পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন। নানা ভাষায় রয়েছে কিছু বাংলা ভাষার শব্দ। একটু উড়াইয়া তাই দেখিতে পাইলেন মহিউদ্দিন কাউসার
জাপানে ‘কাকু’ বলে ডাক দিলে আপনার দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না, বরং লিখতে বসে যাবে। কারণ, ওদের ভাষায় ‘কাকু’ মানে হলো লেখা।
এই যে ‘শোনেন’ বলে জাপানিজ কোনো বালিকার দৃষ্টি আর্কষণ করতে গেলে দুটো থাপ্পড়ও জুটতে পারে কপালে। জাপানিজ ‘শোনেন’ মানে যে বালক।
আরও মজা হবে আপনার সঙ্গে থাকা বাঙালি মেয়ে ‘মিনা’ যদি একটু এগিয়ে যায়। ওকে ‘মিনা’ বলে ডাকা মাত্রই দেখবেন, সবাই আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। কারণ, জাপানি শব্দ ‘মিনা’ অর্থ সবাই।
সূর্যোদয়ের দেশটিতে কেউ খুবই জঘন্য ধরনের অপরাধ করছে দেখে আপনি হয়তো বলে উঠলেন ‘ছি ছি’। তার কিছুক্ষণ পরই নিজেকে আবিষ্কার করবেন জেলখানায়। জাপানে ছি ছি শব্দের মানে যে সমর্থন করা।
‘মাছি’ উড়তে দেখলেই ‘মাছি উড়ছে’ বলবেন? জাপানিরা আপনাকে পাগলাগারদে পাঠিয়ে দিতে পারে, কেননা মাছি মানে শহর। ‘শহর উড়ছে’ বলাটা তো পাগলামিই বটে।
প্রিয় বাংগুরাদেজিন (বাংলাদেশি), দয়া করে জাপানে কেউ প্রেমে ব্যর্থ হলেই ‘ছ্যাঁক’ খেয়েছে বলবেন না। জাপানি ‘ছ্যাঁক’ শব্দটির অর্থ হলো ‘চালের মদ’। প্রেমে ব্যর্থ হলে ওরা তো চালের মদ না খেয়ে রেড ওয়াইনও খেতে পারে। তাই না?
কখনো ‘ছেঁড়া’ বললে ইতালিয়ান দর্জির কর্মচারী কাপড় ছিঁড়েছে ভেবে একটুও দুঃখ পাবে না, সে তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবে। কারণ, ওই ভাষায় ‘ছেঁড়া’ মানে যে সন্ধ্যা। তার তো এখনই ছুটি! বোঝেন অবস্থা, ইতালিয়ান ‘ওরা’ মানে নাকি ঘণ্টা (ছবির নাম—ঘণ্টা এগারোজন) আর মেঝে মানে নাকি মাস।
ইতালিতে অবশ্য ‘নান্নার বিরিয়ানি’ চেয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। যদিও ওখানে পুরান ঢাকার বিখ্যাত ‘নান্নার বিরিয়ানির’ শাখা নেই। তার পরও নান্না মানে যে দাদা। তারা অন্তত কারও দাদার কাছ থেকে বিরিয়ানি এনে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
ওখানে ‘জিয়ার অনুসারী’ বললে মুজিবের অনুসারীরা মারতে যাবে না। ইতালিয়ান ‘জিয়া’ অর্থ—মামি বা চাচি। যে কেউ তার মামি-চাচির অনুসারী হতেই পারে, তাই না?
