রস+আলো নাকি সেঞ্চুরি মেরে দিল!
‘নাকি’-টা ইচ্ছা করেই বললাম। ইদানীং আবার সেঞ্চুরিতেও ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে কিনা। এই তো গত প্রিমিয়ার লিগেই তামিম ইকবাল স্কোরবোর্ডে দেখলেন সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। দিব্যি ব্যাট-ট্যাট তুলে দর্শকের অভিনন্দনের জবাব দিলেন।
পরের বলেই তামিম আউট। ও হরি! প্যাভিলিয়নে ফিরে অফিশিয়াল স্কোরকার্ড দেখে তামিম জানলেন, মোট্টেও সেঞ্চুরি হয়নি তাঁর। ৯৮ রানে আউট বেচারা!
ও রকম কিছু হলে রস+আলোকেও কিন্তু ‘বেচারা’ বলা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই বলছিলাম, একটু হিসাব-টিসাব করে দেখেন। নম্বরে কোথাও ভেজাল লেগে গেল কি না! বিভাগীয় সম্পাদকের হিসাবের ভরসায় থাকবেন না।
ও রকম ভরসায় থেকেই কপাল পুড়েছিল এক ইংলিশ ব্যাটসম্যানের। ভদ্রলোকের শাশুড়ি এসেছেন সেদিন কাউন্টি ক্রিকেটে জামাতার খেলা দেখতে। জামাতা ব্যাটসম্যান হিসেবে তেমন সুবিধের নন। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানেন, ভদ্রলোক বিরাট ব্যাটসম্যান; ম্যাচে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন।
এখন উপায়? শেষমেশ বিপক্ষের ক্যাপ্টেনকে কাছে ডেকে বললেন, ‘প্লিজ, একটা ব্যবস্থা করে দাও। ওই যে আমার শাশুড়ি ভিআইপি বক্সে বসা।’ প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মুখ কালো করে বললেন, ‘যতই ব্যবস্থা করি। কাজের কাজ হবে না।’
‘কেন!’
‘কারণ, যতই হাফভলি বল করা হোক, এখান থেকে শট করে তোমার শাশুড়ির গায়ে বল লাগানো সম্ভব নয়। ফলে তিনি বেঁচেই যাবেন।’
উল্টো বুঝলি রাম! ভদ্রলোক চেয়েছিলেন সেঞ্চুরি মারতে। আর প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ধরে নিলেন, ব্যাটসম্যানটি শাশুড়ি মারতে চান!
ক্রিকেট এ রকমই। করতে যাবেন একটা, হয়ে যাবে আরেকটা। একবার ৯০-এর ঘরে ঢুকে পড়লে, সবাই চান তিন অঙ্কে পৌঁছাতে। অনেকের বেলায়ই তা আর হয়ে ওঠে না। ‘নার্ভাস নাইনটিজে’ আউট হয়ে ফিরতে হয়। এমন ভয় পাচ্ছিলেন রস+আলো সম্পাদকও (এর মধ্যে নিজেই এক চিঠির জবাবে বলেছেন)।
রস+আলো ‘৯৯’-এর ধাক্কা পার হলেও টেস্ট, ওয়ানডেতে সে ধাক্কা অনেক ব্যাটসম্যানের কপালে লেগেছে। শচীন টেন্ডুলকার সারা জীবন এই ধাক্কা থেকে দূরে দূরে থেকেছেন। কিন্তু বছর কয়েক হলো, বেচারার একটা গেরো লেগে গেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বশেষ টানা তিনটি ৯৯ রানে আউটের পাশেই শচীন টেন্ডুলকারের নাম লেখা। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ‘নড়বড়ে নব্বই’-তে আউটও (১৮ বার) হয়েছেন টেন্ডুলকার। সেঞ্চুরির মূল্য কীভাবে দিতে হচ্ছে দেখুন!
