ত্বকের যত্ন নিন। আর উপায় নেই। উদাস হয়ে থাকার দিন শেষ। এখন নিজের খানিকটা যত্ন আপনাকে নিতেই হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজেকে একটু বাড়তি সময় দিতেই হবে। একটু ফিটফাট, একটু ঠিকঠাক।
একই সঙ্গে চোখেরও যত্ন-আত্তি করতে হবে আপনাকে, তবে ত্বকটা প্রাধান্য পাবে বেশি। চোখ যদি আপনার মনের কথা বলে, তাহলে জেনে রাখুন, ত্বক কথা বলবে পুরো শরীরের পক্ষ হয়ে। সুতরাং যত্ন নিন।
দিনকাল যা পড়েছে, আর উপায় নেই। ত্বকের আর চোখের যত্ন আপনাকে নিতেই হবে। না হলে নিজেই আফসোস করবেন পরে। অন্যের কাছে হাসির পাত্রও হয়ে যেতে পারেন। কিছুই অসম্ভব নয়।
শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে পারে, ছি! ছি! জামাইয়ের এমন জ্ঞানবোধ! এই রুচি! এভাবে কেউ টিভির সামনে যায়! আত্মীয়স্বজন দেখলে কী বলবে! এর কোনো মানে হয়!
কিংবা শাশুড়ি হয়তো মুখ বাঁকিয়ে বলবে, বৌমার আর আক্কেল। আরে, কচুপাতা কালারের শাড়ি পরে কেউ বাইরে বের হয়! এখন কী হলো! টেলিভিশনের লোকেরা ধরে বসল। কথা বলতে হলো। এখন সেই ছবি তো সবাই দেখল। আমাদের বউ পরেছে কচুপাতার রঙের শাড়ি। কেমন দেখাল ব্যাপারটা!
সুতরাং এখন থেকেই আপনি সচেতন না হলে, ত্বকের বিষয়ে যত্নবান না হলে এমন অনেক কিছুই হতে পারে।
কারণটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ধরতে পেরেছেন?
পারারই কথা। জটিল কোনো বিষয় না।
দেশে যে আরও ১০টি নতুন টেলিভিশন চ্যানেল আসছে। নতুন এসব চ্যানেলসহ দেশের টিভি চ্যানেলের সংখ্যা দাঁড়াবে ২১টির মতো। এক লাফে ১০টি চ্যানেল বেড়ে যাওয়ায় কী পরিস্থিতি হবে বুঝতে কারোর কষ্ট হওয়ার কথা নয়! শুধু একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। তবে তার আগে গালে খানিকটা ডাল বাটা আর দুই চোখে দুই টুকরো শসা দিয়ে নিন। ভাবনাচিন্তা আর ত্বকের যত্ন একসঙ্গে হয়ে যাবে।
দেশে এতগুলো চ্যানেল হলে কী লাভ আর কী ক্ষতি—এ নিয়ে ইতিমধ্যে চাপা আলোচনা (চাপাবাজির চাপা নয়) শুরু হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন অনেকেই। কেউ বলছেন, গেঞ্জির আবার বুক পকেট, কাশির ওপর আবার হাঁপানি।
উল্টো যুক্তিও আছে। তাঁদের বক্তব্য, মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে চাকরির মতো ঘরে ঘরে টিভি সেন্টার দেওয়ার পক্ষে তারা। এত এত চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ তো আর মুখের কথায় হয়ে যায় না। সে জন্য ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেলও লাগে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নির্দলীয়ও আছেন কেউ কেউ। তাঁরা বুদ্ধিমান এবং বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নেওয়া সেমি কিংবা পুরো মাত্রার বুদ্ধিজীবী। টক আলোচনার মতো এখানেও তাঁরা কোনো পক্ষে যাচ্ছেন না। এমনভাবে কথা বলছেন যেন কেউ খালি হাতে না ফেরে। নতুন টিভির টক শোর আসন তো তাঁদেরই পূরণ করতে হবে।
লাভ-ক্ষতির হিসাবে আমরাও যেতে চাই না। তবে এতগুলো টিভি চ্যানেল হলে আমাদের সাধারণ নাগরিক জীবনে কী কী ছন্দপতন ঘটতে পারে, কিংবা কী কী ব্যতিক্রম যোগ হতে পারে, সে আলোচনা করাই যায়।
তখন একটা বিষয় ঘটতে পারে সবার আগে। যখন-তখন আপনার সামনে দাঁড়িয়ে যেতে পারে টিভি ক্যামেরা এবং এর প্রতিবেদক। তাদের সঙ্গে আপনার দুটো কথা বলতে হতে পারে। হোক সেটা সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে কিংবা আজ সকালের আবহাওয়া আপনার কেমন বোধ হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে। আর টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি কী বলছেন, সেটা কোনো বিষয় না হলেও আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে, সেটা কিন্তু বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। টেলিভিশন হচ্ছে দেখার মাধ্যম। সুতরাং ত্বকের যত্ন আপনাকে নিতেই হবে। দয়া করে এখন থেকেই ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করুন।
আর চোখের যত্নের প্রসঙ্গ আসছে এই কারণে, এত এত টেলিভিশন যে আসছে, তা দেখতে হবে না। আর যদি দেখেন, তাহলে চোখের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। সে কারণে এখন থেকে চোখের যত্নের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
পলাশ মাহবুব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৪, ২০০৯
Leave a Reply