সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী মানে দীর্ঘ ছয় বছর একেকজন ক্যাডেটকে কাটাতে হয় তাদের কলেজ ক্যাম্পাসে। এ সময় ঘটে নানা মজার ঘটনা। তার কিছু এখানে শেয়ার করেছেন কয়েকজন সাবেক ক্যাডেট।
ইংরেজির এক স্যার একবার আমাদের জ্যামিতি পড়িয়েছিলেন। A, B, C যদি কোনো ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দু হয় আর যদি বিন্দু A-তে একটা কুকুর রেখে বিন্দু B-তে কিছু খাবার রাখা যায়, তাহলে কুকুরটা ACB পথে না গিয়ে সরাসরি AB পথেই দৌড়ে খাবারের কাছে যাবে। কারণ কুকুরমাত্রই জানে, ‘ত্রিভুজের দুই বাহুর সমষ্টি তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর।’
সায়েদ উল হাসমত
বরিশাল ক্যাডেট কলেজ (১৯৯২-৯৮)
প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাস ভিজিটে এলে একটা আউটিং ম্যানেজ করার জন্য একবার ক্লাস ইলেভেনের সবাই মিলে তাঁকে বিভিন্নভাবে বেশ তোষামোদ করার একপর্যায়ে তিনি বিরক্তির ভাব নিয়ে বলে উঠলেন, ‘শুনো, আমারে পাম্প দিবা না, আমি হইলাম রেলের চাক্কা, নিরেট লোহার, পাম্প দিয়া কাম হবে না।’
পেছন থেকে একজন বলে উঠল, ‘আমরা তো স্যার পাম্প দিতাছি না, লোহার চাকায় তেল দিতাছি।’ সঙ্গে সঙ্গে আউটিংয়ের অনুমতি মিলে গেল!
ফিজিক্সের মান্নান স্যার সব সময়ই বেশ মজা করতেন, সেটা শাস্তি দেওয়ার সময় হলেও। একদিন কী কারণে যেন তিনি একজনের কান টেনে ধরলেন বেশ জোরে। ব্যথার চোটে ওই ক্যাডেট ‘স্যার-স্যার-স্যার’ বলে চেঁচাতে লাগলে তিনি আরও জোরে কান মলতে মলতে বলতে লাগলেন, কত বড় সাহস, আমারে তুই করে বলে! বল, ছাড়েন, ছাড়েন।
হাসান মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ
(১৯৯২-৯৮)
আমাদের এসএসসি রেজিস্ট্রেশনের সময় একজন ভুল করে বাবার নামের জায়গায় নিজের নাম লিখে ফেলে। স্যার মজা করে বলেন, ‘এই রেজিস্ট্রেশনের কাগজটা যত্ন করে রেখে দাও, তোমার ছেলের রেজিস্ট্রেশনের সময় কাজে লাগবে।’
কলেজ সুইমিং টিমের জন্য প্রথমে কোনো কোচ ছিল না। তখন কোচের দায়িত্ব পালন করতেন একজন স্যার। তিনি একবার আমাদের কীভাবে ডাইভ দিতে হয় দেখাচ্ছিলেন। স্যার ডাইভ দেওয়ার পর অনেকক্ষণ পানির নিচে থেকে ওঠেননি। অনেকক্ষণ পর উঠে বললেন, ‘সরি, আমার প্যান্টটা খুলে গেছিল পানির ধাক্কায়।’
মো. বাহলুল হায়দার
রংপুর ক্যাডেট কলেজ
(১৯৯৩-১৯৯৯)
বাংলার এক স্যার ছিলেন পুরোপুরি সাহিত্যিক। আমরা ক্লাস সেভেনে কলেজে গিয়ে শুনি, ইতিমধ্যেই স্যারের অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। কারণ, আমরা স্যারকে দেখি বিকেলবেলা সানগ্লাস চোখে মোটরসাইকেলে করে কলেজে চক্কর দেন। আমাদের ফুটবল মাঠের পাশের রাস্তা দিয়ে শোঁ শোঁ করে সিলেট শহরের দিকে বেরিয়ে যান। এ রকম একজন যে সাহিত্যিক হতে পারেন, সেটা আমরা ধারণা করতে পারিনি। আমাদের ধারণা ছিল, কবি-সাহিত্যিকেরা আবার মোটরসাইকেল চালান নাকি?
তো, আমাদের সিনিয়র এক ব্যাচের বাংলা পরীক্ষার খাতা দেখানোর দিন স্যার ক্লাসে এসে সোজা এক ভাইয়াকে ডাকলেন। কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ইচ্ছামতো তাঁকে উত্তম-মধ্যম দিলেন।
ঘটনা আর কিছুই নয়। স্যার রচনা লিখতে দিয়েছিলেন ‘আমার প্রিয় সাহিত্যিক’। ভাইয়া লিখেছেন, আমার প্রিয় সাহিত্যিক জনাব অমুক। তাঁকে আমার ভালো লাগে। কারণ, তিনি খুব সুন্দর মোটরসাইকেল চালান। সানগ্লাস চোখে দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে তিনি যখন কলেজ ক্যাম্পাসে চক্কর দেন, তখন তাঁকে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো লাগে…।
কামরুল হাসান, সিলেট ক্যাডেট কলেজ (১৯৯৪-২০০০)
মেজর ম. স্যার আমাদের পাওয়া চতুর্থ ও শেষ অ্যাডজুট্যান্ট (রাজশাহীর এক্স ক্যাডেট)। কলেজের শেষের দিকে কোনো এক সেন্ট্রাল ক্লাসে কথায় কথায় স্যারের মেয়ের প্রসঙ্গ উঠে এল। আমরা ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় স্যারের মেয়ের নাম ও বয়স জানতে চাইলাম। ব্যাপার বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসিমুখে স্যার চক দিয়ে টেবিলের ওপর কী যেন আঁকিবুঁকি করলেন। তারপর বললেন, ‘তোমরা ৪৩ বিএমএ লং কোর্সে অ্যাপ্লাই করছ, না? আফসোস, আমার মেয়ে টাংকি মারবে ৭৮ লং কোর্সের পোলাপানের সঙ্গে।’
মো. সায়েদ উল হাসমত
বরিশাল ক্যাডেট কলেজ (১৯৯২-১৯৯৮)
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০১, ২০১০
Leave a Reply