আমরা অনেকেই ভবিষ্যতের করণীয় হিসেবে অনেক কিছু ক্যালেন্ডারের পাতায় লিখে রাখি। কিন্তু সেই সব কি আমরা আদৌ করতে পারি? কতটুকু করতে পারি তা দেখুন এক তরুণের পরিকল্পনা আর ডায়রিতে লিখে রাখা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নমুনা। ভেবেছেন মহিউদ্দিন কাউসার
নভেম্বর ২০০৯
০১.১১.০৯
গত বছর জলির জন্মদিনে আমি চায়নিজের বিল দিয়েছি। সে হিসাবে এবার আমার জন্মদিনে জলিরই বিল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হায়! জলি সেসব বেমালুম ভুলে গেছে। খাওয়ার পর যথারীতি আমার পকেট থেকে টাকা ডাউনলোড করিয়ে নিয়েছে। ভাগ্যিস, বাজারের টাকা থেকে কিছু টাকা মেরে পকেটে আপলোড করেছিলাম, নইলে আজ রেস্টুরেন্টের থালা-বাসনের সব ময়লা ডিলিট করেই আসতে হতো।
০৩.১১.০৯
ইউসুফ ভাইয়ের টাকাটা আজও দিতে হয়নি। মোবাইল বন্ধ রাখছি, সারা দিন বাসার বাইরে কাটাইছি, এর পরও ইউসুফ ভাই আমারে খুঁইজ্যা পাইব, এইটা কোনো কামের কথা না। ওনার কাছে আমি চিরঋণীই থাকব মনে হচ্ছে। দিনটা শুভ ছিল।
০৪.১১.০৯
গতকাল ইউসুফ ভাইয়ের ভয়ে মোবাইল অফ রাইখা বাসা থেকে এক্সিট মারছিলাম। জলির কথা মনেই ছিল না। সে নাকি সারা দিন আমাকে মিসড কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আজ তাই রাগ করে সে রাজুর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোলটেবিল বৈঠক করছে। এদিকে তার মোবাইলে ফোন করলেই আমি মোবাইল স্ক্রিনে ওয়েটিং ছাড়াও চোখে পর্যাপ্ত সরষে ফুল দেখে চলেছি।
০৫.১১.০৯
আহ্! পকেটটারে সুইস ব্যাংকের হেড অফিস মনে অইতাছে। স্যারের বেতনের টাকায় শিঙাড়া খাইতে ম্যাকডোনাল্ডের কাচ্ছির মতো লাগে। এমনিতেই জলি বিরাট রাগ করেছিল, ওরে আজ বুফে খাওয়ালাম। অবশেষে সে কমেন্ট করছে, রাজুর চেয়ে আমি ভালো। আমি কমেন্টটি লাইক করলাম। বিকেলে বন্ধুদের ডেকে দুই টাকার বাদামও খাওয়ালাম। অনেক দিন থেকেই ওরা খাওয়ানোর জন্য চাপাচাপি করছিল।
০৮.১১.০৯
কত্ত বড় সাহস! উত্তরপাড়ার ওই রহিম আমার প্রিয়তমা জলিরে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়! অথচ ওকে আমি কী ভদ্রই না মনে করতাম! মারছি কানসি বরাবর দুই-দুইটা থাপড়। মনে থাকব।
০৯.১১.০৯
যেহেতু আমার জন্মদিনে আমি এবার বিল দিয়েছি, তাই ভেবেছিলাম জলি নিশ্চয়ই তার জন্মদিনে আমাকে খাওয়াবে। ভুল, সবই ভুল! জলি সেসব বেমালুম ভুলে গেছে। যথারীতি খাওয়ার পর আমার পকেট থেকে টাকা ডাউনলোড করিয়ে নিয়েছে। ভাগ্যিস, বাজারের টাকা থেকে কিছু টাকা মেরে পকেটে আপলোড করেছিলাম, নইলে আজ রেস্টুরেন্টের থালা-বাটির সব ময়লা ডিলিট করেই আসতে হতো।
১৩.১১.০৯
ছুটির দিনটা ফ্রি রাখছিলাম। সারা দিন ঘুমানোর জন্য। রাত জেগে ফোন করে সকালে যখনই দুটো ঘুমের ট্যাবলেট মুখে দিয়ে বিছানায় লগইন করলাম, তখনই মা এসে ‘ইউ হ্যাভ এ মাদার রিকোয়েস্ট’ ভাব নিয়ে পিঠে থাপড় দিলেন, ‘এই ওঠ, সারাক্ষণ ঘুমালে হবে! যা, বাজারে যা…।’ যেতেই হলো। বাজার থেকে আসতেই ভাবি ডাকলেন, ‘অভিককে একটু আর্টের টিচারের বাসায় নিয়ে যাও তো।’ ফিরতেই বাবা বললেন, ‘এতক্ষণ লাগে আসতে! তাড়াতাড়ি একটু ব্যাংকে যা তো…।’
১৮.১১.০৯
জলিদের বাড়ির পাশ দিয়ে এতবার গিয়েছি যে ভেবেছিলাম, পরীক্ষায় খুব সহজেই পাস করব। পাস করে সিনেমার মতো দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলব, ‘মা, মা, আমি পাস করেছি।’ তারপর সবাইকে মিষ্টি খাওয়াব। কিন্তু ‘ফেইলুর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস’। আমি আরেকটা পিলার ইনস্টল করে ফেল মেরেছি। তবে আমার সব বন্ধু বেকুব, এরা পাস করে ফেলেছে। তাই ওদের পাসের মিষ্টিই খেলাম। ভালোই হলো, আমার আর টাকা খরচ করে মিষ্টি খাওয়াতে হলো না।
১৯.১১.০৯
ফেল মেরে এমনিতেই বাসায় থাকাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। প্ল্যানমতো চিটাগং ভ্রমণে চলে যেতে পারলেই ভালো হতো। কিন্তু হায়! ভ্রমণ ঠিকই হয়েছে, কষ্ট করে চট্টগ্রামে যেতে হয়নি। ঘর থেকে টয়লেট, টয়লেট থেকে ঘর, এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণ করতে করতেই আমি শেষ! বন্ধুদের পাসের মিষ্টিটা বোধ হয় বেশিই খেয়ে ফেলেছি।
২৭.০৩.০৯
কদিন থেকেই দাঁতের ব্যথায় ভুগছিলাম। ভেবেছিলাম, চিকিত্সকের কাছে গিয়ে চাপার ৫ নম্বর দাঁতটি ডাউনলোড করব। কিন্তু সেদিন মেজ আপুর মেকআপ পেতনির মতো হয়েছে বলায়, আপু এমন চড় দিল যে দাঁতটা অটো ডাউনলোড হয়ে গেল। শখ ছিল, চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার পথে জলির বাসার রাস্তা হয়ে যাব। কিন্তু হায়! তা আর হলো না!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৮, ২০০৯
Leave a Reply