টেস্টে অবশ্য মাঝেমধ্যে ৯৯ রানে আউট হওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড করাচি টেস্টে পাকিস্তানের মাজিদ খান, মুশতাক মোহাম্মদ ও ইংল্যান্ডের ডেনিস অ্যামিস ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন। ওই টেস্টেই পাকিস্তানি ওপেনার সাদিক মোহাম্মদও চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁর গেরো ছিল ৮৯ রানে!
১৯৯২ সালের ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের দীপক প্যাটেল ও জন রাইট ৯৯ রান করে আউট হয়েছিলেন।
টেস্টে ৯৯ তো বটেই, ১৯৯, ২৯৯ রানেও আউট হওয়ার নজির আছে। এর মধ্যে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের কথাটা বিশেষ করে মাথায় রাখুন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানই তার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা কানপুর টেস্টের সেই ১৯৯।
এবার বলুন, রস+আলো তার ১০০তম সংখ্যায় পৌঁছানোয় বিভাগীয় সম্পাদক গদ গদ ভাব নেবেন না কেন, মানুষ সেঞ্চুরির প্রতি কেন একটা তীব্র টান অনুভব করবে না? এই টান থেকে ব্রিটিশ ক্রিকেটাররা নাকি পুরো ৯০-এর দশকটা দিন গুনে পার করেছেন। কারণ কী?
ব্রিটিশ একটা পত্রিকা লিখেছিল, কোনোক্রমে ২০০০ সালটা পার করতে পারলেই ব্রিটিশ ক্রিকেটাররা সবাই বলতে পারবেন, আমরা একটা সেঞ্চুরি পার করতে পেরেছি! মানে কী? ব্রিটিশরা রানের সেঞ্চুরি কি করতেই পারে না!
আরে দূর! এসব পত্রিকার কথা বিশ্বাস করবেন না। সবাই বাড়িয়ে লেখে। কতটা বাড়িয়ে লেখে সেটা অজিত আগারকার টের পেয়েছেন।
অজিত আগারকারকে ভারতের কোচ-ম্যানেজমেন্ট তখন ‘অলরাউন্ডার’ বলা শুরু করেছে। ম্যানেজমেন্টের কথার জবাব হিসেবে ভারতের মাঝারি সারির এক ব্যাটসম্যান, হ্যাঁ এক ব্যাটসম্যান বললেন, ‘আগারকার অলরাউন্ডার হলে আমি বিশ্বের সেরা বোলার।’
একই আক্রোশ থেকে পশ্চিম বাংলার একটা বাংলা পত্রিকা লিখল, ‘অজিত আগারকারের নামের পাশে ১০০ লেখা দেখলে কী বুঝবেন?’ নিজেরাই উত্তর লিখে দিল, ‘বুঝবেন, অজিত আগারকার বল করছিলেন। ১০০ রান দিয়ে ফিরেছেন।’ পরে অবশ্য টেস্ট সেঞ্চুরি করে আগারকার এ কথার জবাব দিয়েছেন।
সেঞ্চুরি নিয়ে হতাশা-প্রশ্ন-জবাব অনেক হলো। আবার সেই ভুলের কথায় ফিরে যাই। সেঞ্চুরি হওয়া, না-হওয়া নিয়ে স্কোরকার্ডের ভুল। তামিম ইকবাল ভুলের আগুনে পুড়েছিলেন। আর এবারের লিগে ভুলের ‘আগুন’ জ্বলায় রীতিমতো উত্সব করতে পেরেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
স্কোরবোর্ডে দেখেছিলেন আউট হওয়ার সময় তাঁর রান ৯৮। মনে দুঃখ নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন। পরে অফিশিয়াল স্কোরার জানালেন, আশরাফুল আসলে ঠিক ১০০ রানে আউট হয়েছেন। ভুল অনেক সময় ফুলও ফোটায়।
কে জানে, রস+আলোর ১০০ হয়তো আগেই হয়ে গেছে! আমরা টের পাইনি।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৫, ২০১০
Leave a Reply