওই ঠিকানায় গিয়ে তিনি ‘নীলু দাশ’কে খোঁজ করেন। একটি লোক দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘আমিই নীলু দাশ।’ পরে জানা যায় সেটা তাঁর ছদ্মনাম এবং পাঠানো ছবিটি মহিলা আত্মীয়ের। এটা নিয়ে পরে আমরা খুব হাসাহাসি করেছিলাম।
রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সঙ্গে কীভাবে প্রেম হলো?
চোখে চোখে। মনে মনে। তখন তো ঘরে-বাইরে কোথাও কথা বলার তেমন সুযোগ ছিল না। মুখে ভালোবাসি না বলেও প্রেম হয়েছিল।
তাহলে বেগম-এর নামকরণ কি নূরজাহান বেগম থেকে?
আসলে, তখন বোম্বে থেকে মাসিক বেগম ও খাতুন নামে ইংরেজি পত্রিকা বের হতো। বাবা বললেন, বেগম নামটাই ভালো। ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে।
এখন বেগম প্রকাশিত হলে কি এর নাম মিস, মিসেস হতো?
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন কোনো নাম হয়তো রাখা হতো।
দৈনিক বেগম প্রকাশ করার প্রস্তাব দেওয়া হলে কী করতেন?
এটি কখনোই কল্পনা করিনি।
‘দাদাভাই’-এর সঙ্গে মিলিয়ে আপনাকে কেউ অন্য নামে ডাকত?
হ্যাঁ, দিদিভাই বলত। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার ওরা এই নামে ডাকে।
বেগম-এ ছবি ছাপা হওয়ার পর পুরুষদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
তাঁরা পত্রিকার জন্য পাগল ছিলেন। অনেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেন। ঘটক পাঠাতেন ঠিকানা অনুযায়ী। কারও কারও বিয়েও হয়েছিল ছবি ছাপা হওয়ার সূত্র ধরে।
যে কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়—
১৯৩০ সালে সওগাত-এর মহিলা সংখ্যায় কাজী নজরুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল ফজল ওনারা সবাই মিলে মহিলাদের ছবি ছাপালেন। প্রত্যেকে তাঁদের স্ত্রীর ছবিই পাঠিয়ে দিলেন। তখন মায়ের ছবিও ছাপা হয়েছিল। হঠাত্ একদিন বেগম রোকেয়া চায়ের দাওয়াত দেন বাবাকে। বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন। একদিন গেলেন দেখা করতে। বেগম রোকেয়া বাবাকে বলেন, ‘আপনার স্ত্রীর ছবি দেখে একজন বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। সিলেটের সম্ভ্রান্ত পরিবার। আপনিই বলুন, কী করবেন?’ বাবা হতভম্ব হয়ে যান। বেগম রোকেয়া হাসতে থাকেন। এটিই সবচেয়ে মজার ঘটনা, যা মনে পড়লেই হেসে ফেলি।
সংসার-জীবনে কখনো রাগ-অভিমান, মন খারাপ হতো?
উনি বাইরে খেয়ে বাড়ি ফিরলেই আমার মন খারাপ হতো।
আপনার নামের একটি ইতিহাস আছে সেটি কী?
অনেক বিবর্তনের মাধ্যমে আমার এই নাম। ভালো লাগে। গ্রামে বন্ধুরা মালেকা, দাদি ডাকতেন নুরুন নেসা বলে। এরপর সাখাওয়াত মেমোরিয়ালে ভর্তির সময় নাম হয় নুরুন নাহার। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে আমার নানি বেড়াতে এলেন। তাঁর ইচ্ছা, তাঁর নামেই আমার নাম হোক। যাতে সবাই তাঁকে মনে রাখে। তখন থেকে আমি নূরজাহান বেগম।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৮, ২০১০
Leave a Reply