মেষ
মেষ জাতক-জাতিকা এমনিতে ঠান্ডা হলেও অমনিতে কিন্তু ভয়ংকর গরম। আর, ত্যাঁদড় প্রকৃতির লোককে সাইজ করতে এরা সিদ্ধহস্ত। তবে, এটা এক মেষ জাতকের নিজেরই সাইজ হওয়ার ঘটনা। আমার বন্ধু অনিমেষ। তারই মেসো (খালু) উন্মেষ বাবু। রাশিতে মেষ। ভদ্রলোক বিরলকেশ এবং দারুণ বদরাগী। হঠাত্ ১৯টি মেষ নিয়ে একটি খামার খুলে বসলেন। এক ভোরে খামার পরিদর্শন করতে গিয়ে তাঁর আর ফেরার নাম নেই। দুপুরে দেখা যায়, খামারের ভেতর তিনি অজ্ঞান অবস্থায় চিত্ হয়ে পড়ে আছেন। মাথা, হাঁটু, ঠ্যাং ফেটে রক্তারক্তি সিচুয়েশন। মেষের গুঁতোই এর কারণ। যা-ই হোক, এই অপ্রীতিকর ঘটনার পর খামারটি উঠিয়ে দেওয়া হলো। তবে মাঝখান থেকে ঘটল এক অভাবনীয় ঘটনা।। উন্মেষ বাবুর উগ্র মেজাজখানা হয়ে গেল একেবারে নিরামিষ। এতে সবচেয়ে যিনি বেশি খুশি হলেন—তিনি হচ্ছেন উন্মেষ বাবুর স্ত্রী শ্রীমতী নির্নিমেষ দেবী। …ভাইসব, ২০১০ সালে মেষ জাতক-জাতিকা ব্যাপক ‘গুঁতায়ন’ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন।
কর্কট
এক কর্কট রাশির জাতক গটমট করে আমার চেম্বারে এসে ঢুকলেন। কটমট করে তাকালেন আমার দিকে। তারপর বললেন, ‘আমি নিজে একজন দুই নম্বরি বিজনেসম্যান। কিন্তু আপনি তার চেয়েও জঘন্য। দুই বছর আগে বলেছিলেন—‘২০১০ সালে আমি কোটিপতি হব। তো, কই?’ কথা খুঁজে না পেয়ে আমি বললাম, ‘চা খান।’ কর্কট দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বললেন, ‘ধ্যাত্তেরি মিয়া, রাখেন আপনার চা! আমার অবস্থাটা কী করলেন, দেখেন। একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে পুলিশের খোঁজাখুঁজি।’ তারপর আমার নাকের সামনে তাঁর ডান হাতটা বাড়িয়ে বললেন, ‘এক লাখ টাকার এই পাথরগুলো আমাকে গছালেন। ফর নাথিং।’ আমি বললাম—‘এ কী, এগুলো কি আমি এই ডান হাতে পরতে বলেছিলাম?’ মিস্টার কর্কটিয়া ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ‘তা হলে? এখন ঠিক করে নিই, বাঁ হাতে পরি?’ আমি বলি, ‘নো নো স্যার, তা হবে না। নতুন পাথর নিতে হবে।’ তিনি আমার ভারী অ্যান্ড বিগ সাইজের ম্যাগনিফায়িং গ্লাসখানা খপ করে তুলে নিলেন। দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, ‘আপনার টুপিটা মাথা থেকে প্লিজ একটু খুলুন তো জইতিশি স্যার!’
