বইয়ের ফ্ল্যাপগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কথা লেখা থাকে। সেগুলো এরকম হলে কেমন হয়? বই না লিখেও বইয়ের ফ্ল্যাপগুলো লিখেছেন আদনান মুকিত
লেখক বোতল চৌধুরীর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীতে বৈশাখ মাসে হাঁটুজলও থাকে না। তবে বর্ষাকালে এ নদীর মাছ ধরেই জেলেদের জীবন কাটে। এ নদীতে রুই, কাতল, বোয়াল, পুঁটি, টাটকিনি, টাকিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাছ পাওয়া যায়। তিনি মাছ খেতে ভালোবাসেন। আলু দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল তাঁর সবচেয়ে পছন্দের। তবে এর সঙ্গে পুঁটি মাছ ভাজা থাকলে তাঁর আর কিছুই লাগে না। তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করেন। স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর তিনি নির্মল সুখ ও আনন্দে উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন।
জসিম মজুমদার দুই হাতে লিখে চলেছেন। দেশের সব টিভি চ্যানেলেই তাঁর লেখা নাটক প্রচারিত হচ্ছে। তবে নাটকের মধ্যে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করায় দর্শক তা উপভোগ করতে পারছে না। আসলে আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো মা-বাপ নেই। যে যার ইচ্ছেমতো বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। বিজ্ঞাপনের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে অথচ সাহিত্যের মান বজায় থাকছে কি না, তা নিয়ে কেউই ভাবছে না। এ বিষয়গুলো জসিম মজুমদারকে খুবই নাড়া দেয়। আর এগুলোই তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে।
বর্তমানে তিনি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত।
খুব অস্থির সময়ে বাস করছি আমরা। আবুল মোখলেসকে এই সময় আমাদের চেয়েও বেশি অস্থির করে তোলে। তাই সে হাতে তুলে নেয় কলম। আমাদের ভাবনাগুলো কীভাবে যেন ওর লেখায় পরিণত হয়। আবুল আমাদের হতবাক করে। ওর লেখা দেখে আমরা চমকে উঠি। বুকের ভেতর একটা চিনচিনে ব্যথা হয়। মাথাটা হঠাত্ চক্কর দিয়ে ওঠে। বলি, আরে, এটা তো আমার আইডিয়া ছিল! আবুল মুচকি হাসে। ও এ রকমই। বিভিন্ন মানুষের আইডিয়া নিয়ে লেখাই ওর কাজ। আবুলের লেখা পড়লেই আপনার মনে হবে, ‘লেখাটা আগেও কোথায় যেন পড়েছি।’ কিন্তু কোথায় পড়েছেন তা মনে করতে পারবেন না। এখানেই আবুলের সার্থকতা। এভাবেই চলছে ওর এগিয়ে চলা। আবুলের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
—কাছের বন্ধুরা।
মোতালেব শিকদার একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে এ দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশা। লেখালেখির দীর্ঘ জীবনে তিনি শ্রমজীবী মানুষকে একেবারে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। বর্তমানে তিনি বনানীর একটি নিরিবিলি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। ফ্ল্যাটের বারান্দা দক্ষিণমুখী। মোতালেব শিকদার এসি ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারেন না। তাঁর বাসায় এসির তাপমাত্রা সব সময় ২৬-২৭ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। তবে তিনি প্রায়ই তাঁর এসির রিমোট কন্ট্রোলটি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর গাড়িতেও এসি রয়েছে। তবে গাড়ি তিনি নিজে ড্রাইভ করেন না। চিকন চালের ভাত আর মুরগির মাংস ছাড়া তাঁর খাওয়া হয় না। মুরগির মধ্যে দেশি মুরগিই তাঁর বেশি প্রিয়। তাঁর লেখাতেও সে প্রমাণ পাওয়া যায়।
লেখক মোক্তার আলী উত্তরার একটি অভিজাত বাড়িতে বসবাসরত। বাড়িওয়ালা মাইডিয়ার টাইপের লোক। ভাড়া নিয়ে কোনো ক্যাচাল করেন না। ভাড়া বাকি পড়লেও খাটের নিচে লুকিয়ে বলতে হয় না, কুমিল্লায় আছি। মোক্তারের কাজে সাহায্য করার জন্য কাসেম নামের একজন কাজের লোক রয়েছে। সে সব সময় চায়ে চিনি কম দেয়। তবে তার গানের গলা ভালো। প্রতিভা অন্বেষণে গাইলে নিশ্চিত সেরা গায়ক হবে। সব ধরনের গানই ও গাইতে পারে, তবে কিশোর কুমারের চিরসবুজ গানগুলো ওর গলায় বেশি মানায়। বড় আবেগ দিয়ে গান গায় ছেলেটা। আমরা কাসেমের দীর্ঘায়ু কামনা করি।
বেলাল বখতিয়ার একজন সাহসী লেখক। রবীন্দ্রনাথের লেখাও নিজের নামে চালিয়ে দিতে তিনি দ্বিধা করেন না। দুঃসাহসী এই লেখক শৈশবে খুবই ডানপিটে ছিলেন। অন্যের গাছের আম-কাঁঠাল, বন্ধুদের খাতা-পেনসিল নিজের বলে দাবি করতেন। এভাবেই একদিন চেয়ারম্যানের মেয়ের মনটাকেও দখল করে নিলেন। এর পর থেকেই লেখালেখির জগতে পদার্পণ করে একেবারে হইচই ফেলে দেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর একমাত্র সন্তান ঢাকার একটি নামকরা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। ছাত্র হিসেবে সে খুবই ভালো। সব সময় বেশি বেশি নম্বর পায়। স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই প্রাইভেট পড়ে। তাই শিক্ষকেরা তাকে খুব পছন্দ করে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১০
Leave a Reply