পানিতে নেমে কলাগাছের ‘ভেলা’ খুঁজলে ইতালিয়ানরা আপনার হাতে নৌকার বাদাম তুলে দেবে। ইতালিয়ান ‘ভেলা’র বাংলা যে বাদাম।
দয়া করে ইতালিতে গিয়ে কেউ মেলায় যাবেন না। কেননা, ওরা মেলায় যায় না, ওরা মেলা খায়। ওদের মেলার বাংলা অর্থ হলো আপেল।
ইতালিয়ান কাউকে রেগেমেগে যদি ‘মরো’ বলেন। ব্যাপারটা খুুবই হাস্যকর হয়ে যাবে। ইতালিয়ানদের চোখে তো আমরাই কুচকুচে মরো। বুঝতেই পারছেন, মরো মানে হলো কালো।
সবচেয়ে মজা হবে মুখে প্রচণ্ড ঝাল লাগায়, মিষ্টি কিছু খাওয়ার আশায় আপনি যদি কারও কাছে ‘পেঁপে’ চান তাহলে। সে তখন আপনাকে একগাদা মরিচ ধরিয়ে দেবে। বোকা ইতালিয়ানরা (!) যে মরিচকেই ‘পেঁপে’ বলে ডাকে। সিঙ্গাপুরে বাজার করতে গিয়ে ‘কপি’ চাইলে ওরা কিন্তু ফুলকপি বা বাঁধাকপি দেবে না, ওরা আপনাকে এক কাপ কফি ধরিয়ে দেবে।
যে জাতি বাপকে বাবা বলেও ডাকে না, পাপা বলেও ডাকে না, বাপা ডাকে, সে জাতির পরিচিত কেউ আপনার বাড়িতে অনেক দিন আসে না বলে তাকে ‘আজকাল তো ছায়াও মাড়ান না’ বলতে যাবেন না। কারণ সে হয়তো ‘আজকাল তো আমাকেও মাড়ান না’ মনে করে আপনাকে মাড়াতে পা তুলবে। কারণ, ওদের ডিকশনারিতে ‘ছায়া’-এর মানে হলো আমাকে।
আপনি কাউকে ‘অ… নে…ক লাম্বু’ বললে ওরা ভাববে, বেশ খাটো। কারণ, সিঙ্গাপুরে এ শব্দটির মানে হলো ঠিক ‘অর্ধেক’।
পানিকে যারা অ্যায়ার (বানান হলো air) বলে এমন বোকা জাতিটির কাউকে এখনই কিছু করতে ‘ইচ্ছুক’ বললেও সে নড়বে-চড়বে না। কেননা, সিঙ্গাপুরিয়ান ‘ইচ্ছুক’-এর মানে যে আগামীকাল। সুতরাং আজই ব্যস্ত হওয়ার কী আছে!
‘তাকানো’ শব্দটির সিঙ্গাপুরিয়ান মানে হলো ‘মেলিহাত’। এরা চোখ মেলে দেখে না, দেখে হাত মেলে। হাস্যকর!
ওদের কাছে ‘জাম্বুরা’ চাইলে আপনি পাবেন ‘কাঁঠাল’। হ্যাঁ, খুবই সত্য কথা। কারণ, ‘কাঁঠালের’ সিঙ্গাপুরিয়ান নাম ‘জাম্বুরা’।
তীব্র জ্যামে আটকে আছেন সিঙ্গাপুুরে। আপনি ট্যাক্সিড্রাইভারকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে গেলেন, ‘জ্যাম’! সে বলবে, নেই। আপনি অবাক হলেও সে ঠিকই বলেছে। কারণ, ওর ভাষায় জ্যাম শব্দের মানে হলো ‘ঘড়ি’। ওর কাছে ঘড়ি না থাকলে জ্যাম নেই বলবে না তো বলবেটা কী?
কোরিয়ায় ‘ডেথ’ বলে চিত্কার করলেও কেউ দুঃখ পাবে না। কেননা, ডেথ মানে হলো ‘চার’।
মনে রাখবেন, কোরিয়ায় বাদামিকে বাদামি বলবেন না। বলবেন, কালো। ভাবছেন মিথ্যা বলবেন কেন? মিথ্যে নয়, বাদামির কোরিয়ান অনুবাদ হলো কালো।
কোরিয়ায় বেগুনি মানে হলো বড়া। বুঝতেই পারছেন, আলুর বড়া খেতে গিয়ে ‘বড়া’ চাইলে যা পাবেন, তা হলো ‘বেগুনি’।
‘সকাল’কে কোরিয়ানরা ‘ওজন’ আর ‘মাথা’কে বলে ‘মরি’। মাথার ওপর ওদের চুলগুলো খাড়া হয়ে থাকে বলেই কি না কে জানে—চুলকে বলে ‘মরি খাড়া’। ‘ই…মা…’ বলে আমাদের দেশের লোকেরা কপালে হাত দেয় বলেই হয়তো কোরিয়ান ‘ইমা’ মানে হলো ‘কপাল’।
কোনো কোরিয়ানের বাড়িতে দাওয়াত। বলে দিলেন, আপনার কচুর তরকারি খুবই পছন্দ। সেদিনের দাওয়াতটা কতখানি সুখপ্রদ হবে, বুঝতে পারবেন তখনই, যখন জানতে পারবেন, কোরিয়ায় কচু মানে হলো মরিচ।
সেই মরিচের তরকারি খেয়ে আপনি যদি বলেন, ঝাল। তাহলে ওরা আপনাকে সেটা আরও বেশি দেবে। কারণ, কোরিয়ান ভাষায় ‘ঝাল’-এর মানে হলো ভালো।
এদের বোকামির শেষ নেই। ‘সাবধান’কে এরা ‘জসিম’ বলে, ‘চাঁদ’কে বলে ‘তাল’ আর ‘একশ’কে বলে ‘ব্যাগ’। কোরিয়ানরা ‘গরু’কে বলে ‘সু’। ‘গরু মেরে জুতা দান’ প্রবাদটা তাহলে এরাও জানে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২২, ২০১০
Leave a Reply