২০১০: যদি হন কর্কট, হেসে নিন একচোট।
বৃষ
বৃষ বললে খুশি হন, অথচ ষাঁড়, ষণ্ড কিংবা বলদ বললে চটে ওঠেন—এ কেমন কথা গো! ওগুলোর একই তো মানে। টিভির জানোয়ার চ্যানেলে দেখেননি—কী সুন্দর সব ষাঁড় রয়েছে বিভিন্ন দেশে? রাশি-শাস্ত্রকারগণ যে ১২টির মধ্যে নয়টি রাশিই নানা বিপজ্জনক পশু ও বিষাক্ত কীটের নামে নামকরণ করেছেন—সেটা আমার দোষ নয়। এক মহিলাকে বললাম, ‘ম্যাডাম, আপনি বলদ রাশির জাতিকা। ভেরি পাওয়ার ফুল। আপনার বিউটিফুল ল্যাজখানায় যত শক্তি আছে—একজন পুরুষের দুখানা বাহুতেও তা নেই।’ মহিলা ঠিক খ্যাপা ষাঁড়ের মতোই লাল চোখ করে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘আই থিঙ্ক ইউ আর এ ডগ রাশির জাতক। তা না হলে ও রকম একটা বাজে কথা আপনি আমাকে বলতে পারতেন না!’ এই বলে তিনি আমার দাড়ির গোছা ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে সবেগে প্রস্থান করলেন। ফি বা পারিশ্রমিক দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
২০১০ সালখানি—বৃষের শিংজুড়ে রহিবে চুলকানি…।
মিথুন
স্কুলে আমাদের এক নতুন শিক্ষক এসে যোগ দেন—শ্রী অতুলচন্দ্র রায়। দৈহিক গঠনের কারণে আমরা আড়ালে তাঁকে ‘বোতলচন্দ্র’ ডাকতাম। তিনি রাশিতে ছিলেন মিথুন এবং এ রাশিটির প্রতি ছিল তাঁর অন্ধ পক্ষপাত। কাউকে পেটানোর প্রয়োজন হলে আগে জিজ্ঞেস করে নিতেন, ‘অ্যাই, তোর রাশি কী? খবরদার, মিথ্যা বলবি না।’ অপরাধী মিথুন রাশির জাতক হলে হালকা-পাতলার ওপর দিয়ে পার পেয়ে যেত। এভাবে বালক বয়সেই আমরা রাশিশাস্ত্রে অভিজ্ঞ হয়ে উঠি। তবে, আমার জানামতে, সহপাঠীদের মধ্যে একমাত্র আমিই শেষ পর্যন্ত পেশাদার রাশিকার হয়ে উঠেছি। এর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী আমার সেই শিক্ষক। যা-ই হোক, এই স্যারটির বাতিক এতটাই বৃদ্ধি পায় যে তিনি রাশিভিত্তিক ক্লাস চালু করার ঘোষণা দেন। ফার্স্ট বেঞ্চের ডেস্কে ঠাস ঠাস করে দুটো বেতের বাড়ি দিয়ে বলেন, ‘বয়েজ! কাল থেকে ওনলি দ্য মিথুনস উইল সিট হিয়ার। বদ রাশির ছেলেরা বসবে পেছনের দিকে।’ প্রধান শিক্ষক অবশ্য এই বিধিবহির্ভূত ব্যবস্থাটি মেনে নিতে পারেননি। জানানো প্রয়োজন, আমি তখন ধনু ছিলাম এবং অদ্যাবধি তা-ই আছি। মিথুন হওয়ার কারণে, ২০১০ সাল রহিবে স্মরণে।
সিংহ
