নোয়াখালীর ভাষায় একটা বাক্য
হানিতে হুল আছে, হুল দেইখ্যা হোলা হানে হানিতে হড়ি গেছে।
বুঝলেন কিছু? মনে হয় না। ওনারা ‘প’ ও ‘ফ’কে ‘হ’ বলে
হানিতে—পানিতে, হুল—ফুল, দেইখ্যা—দেখে, হোলা হানে—পোলাপান বা ছেলেপুলে, হানিতে—পানিতে, হড়ি—পড়ে। তাহলে ঘটনা দাঁড়াল—
পানিতে ফুল আছে, ফুল দেখে ছেলেপুলে পানিতে পড়ে গেছে।
শিক্ষক ও ছাত্রী
প্রথম দিন পড়াতে গিয়ে স্বভাবতই জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার নাম কী?’ লাজুক হেসে মেয়েটি বলল, ‘জি, মিচ্চোনিয়া!’
ঠিক বুঝলাম না। ফের জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী নাম বললে?’
‘মিচ চোনিয়া চার। চো-নি-য়া। চাবরিনা চিদ্দিকা চোনিয়া।’
‘ও সোনিয়া! তা সোনিয়া, তোমার দেশের বাড়ি কোথায়?’
উত্তর শুনে ঘটনা পরিষ্কার হলো। পড়াতে শুরু করলাম সোনিয়াকে।
আমি যখন খাতা দেখতাম, সে সময় সে গল্প জুড়ে দিত।
একদিন এমন মনোযোগ দিয়ে বাড়ির কাজ দেখাচ্ছি, সে গল্প শুরু করল, ‘চার, আপনি ভেন্ডের গান লাইক করেন?’
‘ভেন্ডের আবার কী? বলো ব্যান্ডের। হ্যাঁ, করি তো।’
‘চার, কোন ভেন্ড আপনার পেবারিট?’
‘নির্দিষ্ট কেউ না। সব ব্যান্ডেরই কিছু কিছু গান ভালো লাগে।’
‘চার, আমার পেবারিট চার, চোলচ। চোলচের পরেস্ট হিলে গানটা চুপার লাগে, চার, প্যানটাচটিক লাগে।’
আরেক দিনের কথা। খাতা দেখছি, কিছুটা উশখুশ করে ছাত্রী বলল, ‘চার, আপনার কোনো অ্যাপেয়ার আচে, চার?’
ওর দিকে শীতল দৃষ্টিতে এক মুহূর্ত তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম খাতায়।
সে নাছোড়বান্দা, ‘বলেন না, চার, আচে?’
ধমকের সুরে বললাম, ‘হ্যাঁ, আছে!’
‘হি.হি..হি…! তা বাবির নাম কী, চার?’
রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটাকাটাভাবে বললাম, ‘মাধুরী দীক্ষিত।’
‘ই.হি..হি…! আপনি চার একদম চিরিয়াচ না, শুধু পান করেন। হি.হি..হি…। ওহ চার, বালা কতা, আপনাকে তো একটা কবর দিতে হবে।’
‘কী বললে? আমাকে কবর দিতে হবে? মানে কী?’
‘জি, চার, জরুরি কবর, আগামী ২০ তারিকে আমার ভোনের বিয়ে।’
‘ভোনের নয়, বলো বোনের।’
‘জি চার। চার, কাওয়াদাওয়া কিন্তু কোনো কমিন্টি চেন্টারে হবে না, চাদে হবে।’
‘কী? চাঁদে হবে?’
‘জি, চার, আমাদের চাদে। চার, আপনাকে খাট দেব?’
‘খাট! আমাকে খাট দেবে মানে?’
‘মানে চার, বিয়ের খাট।’
‘হোয়াট? বিয়ের খাট!’
‘জি, চার, দাওয়াত খাট।’
‘ও আচ্ছা! ইনভাইটেশন কার্ডের কথা বলছ তুমি?’
‘জি, চার। চার, জানেন, আমার দুলাভাই না দেখতে টিক ভোম্বের হিরুদের মতন।’
‘ভোম্বে নয়, বোম্বে। আর হিরু নয়, হিরো। তা, উনি দেখতে কোন হিরোর মতন?’
‘হিহিহি…। দেকতে? উনি দেকতে টিক ভোম্বের চালমান কান, চার।’
বগুড়ার ভাষা খুব দুর্বোধ্য নয়, তবে বিচ্ছিন্ন কিছু দুরধিগম্য শব্দসহযোগে রচিত এই বক্তব্যহীন ছড়া।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২২, ২০১০
Leave a Reply