বইমেলা শেষ হয়ে গেছে। শেষ মানে শেষ। একেবারে লগ-আউট। আগামী বছরের আগে আর বইমেলা হবে না। খুবই আফসোসের ব্যাপার। প্রতিবছর বাণিজ্য মেলা নির্ধারিত সময়ের পর আরও সাত দিন বাড়ানো হয়। অথচ বইমেলার মতো মেলার মেয়াদ আজ পর্যন্ত বাড়ানো হয়নি। এর কোনো মানে আছে? এমনিতেই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে দু-একটা দিন কম থাকে। তার পরও মেলা না বাড়িয়ে শেষ করে দেওয়া হয়। ভাবটা এমন যে যত ঝড়-ঝাপটা আসুক, ফেব্রুয়ারিতেই মেলা শেষ করতে হবে! তবে মেলা শেষ হয়ে গেলেও রয়ে গেছে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব। ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে দিতে কোনো কোনো লেখকের এমন অবস্থা হয়েছে যে তাঁরা এখন ঘুমের মধ্যেও অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। শুধু কি ঘুম, অনেকে তো ভুল করে ব্যাংকের ফাঁকা চেকেও অটোগ্রাফ দিয়ে বসে আছেন। পদার্থবিজ্ঞানের গতিজড়তার সূত্রের প্রভাবে তারা বাসায় বসে সাদা কাগজে অটোগ্রাফ দিয়েই যাচ্ছেন। কবে থামবে বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বইমেলায় এসেছেন এমন কিছু ভুলোমনা কবি বিকেলের দিকে মেলায় এসে তাঁদের বইয়ের স্টল না পেয়ে প্রকাশ করছেন তীব্র ক্ষোভ; স্টলের জায়গায় এখন বিরাজ করছে সীমাহীন শূন্যতা। এই শূন্যতা দেখে অনেকে আবার কাগজ-কলম নিয়ে বসে গেছেন কবিতা লিখতে। এখন তাঁরা এই বিকেলের সময়টা কোথায় কাটাবেন? প্রকাশকদের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। বিক্রি না হওয়া বই নিয়ে তাঁরা এখন কী করবেন তা-ই ভেবে পাচ্ছেন না। বসে বসে মাছি মারার জন্য অনেকে ইলেকট্রিক ব্যাট কিনে ফেলেছেন। মেলার বাইরে ঘুরঘুর করা ফেরিওয়ালা সমপ্রদায়ও একেবারে বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের এত দিনের নিশ্চিত কাস্টমার হারিয়ে টিএসসি এলাকায় ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে তরুণ-তরুণী সম্প্রদায়। তারা হাওয়া খাওয়ার জায়গা হিসেবে এত দিন বইমেলাকে ব্যবহার করলেও এখন তারা কোথায় যাবে? আর মেলার নিরাপত্তারক্ষীদের তো পুরো মাথায় হাত। মেলা শেষ—এই চরম সত্যটা তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা। অথচ মেলা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কিছুই ভাবছে না। কোন প্রকাশনী কত টাকার বই আর কত টাকার ক্যাটালগ শেষ করেছে, তা নিয়েই তাদের মাথাব্যথা। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? বইমেলা সূত্রে এত দিন যে মানুষগুলো ব্যস্ত ছিল তাদের কর্মসংস্থানের কোনো পরিকল্পনা কি করছে বাংলা একাডেমী? তাই বই-ক্যাটালগের হিসাব বাদ। কর্তৃপক্ষকে এখন থেকেই এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০১, ২০১০
Leave a Reply