১৯৭১ সাল। সিলেট শহরে এক দরিদ্র বৃদ্ধ রাস্তার ধারে বসে ছিলেন। তিন-চারজন পাকিস্তানি সেনা তাঁকে উত্ত্যক্ত করায়, তিনি তাদের খুব খারাপ একটা গালি দিয়ে বসেন। এ গালিটি উর্দু ভাষায়ও চলে। কাজেই পাকিস্তানি সেনারা রাইফেলের ডগায় লাগানো খোলা বেয়োনেট নিয়ে বৃদ্ধকে তাড়া করল। প্রাণভয়ে বৃদ্ধ বাতাসের বেগে ছুটতে ছুটতে শহরের প্রান্তে চলে গেলেন। ওখানে এক বাড়ির প্রায় ছয় ফুট উঁচু প্রাচীর টপকে ভেতরের নরম জমিতে লাফিয়ে পড়লেন এবং জ্ঞান হারালেন। ততক্ষণে পাকিস্তানি সেনারা বুড়োর এই কেরামতি দেখে হাসতে হাসতে ফিরে গেছে। যা-ই হোক, ওই বাড়ির লোকজন বৃদ্ধের মাথায়-মুখে পানিটানি দিয়ে জ্ঞান ফেরাল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি থাকেন কোথায়?’ বৃদ্ধ চার-পাঁচ মাইল দূরের একটা জায়গার নাম বললেন। ওরা প্রশ্ন করল, ‘কিন্তু এত উঁচু এই দেয়াল আপনি টপকালেন কেমন করে?’ বৃদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘কী জানি বাবা, মনে লয় জিনে আনি ফালাইছে।’ আমি প্রায় নিশ্চিত যে ওই বৃদ্ধটি ছিলেন সিংহ কিংবা আমার মতো ধনু রাশির জাতক। প্রমাণিত হবে, সিংহের গুণ রাশি রাশি। তবে সিংহীর গুণ তার চেয়ে ১২ গুণ বেশি।
কন্যা
মানুষ প্রেমে পড়ে, কেউ ১০ কেউ ২০ কেউ ৫০ ফুট উঁচু থেকে। অকৃতদার মহব্বত আলী জোয়ারদার প্রেমে পড়লেন, না মেপেও বলা যায়, কমপক্ষে ৬০ ফুট উঁচু থেকে। এখন তাঁর বয়স ৭০ প্লাস। বৈবাহিক বাস্তবতার দিক থেকে এখন তাঁকে ডেট এক্সপায়ারড আইটেম বলা যায়। অর্থাত্ তাঁহার মেয়াদ এখন উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু প্রেমে পড়ার বয়সসীমাসংক্রান্ত কোনো আইন দুনিয়ার কোথাও নেই। মহব্বত আলী সেই সুযোগটাই গ্রহণ করলেন—বেটার লেট দ্যান নেভার। তিনি ভালোবেসে ফেললেন কন্যা রাশির তরুণী কইতরি বানুকে। বললেন, ‘তুমি আমার নাতনি না হও, মেয়ের মতো তো হবেই। ডোন্ট গিভ মাই মনে দুঃখ, মা। আমাকে বিবাহ করতে মনে মনে রাজি থাকো। বাকিটা আল্লা ভরসা।’ তারপর দশ টাকার একখানা লটারির টিকিট কইতরিকে প্রেমের উপহার হিসেবে দিয়ে চোখ মেরে হেসে বললেন, ‘জিতলে ১০ লাখ টাকা!’ কইতরি তার পরিচিতা এক মহিলা র্যাব সদস্যের টেংফং নম্বর মহব্বত আলীকে লিখে দিয়ে চোখ মেরে বলল, ‘রাতে ফোন দিয়েন।’
২০১০: গোঁফওয়ালা কন্যা গো, কন্যা রাশির মেয়ে দেখে পেয়ো নাকো লজ্জা গো!
তুলা
দন্তচিকিত্সক হাজারিকা তুলা রাশির জাতক। বিশাল লম্বা-চওড়া আর প্রচণ্ড মুখ খারাপ। অবশ করার ইনজেকশন দেওয়ার সময় রোগী বেশি টাল্টিমাল্টি করলে ডাক্তার এক ধমক মেরে তাকে অজ্ঞান করে দিতেন। বিনা খরচে পূর্ণ চেতনা নাশ! এরপর সাঁড়াশি দিয়ে ৩২ পাটি দাঁত তুলে ফেললেও রোগীর কিছুই টের পাওয়ার কথা নয়। এই ডাকু ডাক্তারটির নিজের উঠল একবার প্রচণ্ড দাঁতব্যথা। অর্ধবস্ত্রে তিনি পাগলের মতো সোজা রাস্তা ধরে ছুটতে লাগলেন। তারপর জোর করে ঢুকে পড়লেন গাইনির ডাক্তার আম্বরি বেগমের চেম্বারে।
২০১০: প্রেমের তুলার ওজন, জানি আমরা কজন?
