আমিই হবো সেরা পেটুক
পেটুক প্রতিযোগিতা ২০০৯
জ্ঞানীজনেরা বলেন, বাঁচার জন্য খাও, খাওয়ার জন্য বেঁচো না। কিন্তু কিসের কী! বাঁচার জন্য খাওয়া যদি জরুরি হয়, তাহলে পুরস্কার জেতার জন্য খাওয়াও জরুরি। জি, পুরস্কার জেতার জন্যই ঈদের এক দিন পর পাবনায় বসেছিল এক বিচিত্র প্রতিযোগিতার আসর—পেটুক প্রতিযোগিতা। ঢাক-ঢোল বাদ্য বাজিয়ে এক এলাহি আয়োজন। বর্ণিল সাজে সেজেছিল পাবনা সদর উপজেলার শ্রীপুর খতিব আব্দুল জাহিদ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের মাঠ। চারদিকে হাজার হাজার দর্শক। তারা খেতে নয়, এসেছিল অন্যের খাওয়া দেখতে।
একটু পরই শুরু হবে পেটুক প্রতিযোগিতা। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শখানেক পেটুক এসেছেন মাংস খেয়ে নিজের পেটুকত্বের প্রমাণ দিতে। যিনি সবচেয়ে বেশি মাংস খেতে পারবেন, তিনিই হবেন সেরা পেটুক। শুরু হলো রেজিস্ট্রেশন। শুরুতেই নিয়মের ঝক্কি। কমপক্ষে দুই কেজি গরুর মাংস খেতে না পারলে ডিসকোয়ালিফাইড। প্রথম ধাক্কাতেই পিছু হটলেন অনেকে। রেজিস্ট্রেশন হলো ৩০ জন পেটুকের।
এবার ডাক্তারি পরীক্ষা। আয়োজকেরা পেটুকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে একজন ডাক্তার এনেছেন। সেই ডাক্তার সিরিয়াস ভঙ্গি করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পেটুকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় বাদ পড়লেন আরও ২০ জন। রইলেন বাকি ১০। তা-ই সই। এঁদের মধ্যে এবার শুরু হলো মাংস খাওয়ার প্রতিযোগিতা। উত্তেজনা তখন চরমে। সবার পেটে (মনে) একই বাসনা—আমি হব সেরা পেটুক।
এক বসায় সাড়ে তিন কেজি মাংস খেয়ে সেরা পেটুকের খ্যাতি অর্জন করলেন জেলার সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ গ্রামের পৈলান খানের ছেলে আব্দুল কাদের খান। ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের দাবি, তিনি আরও মাংস খেতে পারতেন। আয়োজকেরা তাঁকে খেতে দেননি।
আরও মাংস খেতে না দেওয়ার ক্ষোভ মনের মধ্যেই রেখে তিনি জানালেন, খাওয়াদাওয়া জিনিসটা তার বংশগত। তাঁর দাদা একটানা পাঁচ-সাত কেজি মাংস খেতে পারতেন। বাবাও দাদার সুনাম যথাযোগ্য মর্যাদায় ধরে রেখেছিলেন। শুধু তিনিই সুনাম ঠিকমতো ধরে রাখতে পারেননি, সবার চেয়ে কম খেতে পারেন।
স্ত্রী, দুই ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে তিনি যে সংসার পেতেছেন, সেখানে সবার চাহিদা মিটিয়ে নিজের আর খুব বেশি খাওয়া হয় না। তাই প্রতিযোগিতায় এসেছিলেন। খাওয়া তো ছিলই, সেই সঙ্গে পুরস্কার জিততে পারলে মন্দ কী! কিন্তু তিনিই যে একেবারে পুরস্কার জিতে যাবেন, এটা ভাবেননি। প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ায় পুরস্কার হিসেবে একটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন পাওয়ায় তিনি বেজায় খুশি।
আড়াই কেজি মাংস খেয়ে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সেরা পেটুক নির্বাচিত হয়েছেন জেলার মন্দিরপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার। সোয়া দুই কেজি মাংস খেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন আওরঙ্গবাদ গ্রামের আব্দুল করিম।
পেটুক প্রতিযোগিতার আয়োজক গিভেন্সি গ্রুপের চেয়ারম্যান খতিব জাহিদ মুকুল জানান, একসময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাঙালিদের মধ্যে খাদক প্রতিযোগিতা হতো। কে কত খেতে পারেন, তা নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে চলত জল্পনা-কল্পনা। গ্রামবাংলার এই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এ প্রতিযোগিতার আয়োজন।
আমাদের হারানো সব ঐতিহ্য ফিরে আসুক। কিন্তু যে দেশে টিন খাদক, গম খাদকের ছড়াছড়ি, সে দেশে আবার মাংস খেয়ে পেটুকত্বের প্রমাণ দিতে হলে তো একটু মুশকিলই বটে।
সরোয়ার উল্লাস
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৯, ২০০৯
Leave a Reply