বৃশ্চিক
কোনো কোনো বৃশ্চিক মানুষ বিপজ্জনক রকমের মন ভোলা হতে পারেন। কলাবাগানের মুর্শিদ সাহেব একটা বাসায় ১৪ বছর বসবাস করেন। এরপর বাসা বদল করে অন্যখানে যান। একরাতে তিনি আপন খেয়ালে বাসায় ফিরলেন, তবে তাঁর ছেড়ে যাওয়া পুরোনো বাসাটায়। দরজায় প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি। সে এক কেলেঙ্কারি কারবার। শেষে পাশের বাসার একটি ছেলে বেরিয়ে এসে বলল, ‘চাচা, আপনি তো এখন আর এ বাসায় থাকেন না।’
২০১০ দিক ভরে ফেলো না পানের পিক, প্রিয় বৃশ্চিক।
ধনু
স্যুট পরা বৃদ্ধটি এসে বলেন, ‘আই অ্যাম ধনাই মিয়া ফ্রম বরইগ্রাম (বার্মিংহাম)। মাই টু ওয়াইফ। ওয়ান দেশি, ওয়ান বিদেশি। বোথ ভেরি ফেরোশাস।’ দেশে এলে দেশি ওয়াইফ বলেন—“দাড়ি রাখো, বুড়া শয়তান!” বিলাতে ফিরলে মেম বলেন—“নো দাড়ি, ইউ ওল্ড হ্যাগার্ড!” পিলিজ, অ্যাস্ট্রলজার, হোয়াট সমাধান এই সমস্যার?’
দুই হাজার দশ, আলোর মধ্যে রস।
মকর
এক মকরের মুখে শোনা সত্যি ঘটনা: গভীর রাতে ট্রেন এসে থেমেছে ছোট্ট একটা স্টেশনে। হয়তো এক মিনিটও থামবে না। আলোয় দেখা গেল, একদল বরযাত্রী, বর-কনেকে নিয়ে ট্রেনে ওঠার জন্য ছোটাছুটি করছে। শেষ মুহূর্তে ঘটল এক বেদনাদায়ক ঘটনা। কনে উঠে গেলেন একটা কামরায়। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিল ট্রেন। বিশাল পাগড়ি মাথায় ছোটখাটো বরটি অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। তাঁর মুখে তখনো চেপে ধরা গোলাপি রুমাল।
সারা বছর মকর, করবে বকর-বকর।
কুম্ভ
এক জ্যোতিষী তাঁর ক্লায়েন্টকে ভবিষ্যদ্বাণী করছেন এভাবে, ‘আপনার রাশি কুম্ভই, তবে এখন কুম্ভ থেকে ১২০ ডিগ্রি পশ্চিমে সরে গিয়ে মিথুনের পেছনের বারান্দায় গিয়ে উল্টে পড়েছে। ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর আপনি একটি লাকি লটারির টিকিট কিনবেন। ওটা হারিয়ে যাবে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে। কুড়িয়ে পাবেন এক মিথুন মহিলা। এই মহিলাটির সঙ্গে বিয়ে হবে আপনার বন্ধুর। ৪০ লাখ টাকার পুরস্কার উঠবে ওই লটারির টিকিটে।’
২০১০: কুম্ভের দম্ভে আসরটা জমবে!
মীন
মীনাক্ষী রায় ও মিনা খাতুন মীন রাশির দুই কড়া বন্ধু। জানতে চাইল, ২০১০ সালে তাদের বিয়ে হবে কি না। আমি বললাম—‘ইয়েস। ফেব্রুয়ারিতে মিনার, নভেম্বরে মীনাক্ষীর। শুনেই মীনাক্ষী কাউকাউ করে উঠল—‘না স্যার, প্লিজ, আমার বিয়েটা একটু জানুয়ারিতে করে দিন!’ শেষে কী আর করি, দুজনের বিয়েই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে হবে বলে অফিশিয়াল ভবিষ্যদ্বাণী করলাম।
এ বছর মীন, আই মিন, ঘটাবেন নট কোনো সিন।
কাওসার আহমেদ চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৩, ২০১০
Leave a Reply